অভিশংসনের সিদ্ধান্ত ডেমোক্র্যাটদের পথের কাঁটা হতে পারে

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। ছবি: রয়টার্স
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা তাঁর বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের অভিযোগে অভিশংসনের দাবি জানিয়ে আসছে। যতই দিন গেছে, এই দাবি তীব্রতর হয়েছে। শুধু একজন এই উদ্যোগে বাধা দিয়ে গেছেন। তিনি কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটদের নেতা, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। তাঁর যুক্তি ছিল, পর্যাপ্ত প্রমাণ না পাওয়া গেলে অভিশংসনের পথে অগ্রসর হলে ট্রাম্পের হাতে তাঁর পুনর্নির্বাচনের অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে।

গতকাল মঙ্গলবার এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে পেলোসি জানালেন, শাসনতন্ত্র, জাতীয় নিরাপত্তা ও নির্বাচন ব্যবস্থা রক্ষার যে শপথ ট্রাম্প নিয়েছেন, তা তিনি ভঙ্গ করেছেন। এই অবস্থায় অভিশংসনের মাধ্যমে ট্রাম্পকে অপসরণ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

পেলোসি বলেন, ‘সেই কারণে আমি ঘোষণা করছি, অভিশংসিত করার লক্ষ্যে প্রতিনিধি পরিষদ আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে।’

পেলোসির এই সিদ্ধান্তের কারণ—ইউক্রেনের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে গত ২৫ জুলাই এক টেলিফোন আলাপচারিতা। এই আলাপচারিতা সময় সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তাঁর ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর জন্য জেলেনস্কিকে ট্রাম্প চাপ দিয়েছেন। আর এ কথা ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছেন।

হান্টার বাইডেন একসময় ইউক্রেনের একটি গ্যাস কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। সেই কোম্পানির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওবামা প্রশাসনের সময়েই উঠেছিল। অভিযোগ উঠেছে, এই তদন্ত শুরু না হলে ইউক্রেনের জন্য নির্ধারিত আড়াই শ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সাহায্য স্থগিত রাখা হবে, ট্রাম্প এমন হুমকি দিয়েছেন।

জো বাইডেন ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রধান ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বী।

ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, সামরিক সাহায্য স্থগিত রাখার কথা তিনি বলেছেন। তবে তার কারণ ইউরোপীয় দেশগুলো যাতে ইউক্রেনকে বেশি করে সহায়তা দেয়, তার জন্য চাপ প্রদান। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি জো বাইডেনের কথাও বলেছেন, কিন্তু তার কারণ তিনি কোনো দুর্নীতি প্রশ্রয় দিতে চাননি।

ট্রাম্প গত চার দিন জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার কোনোটাই ডেমোক্র্যাটদের কাছে সত্য বলে মনে হয়নি। তাঁদের দাবি, জো বাইডেনের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর তথ্য মাটি খুঁড়ে বের করার জন্যই ট্রাম্প চাপ দিয়েছিলেন। তারা জেলেনস্কির সঙ্গে কথাবার্তার পূর্ণ বিবরণ প্রকাশের দাবি জানিয়েছে। টেলিফোন আলাপচারিতার সঙ্গে পরিচিত একজন ‘হুইসেলব্লোয়ার’ বা বেনামি সতর্কতাকারী বিষয়টি গোয়েন্দা দপ্তরের ইন্সপেক্টর জেনারেলের দৃষ্টিগোচরে আনে। ডেমোক্র্যাটরা সেই হুইসেলব্লোয়ারের অভিযোগপত্র প্রকাশেরও দাবি জানিয়েছে।

প্রথমে অস্বীকার করলেও চাপের মুখে ট্রাম্প এখন বলছেন, তিনি টেলিফোন আলাপচারিতার পূর্ণ বিবরণ কংগ্রেসের হাতে তুলে দেবেন। হুইসেলব্লোয়ারের অভিযোগও শর্তসাপেক্ষে কংগ্রেসের হাতে তুলে দিতে তিনি সম্মত হয়েছেন।

পেলোসি ও ডেমোক্রেটিক নেতৃত্ব মনে করছে, বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানকে চাপ দিয়ে নিজের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে ক্ষতিকর তথ্য সংগ্রহের যে চেষ্টা ট্রাম্প করেছেন, তা যে বেআইনি, সাধারণ মার্কিন জনগণের কাছে তা সহজেই ধরা পড়বে।

এর আগে বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলার রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ব্যাপারে যে তদন্ত পরিচালনা করেন, তাতে বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টির কথা প্রমাণিত হলেও সাধারণ নাগরিকের মনে তেমন প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু পরবর্তী নির্বাচনে প্রভাব ফেলার লক্ষ্যে ট্রাম্প তাঁর সরকারি ক্ষমতা অপব্যবহার করার যে কথা স্বীকার করেছেন, কট্টর ট্রাম্পপন্থী ছাড়া অন্য কারও কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

রাজনৈতিক ভাষ্যকারেরা অবশ্য সতর্ক করে বলেছেন, অভিশংসনের এই সিদ্ধান্ত ডেমোক্র্যাটদের জন্য পথের কাঁটা হয়ে উঠতে পারে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই ট্রাম্প-জেলেনস্কির কথাবার্তার পূর্ণ বিবরণ প্রকাশিত হবে। তাতে যদি ক্ষতিকর কোনো তথ্য না পাওয়া যায়, তা উল্টো ডেমোক্র্যাটদের হাসির পাত্র করে তুলতে পারে। অন্ততপক্ষে ট্রাম্প ও রিপাবলিকান নেতৃত্ব তেমনই আশা করছেন।

পেলোসির ঘোষণার পরপরই তাঁর কথাকে ব্যবহার করে রিপাবলিকান ক্যাম্পেইন কমিটি চাঁদা সংগ্রহে নেমে পড়েছে।

একজন ডেমোক্রেটিক নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ বলেছেন, পেলোসির এই সিদ্ধান্তের ফল কী দাঁড়াবে, তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু এতে কোনো সন্দেহ নেই, ফল যেমনই দাঁড়াক তার প্রতিক্রিয়া ২০২০ সালের নির্বাচনের ওপর পড়বে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।