ফ্লাস্ক

-সারা-
আমার দুই চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরে পড়ছে। মুছছি; কিন্তু, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই চোখের কিনারায় আবার জমে উঠছে। কিছুক্ষণ টলটল করে ফোটায় ফোটায় উপচে পড়ছে। প্রাণপণ চেষ্টা করেও থামাতে পারছি না। বিছানার সঙ্গে প্রায় মিশে শুয়ে আছেন নানু। তাঁর জন্য এই মুহূর্তে ঠিক কী করা উচিত ভেবে কূল পাচ্ছি না। বালিশের ধার ঘেঁষে বসে একবার মাথায় হাত বুলাই, একবার তাঁর চুলে বিলি কেটে দিই; মাঝে মাঝে ভেজা টিস্যু দিয়ে ঠোঁটও মুছে দিই। এসবে কী তাঁর আরাম হচ্ছে? নাকি আরও কষ্ট হচ্ছে? কে জানে? এসব বাদ দিয়ে বরাবর যেটা করি, মনে হচ্ছে তাই করি, নানুকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে শুয়ে থাকি। কিন্তু, তাঁর ওই শরীরটা এত ভঙ্গুর দেখাচ্ছে, যে সেটা করতেও সাহস হচ্ছে না। মা, দুই মামি, ছোট খালা, পাড়া প্রতিবেশী, দূর দূরান্ত থেকে আসা আত্মীয়স্বজন, একগাদা মহিলা, ঘরের এদিকে ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসা। চোখ তুলে ওদের দিকে তাকালেই দেখি সবাই আমার মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে। দৃষ্টি গুলোয় শুধু আশার আকাঙ্ক্ষা। যেন, আমি তাকিয়েছি ভালো একটি খবর দেওয়ার জন্য। মামারা, খালু আর গুচ্ছের অচেনা মানুষজন উঠোন জুড়ে জটলা পাকিয়েছেন, কথা বলছেন, বসছেন, উঠছেন, পায়চারি করছেন। এসবের মাঝে কেউ কেউ বারান্দা দিয়ে উঠে এসে দরজার পর্দা সরিয়ে নিঃশব্দে ঘরে উঁকি দিয়ে যাচ্ছেন। বারান্দার একপ্রান্তে, জায়নামাজের সামনে কাঠের রেহালে খোলা কোরআন শরিফ। ধাঁরে পুরোনো জর্দার কৌটায় চাল ভরে তাতে কয়েকটি জ্বলন্ত আগরবাতি গেঁথে রাখা। জায়নামাজের ওপর কুঁজো হয়ে বসে ঝুলে ঝুলে তিলাওয়াত করছে জাকির। জাকিরের মা আমার মায়ের দূর সম্পর্কের খালাতো বোন ছিলেন। বাবা মা একসঙ্গে মারা যাওয়ার পর তাঁকে এ বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন নানু। গ্রামের মাদ্রাসায় পড়ে আর টুকটাক বাড়ির কাজে সাহায্য করে। ছেলেটাকে দেখলে আমার অন্যসময় খুব মায়া হয়; কিন্তু, আজকে বাড়িতে ঢোকার মুখে ওর কাণ্ড দেখে গা তেলে-বেগুনে জ্বলে যাচ্ছে। আগরবাতি, কোরআন তিলাওয়াত এসব কী? কিসের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সবাই?
-শাহেরা-
রাত কয়টা বাজে কে জানে? শ্বাস নিতে বড় কষ্ট। দম ছাড়ার সময় মনে হয় বুকের ভেতরটায় আগুন ধপ কইরা জ্বইলা উঠে। একবার দুইবার চোখের পাতা মেলার চেষ্টা করছিলাম। পুরোপুরি খুলতে পারলাম না। পাথরের মতন ভারী মনে অইলো। দুই চোখ ভইরা মাইয়াটারে দেখবার ইচ্ছা করতাছে। ক্যান জানি মনে হয়, এই দেখাই অইব শেষ দেখা। বেচারি! ঢাকা থাইকা সকালের ট্রেন ধইরা আইসা, সেই যে দুপুরে মাথার কাছে বইছিল, মনে অয় না আর একবারও উঠছে বইলা। খাওয়া দাওয়া অইছে?
