'ফ্লিপ-ফ্লপার ইন চিফ'

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পত্রিকা পলিটিকো জানিয়েছে, গত দুই দিনে কর হ্রাস থেকে শুরু করে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক নিজের কথা নিজেই পরিবর্তন করেছেন। এই পরিবর্তন এখন এত ঘনঘন ঘটছে যে অনেকেই বলছেন, প্রেসিডেন্টের কথার কোনো মূল্যই নেই। তিনি ক্ষণে ক্ষণে মত পাল্টান। এ অবস্থায় তাঁর কোন কথা বিশ্বাস করবে, আর কোন কথায় পাত্তা দেবে না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে বিশ্ব।

পলিটিকো জানিয়েছে, ক্ষমতা গ্রহণের আগে ট্রাম্প তাঁর সহকর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রতিটি দিন যেন টিভির রিয়্যালিটি শোর একেকটি অ্যাপিসোড বা অনুষ্ঠান হিসেবে তাঁরা বিবেচনা করেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, দিনে একটি শো নয়, ২৪ ঘণ্টাই রিয়্যালিটি শো চলছে।

পত্রিকাটি ব্যঙ্গ করে বলেছে, চটি জুতাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লিপ ফ্লপ বলা হয়। আর চটি জুতা ফটাফট করার মতো যারা এখন এক কথার পর মুহূর্তেই অন্য কথা বলে, তাদের বলা হয় ফ্লিপ ফ্লপার। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে হারে তাঁর কথা পাল্টে ফেলছেন, তাতে তাঁর নাম হতে পারে ‘ফ্লিপ-ফ্লপার ইন চিফ’।

তিন দিন আগে জানা গেল, মন্দাবস্থা এড়াতে ট্রাম্প বেতনের ওপর ধার্য আয়কর (পে-রোল ট্যাক্স) হ্রাসের কথা ভাবছেন। এক দিন পর হোয়াইট হাউস থেকে বলা হলো, ট্রাম্প আয়কর হ্রাসের কথা ভাবছেন সে কথা ঠিক, তবে বেতন-কর হ্রাসের কথা তাঁর হিসাবে নেই। সে কথা চাউর হতে না হতেই ট্রাম্প নিজে জানালেন, অন্যান্য ব্যবস্থার মধ্যে বেতন-কর হ্রাসের কথাও তিনি বিবেচনা করছেন। আর গতকাল বুধবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সেই কথা বাতিল করে ট্রাম্প জানালেন, অর্থনীতি খুব শক্ত অবস্থায় রয়েছে। এখন বেতন-কর হ্রাসের কোনো প্রয়োজন নেই।

কর প্রশ্নে ট্রাম্পের এই মত পরিবর্তনকে দৈনিক নাটক নামে অভিহিত করে একজন ভাষ্যকর বলেছেন, ‘আমাদের উচিত হবে ট্রাম্প কী বলেন, তা না শুনে তিনি কী করেন, তা অনুসরণ করা।’

আগ্নেয়াস্ত্র প্রশ্নেও ট্রাম্পের অবস্থান একাধিকবার পরিবর্তিত হয়েছে। টেক্সাস ও ওহাইওতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ঘটনার পর ট্রাম্প নিজ থেকেই বলেছিলেন, তিনি বন্দুক কেনার যোগ্যতা নির্ধারণের জন্য ‘ব্যাকগ্রাউন্ড চেক’ সমর্থন করেন। এই প্রশ্নে তিনি গান লবির দাবি অগ্রাহ্য করবেন—এমন কথাও বলেছিলেন। চলতি সপ্তাহের শুরুতেও তিনি ব্যাকগ্রাউন্ড চেকের পক্ষে ছিলেন।

গত মঙ্গলবার আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে ট্রাম্পের কথা হয় আমেরিকার প্রধান গান লবিং গ্রুপ ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধানের সঙ্গে। সেদিন বিকেলেই তাঁর সুর বদলে গেল। তিনি জানালেন, ব্যাকগ্রাউন্ড চেক নিয়ে হুটহাট কিছু করা ঠিক হবে না। তার চেয়ে মানসিক রোগের ব্যাপারে অধিক মনোযোগ দেওয়া ঠিক হবে। তাঁর এই ঘনঘন মত পরিবর্তন নিয়ে গতকাল সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে ট্রাম্প জানান, ব্যাকগ্রাউন্ড চেকের ব্যাপারে তাঁর যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। তবে ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে অনেক ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। এসব নীতিমালায় যেসব ফাঁকফোকর রয়েছে, তিনি সেসব পূরণে অধিক আগ্রহী।

গ্রিনল্যান্ড ক্রয়ের ব্যাপারেও ট্রাম্পের শেষ কথার শেষ নেই। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রথম খবরটি ফাঁস করলে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বিষয়টি বাতিল করে দেওয়া হয়। এক দিন পরে সে কথা বদলে ট্রাম্প নিজে এক টুইটে জানালেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি ভাবছেন। তবে এটি তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যাপার নয়। গত সোমবার গ্রিনল্যান্ড বিক্রির প্রশ্নটি ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘এ এক অবাস্তব প্রস্তাব।’

দুই সপ্তাহের মধ্যে ট্রাম্পের ডেনমার্ক সফরে যাওয়ার কথা চূড়ান্ত হয়ে ছিল। ড্যানিশ প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য শুনে ট্রাম্প এক টুইটে ঘোষণা করলেন, এমন বক্তব্যের পর তিনি আর সে দেশ সফরে যাচ্ছেন না। তাঁর এই সিদ্ধান্তে চোখ কপালে তুলেছেন অনেকেই। ডেনমার্ক যুক্তরাষ্ট্রের এক ঘনিষ্ঠ মিত্র। আফগানিস্তানে আমেরিকার পক্ষে যুদ্ধে তাদের অনেক সৈন্য প্রাণ হারিয়েছে। এমন তুচ্ছ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় নীতি পরিবর্তনের এই ঘটনা এতটাই অভাবিত যে ডেনমার্কে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত রুফাস গ্রিফোর্ড মন্তব্য করেছেন, ‘এই লোকটা (ট্রাম্প) একটা শিশু।’

গতকাল গ্রিনল্যান্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ট্রাম্প নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, ‘ডেনমার্কের (নারী) প্রধানমন্ত্রী খুবই ন্যাস্টি।’ সোজা বাংলায় যার অর্থ—খবিশ। ট্রাম্পের এহেন কীর্তিকলাপে পলিটিকো মন্তব্য করেছে, এখন সময় এসেছে ট্রাম্পের কথায় কান না দেওয়ার।