বাংলাদেশি আদম পাচার চক্র মেক্সিকোয় সক্রিয়

মেক্সিকো হয়ে আমেরিকায় আদম পাচারে বাংলাদেশি একটি শক্তিশালী চক্র জড়িত। এই চক্রের যেমন আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে, তেমনি বাংলাদেশে রয়েছে এই দালাল চক্রের স্থানীয় এজেন্ট। নোয়াখালী ও সিলেট অঞ্চলের গ্রাম পর্যায়ে এরা দালাল দিয়ে লোক সংগ্রহ করে। দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ঘুরিয়ে এদের মেক্সিকোতে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেখান থেকে তাদের অবৈধভাবে আমেরিকায় ঢোকানো হয়। করা হয় অ্যাসাইলাম বা আশ্রয়ের আবেদন। তবে অনেকে আবার মেক্সিকোতে আটক হন। তবে সে দেশের কারাগারে ঠিক কত বাংলাদেশি অভিযাত্রী আটক আছেন, তা কেউ বলতে পারবে না।
বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসীদের রুখতে অভিবাসনবিরোধী নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে গত মাস থেকে মেক্সিকো হয়ে আমেরিকায় আসা অ্যাসাইলাম বা আশ্রয় প্রার্থীদের আবেদনের নিয়ম-নীতি পরিবর্তন করা হয়েছে।
এরই মধ্যে টেক্সাসের হিউস্টনের জর্জ বুশ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মেক্সিকোয় বসবাসকারী এক বাংলাদেশিকে অবৈধ অভিবাসী পাচারের পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আমেরিকার ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এক বিবৃতিতে জানায়, তারা মিলন মিয়া নামের এক বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকো সীমান্তে মানবপাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে। মিলন মিয়া মেক্সিকোর তপাচুলায় একটি হোটেল ভাড়া করে রাখতেন। তিনি সেখানে অবৈধ অভিবাসীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। তিনি আমেরিকার সীমান্তে অন্যান্য মানবপাচারকারীর সঙ্গে কাজ করেন, ইতিমধ্যে অনেক বাংলাদেশিকে অবৈধভাবে তিনি আমেরিকায় পাচার করেছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন। 

আইসের অভিযানে মিলন মিয়ার অন্যতম সহযোগী আরেক বাংলাদেশি মোক্তার হোসেন দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ঠিক কখন হোসেন ও মিয়া চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত হয়েছিলেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে দেখা যাচ্ছে, মিলন মিয়া তার পাচারের নেটওয়ার্কটি শুরু করেছেন ২০১৫ সালের দিকে। আর হোসেন এই কাজে নামেন ২০১৬ সালের শেষের দিকে। উভয়ই তাদের গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত ২০১৭ সাল থেকে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন।
সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, মেক্সিকোতে বসবাসরত কিছু বাংলাদেশি পাচারকারী বহু সাধারণ বাংলাদেশিদের আমেরিকায় আনার লোভ দেখিয়ে হাজার হাজার ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। আরও জানা যায়, মিলন মিয়া ও হোসেন—এই দুই মানবপাচারকারী এসব কার্যক্রমে খুব কমই একা ছিলেন। তাদের সঙ্গে আরও অনেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। আদালতের তথ্যমতে, কমপক্ষে আরও চারজন বাংলাদেশি দক্ষিণের মেক্সিকোয় মিলন মিয়ার সঙ্গে কাজ করতেন এবং অভিবাসীদের বিমানবন্দরগুলোতে আনতে ও সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় মেক্সিকানদের ব্যবহার করেছিলেন হোসেন।
হিউস্টনে গ্রেপ্তারের ঘটনায় এইচএসআই এজেন্টদের সঙ্গে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হোসেন বলেছিলেন, তিনি প্রায় সাত বছর আগে বাংলাদেশ ছেড়েছেন এবং এক বা দু বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় কাজ করেছেন। তারপরে তিনি ব্রাজিলে চলে এসেছেন, সেখানে তিনি চার বছর কাজ করেছিলেন। পরে আরেক ভাই তার সঙ্গে সেখানে যোগ দেন।
বাংলাদেশি অভিবাসীদের আমেরিকা সীমান্তে পাচারের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল—এই দুটি দেশই প্রধান মঞ্চ ও ট্রানজিট দেশ।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (এইচএসআই) সান আন্তোনিওর ভারপ্রাপ্ত বিশেষ কর্মকর্তা শেন ফোল্ডেন বলেন, ‘মিলন মিয়ার গ্রেপ্তার আমেরিকার জাতীয় সুরক্ষা ও জননিরাপত্তা সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য একটি প্রয়াস।’ তিনি আরও বলেন, ‘এইচএসআই দৃঢ়ভাবে তদন্ত এবং ট্রান্সন্যাশনাল অপরাধমূলক নেটওয়ার্কগুলো ধ্বংস করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই ট্রান্সন্যাশনাল অপরাধ নেটওয়ার্কগুলো আমাদের দেশ ও জাতির জন্য হুমকি। আমরা আমাদের সীমান্তের অখণ্ডতা বজায় রাখতে এবং আমাদের দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী অংশীদারদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।’