কী বার আইজকা? মঙ্গলবার পর্যন্ত মনে আছে, এরপর থিকা আর বারের হিসাব রাখতে পারি নাই। শাহেরার মা’রে জিগাইলাম হেয় আয় না ক্যান? কইল, মাইয়াটার পরীক্ষা চলতাছে। শেষ অইলেই আইয়া পড়ব। পশ্চিম দিকে থাইক্কা ট্রেইনের আওয়াজ আইতাছে। আখাউড়া স্টেশন থাইকা সুরমা মেইল বাইর অইল মনে লয়? এই শব্দের ঘড়ি ধইরাই তাহাজ্জদের নামাজ পড়ছি এত দিন। এখনো শেষ বারের মতন পড়তে মন চায়। পড়ুম, কিন্তু তাঁর আগে শাহেরার সঙ্গে দরকারি কথাটা সাইরা নেই। একটু তাক্কত দাও, শরীরে একটু তাক্কত দাও আল্লাহ! আইচ্ছা, ট্রাঙ্কের চাবিটা বালিশের তলে আছে তো?
-সারা-
আমার নাম মা রেখেছিলেন নানির নামে। শাহেরা। দু’টি কারণে তা বদলে গেছে। এক, আমাকে কেউ ওই নামে ডাকলে নানাভাই খুব বিরক্ত হতেন। বাড়ির একজন মুরব্বির নাম যে ইচ্ছে যখন-তখন যত্রতত্র ডেকে বেড়াচ্ছে, এটা তাঁর সহ্যের বাইরে ছিল। দুই, আমার বাবা; এই নামকরণ তাঁরও পছন্দ হয়নি। ভিন্ন কারণে যদিও। মেয়ের এই নামটি তাঁর কাছে গেঁয়ো গেঁয়ো লাগত। এই সমস্যাটির সমাধান নাকি আমিই করে দিয়েছিলাম। এইভাবে; আমার বয়েস যখন দুই, মুখে কথা ফুটছে হড়বড় করে, কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে পরিষ্কার করে শা...হে... রা... উচ্চারণ করতে পারতাম না। বলতাম, সা...য়ে...রা। বাবা শুনে বললেন, বাহ! তিনি সেটাকে আরেকটু চেপে চুপে বানিয়ে দিলেন সারা। নামটি সবারই মনে ধরল, একজন বাদে, আমার নানু। তিনি আমাকে শাহেরাই ডাকতে থাকলেন। আমি? কী এক বিদঘুটে কারণে সেই ছোটবেলায় আমি তাঁকে নানু না বলে তাঁর নাম ধরে ডাকতাম। সা...য়ে...রা। বড় হয়ে যাওয়ার পরও সেটা পাল্টাল না। তিনি আমাকে ডাকেন শাহেরা, আমি তাঁকে সারা। নানাভাইয়ের ভয়ে অবশ্য সেটা সবার সামনে নয়, আড়ালে; যখন শুধু আমি আর নানু।
একরকম জোর করেই বাকি সবাইকে বিছানায় পাঠিয়েছি এই ঘণ্টাখানেক আগে। সারা রাত নানুর সঙ্গে শুধু আমিই থাকব। ছোট মামি অনেক জোরাজুরি করেছিল সেও থাকবে বলে। আমি রাজি হইনি। বুঝতে পারছিলাম নানুর সঙ্গে এটাই হয়তো শেষ রাত।
ঘরে এখন আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই। ‘শাহেরা?’
