ম আ মুক্তাদির স্মরণসভায় বক্তারা: স্বপ্নচারী বিপ্লবীদের মৃত্যু নেই

ম আ মুক্তাদির স্মরণসভায় আয়োজক ও অতিথিরা
ম আ মুক্তাদির স্মরণসভায় আয়োজক ও অতিথিরা

মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, প্রগতিশীল নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সংগঠক অকালপ্রয়াত ম আ মুক্তাদির স্মরণসভা ১২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে। জ্যাকসন হাইটসে আয়োজিত এ স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে প্রজন্ম বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে, তাদের অনেকেই আজ জীবনসায়াহ্নে। অনেকেই চলে গেছেন দেশ ও সমাজ নিয়ে তাঁদের স্বপ্নযাত্রার মাঝপথে। কিন্তু এ তো সত্য যে স্বপ্নচারী বিপ্লবীদের কোনো মৃত্যু নেই। ম আ মুক্তাদির ছিলেন তেমনই একজন।

কিশোর মুক্তিযোদ্ধা ম আ মুক্তাদির সিলেটের সুরমাপাড় থেকে মুক্তিযুদ্ধের ডাকে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। প্রগতিশীল তরুণ সংগঠক ছাড়াও ক্রীড়া, সাংবাদিকতাসহ নানা ক্ষেত্রে তিনি অবদান রেখেছেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এ সংগঠককে দীর্ঘদিন কারাভোগ করতে হয়েছিল। একপর্যায়ে যুক্তরাজ্যে গিয়ে মামলা ও পারিবারিক কারণে আটকা পড়েন। সেখানেও নাগরিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন তিনি। মাঠপর্যায়ের কর্মী হিসেবে, সংগঠক হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির ‘বাংলা টাউন’ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। অনেকটা অকালেই মাত্র ৪৪ বছর বয়সে ম আ মুক্তাদির ১৯৯৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন। তাঁরই সতীর্থ অনুরাগীসহ সিলেট অঞ্চলের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এ স্মরণসভার আয়োজন করেন।

স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আবাসিক সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরীর পরিচালনায় আলোচনার সূত্রপাত করেন সাংবাদিক রহমান মাহবুব ও হেলিম আহমেদ। আলোচনায় অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মুকিত চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা শেখ আখতারুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, কবি ফকির ইলিয়াস, কবি ফারহানা ইলিয়াস, ইশতিয়াক রুপু, রব্বানী চৌধুরী, মনজুরুল হক, ভায়লা সেলিনা, রোকেয়া দীপা, আবদুস শহীদ, শেলী জামান খান, সানজীদা উর্মী, রওশন হক, শেখ আখতারুল ইসলাম, আবদুল মুকিত চৌধুরী, মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, জয়দেব দে, ফরহাদ চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, বিমান দাশ, শিবতোষ চক্রবর্তী, আবদুল মালিক, মামুন আহমেদ, মামুন রশীদ চৌধুরী, আ ফ ম মেসবাউজ্জামান প্রমুখ।

আলোচনায় প্রয়াত ম আ মুক্তাদিরের সহপাঠী যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবদুল মুকিত চৌধুরী বলেন, ‘ম আ মুক্তাদিরের মতো বন্ধু আমার ছিল—এ কথাটি আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বড় লোকেদের স্মরণসভা অনেকেই করে। আজকের ব্যতিক্রমী স্মরণসভা দেশ ও সমাজের জন্য লড়ে যাওয়া নিঃস্বার্থ এক মানুষের জন্য একদল অগ্রসর মানুষের ভালোবাসার প্রমাণ।’

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেখ আখতারুল ইসলাম সতীর্থদের উদ্যোগে একজন স্বপ্নচারী মানুষের স্মরণে এমন অনুষ্ঠান আয়োজন করায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।

ম আ মুক্তাদিরের আত্মীয় কবি ফকির ইলিয়াস সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাপাঠের মধ্য দিয়ে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। দেশ ও যুক্তরাজ্যে ম আ মুক্তাদিরের জীবন ও কর্মকাণ্ডের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করে ফকির ইলিয়াস বলেন, ম আ মুক্তাদির এমনই এক কর্মবীর ছিলেন, যিনি সমাজকে নানাভাবে আন্দোলিত করে গেছেন। একজন স্বপ্নচারী বিপ্লবীর মৃত্যু হতে পারে না। নানাভাবে এই লড়াকুরা সমাজ পরিবর্তনের প্রেরণা দিয়ে যান সব সময়। সমাজ প্রগতির জন্য নানা প্রশ্ন রেখে যান তাঁরা।

মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে নানা কৌশলে। ইতিহাসের বিভিন্ন দিক আজ বেরিয়ে আসছে। ম আ মুক্তাদিরদের আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হচ্ছে। আদর্শবাদের রাজনীতির দীক্ষা নিয়েছিল যে প্রজন্ম, তাদের আলোর বিভায় সমাজ এগিয়ে যাবে।

সাবেক ছাত্রনেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নেতা মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ম আ মুক্তাদিরের সাংগঠনিক দক্ষতায় সারা বাংলাদেশের তারুণ্য একসময় উজ্জীবিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ম আ মুক্তাদিরের জন্য প্রার্থনা করা হয়; তাঁর সম্মানে পালন করা হয় নীরবতা। দোয়া পরিচালনা করেন অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের ইমাম কাজী কাইয়্যুম। অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ম আ মুক্তাদিরের অনুসারীরা যোগ দেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। লন্ডন থেকে বক্তব্য দেন আ ক ম চুন্নু।
সভাপতির বক্তব্যে মাহবুবুর রহমান প্রয়াত ম আ মুক্তাদিরকে নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত স্মৃতির উল্লেখ করে বলেন, যাঁরা নীরবে কাজ করে যান, তাঁদের স্মরণের মধ্য দিয়ে আয়োজকেরা একটি উল্লেখযোগ্য কাজ করছেন। পরে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সভার সমাপ্তি টানেন তিনি।