ট্রাম্পের অভিশংসনে ডেমোক্র্যাটে দ্বিধা

ডোনাল্ড ট্রাম্প। রয়টার্স ফাইল ছবি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প। রয়টার্স ফাইল ছবি।

আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গত দুই বছর ধরে বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসন করার কথা বলছেন। তাঁদের আশা,বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের তদন্তের ফলে এই পথ সুগম হবে। তবে সেটি বাস্তবায়িত না হওয়ায় ডেমোক্রেটিক নেতৃত্ব নিয়ে দ্বিধা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের সঙ্গে রাশিয়ার সম্ভাব্য আঁতাতের বিষয়ের তদন্ত প্রতিবেদন বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের মনঃপূত হয়নি। তবুও দলের বামপন্থী সমর্থকদের চাপে অভিশংসন প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে, আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ প্রশ্নে দলের নেতৃত্ব নিয়ে তৈরি হওয়া বিভেদ ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারে।

ওয়েব পত্রিকা ‘পলিটিকো’ সর্বশেষ যে হিসাব দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেসের ডেমোক্রেটিক সদস্যদের মধ্যে ১৪৬ জন অভিশংসনের পক্ষে ও ৮৯ জন বিপক্ষে। অন্যদিকে, প্রাক্তন একজন রিপাবলিকান সদস্য, যিনি বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থী, সমর্থন করলেও কংগ্রেসের কোনো রিপাবলিকান সদস্য অভিশংসনের পক্ষে নয়। একই অবস্থা রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত সিনেটেও। প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসনের প্রস্তাব গৃহীত হলেও সিনেটে তা নিয়ে আলোচনা হবে, তার সম্ভাবনা কার্যত শূন্য। এ অবস্থায় অভিশংসনের প্রশ্নটি কিছুটা তাত্ত্বিক, এর কোনো প্রায়োগিক গুরুত্ব নেই।

এসব সত্ত্বেও কংগ্রেসের বিচার বিভাগীয় ও গোয়েন্দা বিষয়ক কমিটিসহ একাধিক কমিটি ট্রাম্পের কার্যকলাপ নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। এ তদন্ত অভিশংসন প্রক্রিয়ার অংশ কি না, এ প্রশ্নে দলের নেতৃত্ব পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে জটিলতা বাড়িয়ে দিয়েছেন।

বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রধান জেরি ন্যাডলার বলেছেন, তাঁরা ‘অভিশংসন অনুসন্ধানে’ লিপ্ত রয়েছেন। কিন্তু গোয়েন্দা বিষয়ক কমিটির অন্যতম সদস্য জিন হাইনস বলেছেন, ‘না, না, এটা মোটেই অভিশংসন অনুসন্ধান নয়।’

একই কমিটির সদস্য গ্রেগরি মিকস বলেছেন, ‘অভিশংসন হবে কি হবে না, আমরা এখন তা খতিয়ে দেখছি।’ আরেকজন বলেছেন, ‘তদন্ত নয়, আসলে আমরা অভিশংসন প্রশ্নে অনুসন্ধান চালাচ্ছি। এর মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হব, অভিশংসন প্রশ্নে আমরা কোন পথে অগ্রসর হব।’

এই ধূম্রজাল আরও ঘোলাটে করেছেন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি নিজে। তিনি জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে অভিশংসনের পক্ষে যথেষ্ট সমর্থন নেই। সিনেটও রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে। এই অবস্থায় আনুষ্ঠানিকভাবে অভিশংসন প্রস্তাব ওঠানো ট্রাম্পের হাতে বল তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু দলের কট্টর ট্রাম্প-বিরোধীদের হাতে রাখতে তিনিও মাঝেমধ্যে কঠোর ভাষায় ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। ‘আমি ট্রাম্পকে জেলে দেখতে চাই,’ এমন কথাও পেলোসি বলেছেন। কিন্তু কখনো অভিশংসন শব্দটি তিনি উচ্চারণ করেননি।

পেলোসি মনে করেন, বিচার বিভাগীয় কমিটি, বিশেষত এর প্রধান জেরি ন্যাডলার অভিশংসন নিয়ে কিছুটা বাড়াবাড়ি করছেন। চলতি সপ্তাহের শুরুতে দলীয় সদস্যদের এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে পেলোসি বলেন, দলের সদস্যদের মতামত উপেক্ষা করে এই কমিটি অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরুর কথা বলেছে। এই কাজে বিশেষ উৎসাহ জোগাচ্ছে কমিটির পক্ষে কর্মরত সহকারীরা। দলের ভেতরে যে কথাবার্তা হয়, তারাই সব ফাঁস করে দিচ্ছে। এসব সহকারীদের নাম না উল্লেখ করে পেলোসি পরিহাসের সঙ্গে বলেন, ‘এই কথাটাও ফাঁস করে দিন।’ পেলোসির এ কথা নিয়েও গণমাধ্যমে আলোচনা হয়েছে।