নামটি কানে আসতেই হালকা তন্দ্রার মতন যেটা এসেছিল নিমেষে ছুটে গেল। ‘সারা!’
তাকিয়ে দেখলাম চোখ মেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন নানু। মুখে ক্ষীণ একটু হাসি।
‘সারা;’ আমি ডুকরে কেঁদে উঠি। ‘শাহেরা, কান্দিস নারে পাগলি। জরুরি কথা আছে, শোন,’ অস্ফুট স্বরে তাঁকে বলতে শুনে আমার মাথাটা ঝুঁকিয়ে তাঁর মুখের কাছে এগিয়ে নিলাম।
-শাহেরা-
আমার নাতনি শাহেরা আমারে সারা ডাকে। অনেক দিন আগে আরও একজন আমারে অই নামে ডাকত। নামটা সেই সময় থিকা আমার খুব পছন্দের। ক্যান পছন্দের সেইটা অবশ্য কাউরে কইতে পারি না। এমনকি আমার জানের টুকরা এই নাতনিরেও না। সেই কতকাল আগের কথা। বাপজানের বাড়ি আছিল নারায়ণপুর। গ্রামটা আখাউড়া শহরের একদম পাশে। হাত বাড়াইলেই য্যান ছোঁয়া যায়। যুদ্ধের বছরে; মেলাঘর থাইকা ট্রেনিং সাইরা ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ ফিরা আইতাছে দেশে। একটা দল আইসা একবার আঁটকাইয়া গেল আমাগো গ্রামের কিনারায়। বর্ডার থিকা পিছাইয়া আইসা আখাউড়ার পশ্চিম কিনারায় ক্যাম্প বসাইছে পাকিস্তান আর্মি। শক্ত পাহারা। আমাগো যোদ্ধারা কোনো ভাবেই ফাঁক ফোকর দিয়া দেশের ভেতরে ঢুকতে পারতাছে না। আমার বয়েস তখন পনেরো বছর। বাপজান কইত বয়েসটা নাকি ভালো না, তাঁর ওপর দিনকালও খারাপ। সন্ধ্যার আন্ধাইরে তো দূরের কথা, ফকফকা দিনের বেলাও কত হিসাব কইরা উঠানে বাইর হই। ধরতে গেলে চব্বিশটা ঘণ্টাই ঘরের ভেতরে বন্দী। একদিন অইলো কী; সন্ধ্যা পার হইছে অনেক আগে, রাত তেমন গভীর অয় নাই। আমাগো থাকার ঘরটার পেছন দিকটা জলা জঙ্গলে ভরা। জানালার কাঠের কপাট; সারা দিন, সারা রাত বন্ধই থাকে। হঠাৎ শুনি তাঁর ওপরে টোকা। এইদিক দিয়া তো কারও আহনের কথা না। ঘুম তো নাই, চোখ বন্ধ কইরা শুইয়া আছিলাম। ‘কে?’ আওয়াজ শুইনা চিৎকার দিতে গিয়া থাইমা গেলাম। ঠিক শুনলাম তো? আবার টোকা। গলা একদম নামাইয়া আমি বলি, ‘কে?’ ওইপাশ থিকা উত্তর আসে, ‘একটু খুলবেন?’ আমার তো ভয়ে হাত পা একদম ঠান্ডা! চুপ কইরা থাকি, উত্তর দিই না। আবার শোনা যায়, “একটু খুলেন, আমি মুক্তির মানুষ, ভয়ের কিছু নাই।‘ ‘মুক্তি? তাইলে তো সত্যই ভয়ের কিছু নাই। আমি জানালার কপাট থিকা শিকল নামাই। ওইটা একটু ফাঁক করতে দেখি, ওইপাশে ঘন আন্ধাইরে একজন দাঁড়াইয়া। ‘কী চান?’ আমি গলা নামাইয়াই জিগাই। ঘরের ভেতরে শুইয়া থাকা মায়ের ঘুম আওয়াজে ভাইঙা গেলে বিরাট ঝামেলা হইয়া যাইব। মানুষটার হাতে ধরা বোতলের মতন একটা জিনিস। ছোট একটি ফ্লাস্ক। সেইটা সে আগাইয়া দেয়, ‘ক্যাম্পে আমাদের সবার খুব চা খেতে ইচ্ছে করছে। একটু বানিয়ে দেবেন?’
