সোসাইটি ভবন নিয়ে জটিলতা

ঘর বাঁধা তো সহজ কাজ নয়। নগরসভ্যতা এই ঘর বাঁধাকে আরও কঠিন করে দিয়েছে। যেকোনো নগরীতে ভাড়াটে মাত্রই জানে নিজের একটি ঘর না থাকার যন্ত্রণা। নিউইয়র্ক নগরীর আলো ঝলমলে সুউচ্চ ভবনগুলোর পাশেই শুয়ে থাকা গৃহহীনেরা এরই প্রমাণ বহন করে। সবার থাকে না নিজস্ব ছাদ। এই ছাদের নিশ্চয়তা জোগাড়ে অনেককে এক জীবন কাটিয়ে দিতে হয়। এ কথা সত্য সংগঠনের ক্ষেত্রেও। বলা হয়ে থাকে যে, সম্পদ গড়া যত কঠিন, তার চেয়েও কঠিন একে রক্ষা করা। তাই ব্যক্তি বা সংগঠন যখন নিজস্ব একটি ঠিকানা তৈরিতে সক্ষম হয়, তখন থেকেই শুরু হয় সে সম্পদ রক্ষার লড়াই। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির চেয়ে সংগঠনকে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হয়। কারণ, ব্যক্তির সাফল্য-ব্যর্থতার দায় শুধু তার নিজের। কিন্তু একটি সংগঠন গড়ে ওঠে হাজার মানুষের শ্রমে-ঘামে। তাই সংগঠনকে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়।

নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি বড় সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি। প্রবাসে মারা যাওয়া বাংলাদেশিদের শেষকৃত্য, নতুন প্রজন্মকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া, বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে নানা ধরনের আয়োজনসহ এর কার্যক্রম অনেক বিস্তৃত। কার্যক্রম ও ব্যাপ্তির কারণেই সংগঠনটির প্রতি মানুষের প্রত্যাশা অনেক। এই প্রত্যাশা থেকেই সংগঠনটির সভ্য হয়েছেন অনেকে; দিয়েছেন নিয়মিত চাঁদা। সেই চাঁদার অর্থের ভিতেই দাঁড়িয়ে আছে সোসাইটির ভবনটি। অথচ নানা অনিয়মের কারণে, নগরীর আইন লঙ্ঘনের কারণে এখন সেই ভবনটি হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কর বকেয়া থাকায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সোসাইটির কেনা ভবনটির মালিকানা এরই মধ্যে চলে গেছে ব্যাংকের কাছে। নগরীর কর বিভাগ বাড়িটির ওপর লিন বসিয়েছে। ইতিমধ্যেই এই লিন বিক্রি হয়ে গেছে বলেও কমিউনিটিতে গুঞ্জন উঠেছে। প্রায় এক বছর আগে ট্যাক্স লিনের কারণে ব্যাংক অব আমেরিকা বাড়িটি তাদের নামে নিয়ে নেয়। সঙ্গে রয়েছে ১০ বছর ধরে আইন লঙ্ঘনের কারণে আরোপিত জরিমানা, যার পরিমাণ ৮৬ হাজার ডলার। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এই জটিলতা সম্পর্কে সদস্যদের অবহিত করা হয়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংগঠনের বর্তমান কর্তাব্যক্তিরা আইনজীবী নিয়োগের কথা বলছেন। বলছেন, সময় মতো এ জটিলতা সম্পর্কে তাঁরা জানতে পারেননি। বলছেন, এ সম্পর্কিত নোটিশগুলো নাকি ভুল ঠিকানায় গিয়েছে। এই বক্তব্যগুলোই সংগঠনের নেতৃত্বের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ বহন করে। কারণ, আইন লঙ্ঘনের ঘটনাটি ২০০৯ সাল থেকে চলমান। কিন্তু সোসাইটি এ বিষয়ে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় ছিল।

বাংলাদেশ সোসাইটি দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যায় জর্জরিত। সংগঠনটিতে নেতৃত্বের লড়াই যতটা প্রকট, ততটা নেই দায়িত্ব নেওয়ার প্রবণতা। বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি কম হয়নি। এখন সোসাইটির নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে। ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় সে নির্বাচনকে সামনে রেখে সভা-সমাবেশও শুরু হয়ে গেছে। নেতৃবৃন্দ এখন নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত।

সোসাইটির নির্বাচন হোক, তা সবাই চায়। চায় যে, একটি দক্ষ নেতৃত্ব সোসাইটি ও এর কার্যক্রমকে এগিয়ে নিক। একই সঙ্গে চায়, সোসাইটি তার বিস্তৃতি ও সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে তার মূল ভিত্তি সদস্যদের শ্রমে-ঘামে গড়ে ওঠা সম্পদের প্রতি যত্নবান হোক। আর এর জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই। ভবন হাতছাড়া হওয়া ঠেকাতে সোসাইটির নেতৃবৃন্দকে বিভেদ ভুলে একসঙ্গে আইনি পথে লড়াই করতে হবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যেন কোনো আইন লঙ্ঘনের কারণে এ ধরনের শঙ্কা ফের হাজির না হয়, সে জন্যও কাজ করতে হবে।