মার্কিন অর্থনীতির মন্দাবস্থা নিয়ে শঙ্কিত ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা মুখে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে মন্দাবস্থার কোনো আশঙ্কা নেই। দেশের অর্থনীতি চমৎকার রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেশটির অর্থনীতিতে মন্দাবস্থার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে পড়ায় তাঁরা যে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন, সে কথাও গোপন থাকছে না।

অর্থনীতির তেজি ভাব ধরে রেখেছেন—এমন কথা বলে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পথ সহজ করতে চান ট্রাম্প ও উপদেষ্টারা। কোনো বিপদ যাতে না ঘটে, সে জন্য কী করা যায়, তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে হোয়াইট হাউস।

অধিকাংশ পর্যবেক্ষক এ বিষয়ে একমত, মার্কিন অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তার প্রধান কারণ চীনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ। ট্রাম্প আশ্বাস দিয়েছিলেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধে তিনি সহজেই জিতবেন। চীনের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে দিন কয়েক আগেও তিনি সে দেশ থেকে সব আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। ক্রিসমাসের আগে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমেরিকার সাধারণ ভোক্তারা বিপদে পড়বে—এমন সমালোচনা শোনার পর ট্রাম্প অবশ্য তাঁর হুমকির বাস্তবায়ন আপাতত মুলতবি রেখেছেন। এতে অবশ্য শেয়ারবাজারের অস্থিরতা পুরোপুরি কমেনি। ভোক্তাদের মনের অনাস্থাও লক্ষণীয়ভাবে কমেনি।

অনাস্থা কাটাতে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে ট্রাম্প প্রত্যেক আমেরিকানের বেতনের ওপর ধার্য কর হ্রাসের কথা বিবেচনা করছেন বলে জানা গেছে। মন্দাবস্থার ভয়ে যদি ভোক্তারা অর্থ ব্যয়ে অনিচ্ছুক হয়, তাহলে ক্রিসমাসের আগে অর্থনীতিতে তার প্রভাব দেখা দিতে পারে।

ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, বর্তমানের ৬ দশমিক ২ শতাংশ বেতন-কর কমিয়ে ৪ দশমিক ২ শতাংশ করার কথা ভাবা হচ্ছে।

যদি সত্যি সত্যি মন্দাবস্থার ধাক্কা এসে লাগে, তার দায়ভার যাতে নিজের ওপর না পড়ে, সে জন্য ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের প্রধান জেরোমি পাওয়েলকে দায়ী করে রেখেছেন। সোমবার এক টুইটে তিনি আরেক দফা সুদের হার কমানোর দাবি জানিয়ে বলেছেন, রিজার্ভ ব্যাংক প্রধানের কোনো দূরদৃষ্টি নেই।

অধিকাংশ মার্কিন অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ২০২১ সাল নাগাদ মার্কিন অর্থনীতি মন্দাবস্থার কবলে পড়বে। ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর বিজনেস ইকোনমিকসের জরিপ অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চারজন অর্থনীতিবিদের তিনজনই এই ধারণার সঙ্গে একমত।

উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, চীনের সঙ্গে চুক্তি না হলে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই মন্দাবস্থা প্রকট হয়ে উঠবে।

ট্রাম্পের জন্য সেটাই এখন মাথাব্যথার প্রধান কারণ। অন্য কারণ, ট্রাম্পের জনসমর্থনে নিম্নগতি। ট্রাম্পের প্রবল সমর্থক হিসেবে পরিচিত ফক্স নিউজ তাদের সবশেষ জাতীয় জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে ট্রাম্প প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর প্রথম চারজনের কাছে সহজেই পরাজিত হবেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে ট্রাম্প হারবেন ১২ পয়েন্টে।

জরিপটি ট্রাম্পকে একদিকে ক্ষিপ্ত করেছে। অন্যদিকে তাঁর শিরপীড়ারও কারণ হয়েছে। তিনি সবচেয়ে ক্ষিপ্ত হয়েছেন ফক্স নিউজের ওপর। তাঁর প্রশ্ন, কী করে এমন জরিপ তারা প্রকাশ করতে পারল। সাংবাদিকদের কাছে নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করে দুই দিন আগে মন্তব্য করেন, ফক্স নিউজের ব্যাপারে তিনি মোটেই খুশি নন। তিনি নিশ্চিত, ফক্স নিউজের কিছু একটা হয়েছে।

অতীতে বেতন-কর হ্রাসের প্রশ্নে ডেমোক্র্যাটরা আগ্রহ দেখালেও ট্রাম্পের ‘উপকার’ হয়, এমন কোনো পদক্ষেপে এবার তারা আগ্রহী নাও হতে পারে।

ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যান বিল পারসেল দলের সদস্যদের এই মনোভাব প্রকাশ করে বলেছেন, ট্রাম্প ও তাঁর সঙ্গীরা অর্থনীতির হাল দেখে যে আতঙ্কিত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কী করা উচিত, এ নিয়ে তাঁদের কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই। এই মুহূর্তে তাঁরা যখন যেমন ইচ্ছা কথা বলছেন।