পাগল নাকি? তা পাগলই হইব। নইলে কী সব ছাইড়া ছুইড়া দেশের জন্য যুদ্ধে নামছে? আমি একটু চিন্তা করি, তারপর বলি, ‘আপনে ভেতরের উঠানে আসেন, আধা ঘণ্টা পরে, আমি বানাইয়া আনতাছি।‘ সেই শুরু। তারপর রোজ দিন একই সময়ে আইসা জানালায় হাজির। আন্ধাইরে মিশা মিশা আসে ভূতের মতন, হাতে সেই ফ্লাস্ক। একদিন বলে, তাঁর নাম জহির, জহিরুদ্দিন তারপর জিগায় আমার নাম কী?’ আমি বলি, ‘শাহেরা।‘ সে বলে, অই নাম তাঁর পছন্দ হয় নাই। আমি তত দিনে তাঁর লগে ঠোঁট উল্টানো শিখা গেছি। আন্ধাইরে ঠোঁট উল্টাইয়া আমিও বলি, ‘আপনার পছন্দ না হইলে নাই, আমার কী?’ সেইটা শুইনা তাঁর কী হাসি। হাসি শুইনা আমার গা ছমছম করে। সে হাসতে হাসতে আমারে কয়, ‘না তোমার নাম শাহেরা না, তোমার নাম সারা।’ বইলা, আবার ফিসফিসাইয়া অদ্ভুত একটা গান গাইয়া উঠে, ‘কে সারা সারা!’ ‘এইটা কোনো ভাষা, এর মানে কী?’ আমিও ফিসফিসাইয়াই জিগাই। আমারে কয়, ‘এইটা তোমার জন্য গান, তোমার নামের গান, সারা। আমি বলি, ‘আমার নাম শাহেরা,’ সে বলে, ‘না তোমার নাম সারা! কে সারা সারা।‘ আমি বলি, ‘আপনি যে এমন করে আসেন, কোনো দিন আর্মির হাতে না ধরা পইড়া যান।‘ সে আবার গায়, ‘কে সারা সারা!’ আমিও আবার কই, ‘এর মানে কী?’ সে কয়,এর মানে, ‘যা হইবার হইব, হইব!’ আমি কিছুই বুঝি না। যাইবার সময় সেই দিন মাঠ থিকা কুড়াইয়া আনা একটা ফ্যাকাশে সাদা ফুল আমার হাতে ধরায়া দেয়।
তারপর কোনো একদিন, আমার হাতে ফ্লাস্ক ধরায়া দিয়া সে সইরা দাড়াইছে ঘরের ছায়ায়ে। আচমকা শুরু হইয়া গেল তুমুল গোলাগুলি। তখন আমার চা বানানোও শেষ। ঝটপট চুলার আগুন চাপাইয়া দিয়া ফ্লাস্ক হাতে বাইর হই । উঠান সুনসান, কুথথাও কেউ নাই। এইদিক ওইদিক তাকাই, তারে খুঁজি। দূরের আকাশে লাল আভা, বাতাসে ভাইসা আসে হালকা বারুদের গন্ধ। ছুটতে ছুটতে পাগলের মতন ভেতর থিকা বাইর হইয়া আসে মা। হাত ধইরা হেচকা টানে আমারে নিয়া ঢুকে গোলাঘরে। আমার হাতে থাকে সেই চা ভর্তি ফ্লাস্ক। যুদ্ধের কালে কালে দিন পার হয়। দেশ স্বাধীন হয়। আমি দিনের পর দিন অপেক্ষাতেই থাকি। কিন্তু হেয় আর আইল না। আমার খালি মনে হইত, আইব, পেছনের জানালা দিয়া অন্ধকারে নাা, দিনের আলোতে সামনের দরজা দিয়া বুক ফুলায়া। তাঁর ফ্লাস্ক তারে তখন ফিরায়া দিমু। আশায় আশায় আইজ কত বছর এই তালা বন্ধ ট্রাঙ্কের একদম নিচে লুকায়া রাখছি অই ফ্লাস্ক।
‘শাহেরা বইন! তুই পারবি ওনারে খুঁইজা বার কইরা অইটা ফিরায়া দিতে?’
