বিশ্বনেতাদের যা বলল কিশোরী গ্রেটা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে কঠোর ও ভর্ৎসনাপূর্ণ চোখে তাকায় গ্রেটা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে কঠোর ও ভর্ৎসনাপূর্ণ চোখে তাকায় গ্রেটা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

গ্রেটা থুনবার্গের বয়স ১৬ বছর। জাতিসংঘে বিশ্বের বাঘা বাঘা সব নেতার সামনে সাহসী গ্রেটা বলে, ‘আপনারা আমাদের স্বপ্ন ও শৈশব হরণ করেছেন। বিশ্বের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। আর আপনারা শুধু অর্থ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গালগল্প করে যাচ্ছেন।’

জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের অংশ হিসেবে আয়োজিত ‘জলবায়ু ব্যবস্থা গ্রহণ শীর্ষ বৈঠকে’ আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে কথা বলার সুযোগ পেয়ে এ কথা জানায় গ্রেটা থুনবার্গ।

গ্রেটার আহ্বানে ১৫০টি দেশে স্থানীয় সময় শুক্রবার লাখ লাখ মানুষ জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। নিউইয়র্কে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী কয়েক লাখ ছাত্রছাত্রীর দিকে তাকিয়ে সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ‘বিশ্ব নেতৃবৃন্দ আমাদের কথা শুনতে পান না। কিন্তু আমি তাঁদের আমার কথা শুনিয়ে ছাড়ব।’

গতকাল সোমবার সে সুযোগ পেয়েছিল গ্রেটা। বিশ্বনেতাদের দিকে তাকিয়ে সে বলে, ‘আপনারা আমাদের রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছেন। কিন্তু আমি এখানে এসেছি শুধু এই কথা বলতে, মনে রাখবেন, আপনারা কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, আমার তার ওপর নজর রাখব।’

গ্রেটার এই কথা শুনে সাধারণ পরিষদ হলে থাকা নেতারা হেসে ওঠেন। এরপরই গ্রেটা তাঁদের উদ্দেশ করে বলে, ‘আপনারা বলছেন তরুণদের কাছে আপনারা আশার খোঁজে এসেছেন। এ কথা বলার সাহস পান কোত্থেকে?’

যারা এখনো জলবায়ু পরিবর্তনের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তাঁদের উদ্দেশে গ্রেটা বলে, ‘এই ব্যাপারে বিজ্ঞান তো একদম স্পষ্ট। ৩০ বছর ধরেই আমরা সে কথা জানি। তার পরও আপনারা অন্যদিকে ফিরে তাকান আর বলেন, “আমরা তো অনেক কিছু করছি।” আপনারা বলেন, আমাদের কথা আপনারা শুনেছেন, আমাদের উদ্বেগ আপনারা বোঝেন। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো, আপনারা আমাদের রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন, আমরা এখন আপনাদের বেইমানি বোঝা শুরু করেছি।’ গ্রেটা আরও বলে, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চোখ এখন আপনাদের ওপর। আপনারা যদি আমাদের রক্ষায় ব্যর্থ হন, মনে রাখবেন আপনাদের আমরা কখনো ক্ষমা করব না।’

গ্রেটার পরিবেশবাদী বক্তব্য চাবুকের মতো আছড়ে পড়ছিল। শুরুতে যে বিশ্ব নেতারা মুচকি হেসেছিলেন, ততক্ষণে তাঁদের মুখ গম্ভীর হয়ে এসেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ একটানা শুনছিলেন গ্রেটার বক্তব্য। বক্তব্য দিতে উঠে তিনি বিশ্বনেতাদের স্মরণ করিয়ে দিলেন, এই মেয়েটি প্রায় এক বছর প্রতি শুক্রবার স্কুলে যাওয়ার বদলে পরিবেশ সংকট সমাধানে বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করছে। সে বিক্ষোভ এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন শুধু মুখে এ কথা বলে পার পাব না যে সবকিছু ঠিক আছে বা আমরা যা করছি সব ঠিক করছি।’

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আমাদের প্রজন্ম বিশ্বকে রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। যে জলবায়ু সংকটে আমরা নিক্ষিপ্ত হয়েছি, তাতে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। কিন্তু এই দৌড়ে জয়লাভ অসম্ভব নয়।’

গ্রেটার ভাষণের পর বিশ্বনেতাদের অনেকে তাকে অভিনন্দন জানান। কেউ কেউ তার সঙ্গে আলাদা করে বৈঠকে বসেন। বক্তব্যের কোথাও গ্রেটা একবারের জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম উচ্চারণ করেনি। তবে তার আক্রমণের লক্ষ্য ছিলেন ট্রাম্প। ক্ষমতা নেওয়ার আগে থেকেই ট্রাম্প জলবায়ু সংকটের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ক্ষমতা নেওয়ার পর ২০১৫ সালে প্যারিসে স্বাক্ষরিত জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন। সোমবারের শীর্ষ বৈঠকে তিনি অল্প কয়েক মিনিটের জন্য এসে বসেন এবং প্রায় পুরো সময় পাশে বসা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে কথা বলে সময় কাটান।

দিনের কার্যক্রমের একপর্যায়ে গ্রেটা ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একে অপরের মুখোমুখি হন। গ্রেটাকে উপেক্ষা করে ট্রাম্প সাংবাদিকদের দিকে এগিয়ে যান। সে সময় যে কঠোর ও ভর্ৎসনাপূর্ণ চোখে গ্রেটা তাঁকে একপলকের জন্য তাকিয়ে দেখে, উপস্থিত অনেক সাংবাদিকের ক্যামেরায় তা ধরা পড়ে।