- সারা-
নানু চলে গেছেন আজ একুশ দিন। গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে এসে অব্ধি এক মুহূর্ত সময় পাইনি। গুগল, উইকিপিডিয়া, ফেসবুক, টুইটার হাতড়াতে হাতড়াতে আর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মন্ত্রণালয়, জাদুঘরে চরকির মতন ঘুরতে ঘুরতে, মেলাঘরে ট্রেনিং নেওয়া তিনজন জহিরের খবর বের করতে পেরেছি। দু’জনের সঙ্গে কথা বলা হয়ে গেছে। যাকে খুঁজছি, তাঁরা দুজনই তিনি নন। এখন যার কাছে এসেছি, রিসার্চ করে বের করা তিনজনের মধ্যে ইনিই শেষ জহির। চার দিন ধরে তাঁর সঙ্গে দেখা করব বলে আসছি, এখনো দেখা পাইনি। ষোলো কোটি মানুষ, এর মাঝ থেকে একটি মানুষকে খুঁজে বের করা? সারা; নানু আমার, কী একটি অসম্ভব কাজ ধরিয়ে দিয়ে গেলে আমাকে?
-জহির-
একটানা কথা বলে হাঁপিয়ে গিয়েছিল। তবু সামনের পানির গ্লাসে চুমুক না দিয়ে অধীর আগ্রহে তাকাল আমার দিকে, ‘আপনি কী তিনি?’
‘না! আমি যুদ্ধ করেছি সিলেট অঞ্চলে। যুদ্ধের সময় কেন, আমার সারা জীবনেও কখনো নারায়ণপুর নামে কোনো
গ্রামে যাওয়া হয়নি।‘ কথাগুলো বলতে গিয়ে থমকে গেলাম। আবছা আঁধারে টিনের চালের নিচে দাঁড়ানো বাঁশের খুঁটিতে
ভর দেওয়া কোনো এক সাহসী কিশোরীর চেহারা আর
আমার সামনে বসা মেয়েটির মুখ হঠাৎ কেমন একাকার হয়ে গেল। ‘কে সারা সারা! যা হওয়ার হবে, হবে;’ ডরিস ডে’র গানটি আমারও প্রিয়।
অনেকক্ষণ হয় সে চলে গেছে। অফিসে এখন আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আমার সামনে টেবিলের ওপর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে পুরোনো একটি ফ্লাস্ক। তাঁর প্লাস্টিকের ঢাকনিটি লাল রঙের। বাইরের খোলসটি হয়তো একসময় মোড়ানো ছিল লাল, নীল ফুল আর লতা পাতার নকশায়। সময়ের ছাপে এখন তা ঝাপসা হয়ে এসেছে। নকশাদার সেলফোনের মোড়কটিও ভাজা ভাজা হয়ে খুলে আসছে জায়গায় জায়গায়। একদম তলার দিকে একটু মরচে দেখা দিয়েছে। কিন্তু, একটু আগে আমার হাতে তুলে দেওয়ার সময় মেয়েটির বিষণ্ন মুখটি যে ভাবে ঝলমল করে উঠেছিল, তাঁর রেশে ফ্লাস্কটি যে এখনো ঝকমক করছে।