ট্রাম্পের ইউক্রেন ফোনালাপ 'ধামাচাপার' চেষ্টার অভিযোগ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফোনালাপ হোয়াইট হাউস ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হুইসেলব্লোয়ারের অভিযোগ অনুসারে, হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ফোনালাপের বিস্তারিত তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

গত ২৫ জুলাই ট্রাম্প ইউক্রেনের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। ওই সময় ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ট্রাম্প ফোনে চাপ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই তদন্ত শুরু না হলে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সাহায্য স্থগিত রাখা হবে, ট্রাম্প এমন হুমকি দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

ট্রাম্পের দাবি, বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ইউক্রেনের একটি গ্যাস কোম্পানির ব্যাপারে সে দেশের সরকার যে তদন্ত শুরু করে, তা বন্ধে তিনি চাপ প্রয়োগ করেন।

ইউক্রেন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিশংসনযোগ্য অপরাধ করেছেন কি না, তা তদন্তে কমিটি করেছেন ডেমোক্র্যাটরা। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আনুষ্ঠানিকভাবে এই তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।

ন্যান্সি পেলোসি অভিযোগ করছেন, জো বাইডেনকে ঘায়েল করতে ট্রাম্প বিদেশি শক্তির সাহায্য চেয়েছেন। সে ক্ষেত্রে দর-কষাকষিতে ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তাকে ব্যবহার করেছেন তিনি।

ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার আগে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ইউক্রেনে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তা বন্ধ করেছিলেন। তবে বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনের নেতাকে চাপ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, নতুন প্রকাশিত হুইসেলব্লোয়ারের অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই ফোনালাপের ট্রান্সক্রিপ্টটি স্বাভাবিক কম্পিউটার সিস্টেমে রাখা হয়নি।

যেকোনো ব্যক্তি কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার দুর্নীতি বা অনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে হুইসেলব্লোয়ার হিসেবে দাঁড়াতে পারেন। উন্নত বিশ্বসহ অনেক দেশে এমন হুইসেলব্লোয়ারের প্রচলন আছে। হুইসেলব্লোয়ারের আইনি সুরক্ষা রয়েছে।

হুইসেলব্লোয়ার অভিযোগ এমন সময়ে এল, যখন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের আইনপ্রণেতাদের ইন্টেলিজেন্স কমিটি ট্রাম্পের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। ভারপ্রাপ্ত জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক জোসেফ মাগোআয়ার শুরুতে কংগ্রেসকে তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

তবে স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি পরিষদের প্রশ্নের মুখে মাগোআয়ার বলেছেন, তিনি মনে করেন, হুইসেলব্লোয়ার সৎ বিশ্বাসে কাজ করেছেন। এবং সঠিক কাজ করেছেন।

ট্রাম্প তাঁর অভিশংসনের তদন্তপ্রক্রিয়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন।

হুইসেলব্লোয়ারের অভিযোগ প্রকাশের পর গতকাল হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, অভিশংসন তদন্তপ্রক্রিয়া অনুমোদন করা উচিত হয়নি। ডেমোক্র্যাটরা যা করছেন, তা দেশের জন্য অমর্যাদাকর। এটা করতে দেওয়া উচিত হয়নি। এটা বন্ধ করার একটি উপায় থাকা উচিত। সেটা আদালতের মাধ্যমে আইনিভাবে হতে পারে।

গত বুধবার নিউইয়র্কে মার্কিন মিশনের স্টাফদের উদ্দেশে ট্রাম্পের কথাবার্তার রেকর্ড থেকে শোনা গেছে, ট্রাম্প বলছেন, হুইসেলব্লোয়ারকে যারা তথ্য দিচ্ছে, তারাও একরকম গুপ্তচর।

অতীতে যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা জানেন, অতীতে আমরা যখন স্মার্ট ছিলাম, তখন কী করতাম? গুপ্তচর ও বিশ্বাসঘাতকদের এখন আমরা যা করি, তখন তার চেয়ে কিছুটা ভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করতাম...।’

একনজরে বিতর্ক যেভাবে শুরু হলো
১৮ জুলাই বা তার আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা বন্ধে হোয়াইট হাউসকে নির্দেশ দেন।

২৫ জুলাই ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ৩০ মিনিট ফোনে কথা বলেন।

৯ সেপ্টেম্বর হুইসেলব্লোয়ারের অভিযোগ থেকে ফোনের বিষয়টি জানতে পারে কংগ্রেস। তবে সেটি তাদের দেখার ব্যাপারে বাধা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন।

১১ সেপ্টেম্বর ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা ছাড় দেয় পেন্টাগন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

২৩ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প নিশ্চিত করেন তিনি ইউক্রেনে সহায়তা বন্ধ করেছিলেন ‘দুর্নীতির’ বিষয়ে উদ্বেগ থেকে।

২৪ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প বলেন, অন্য দেশগুলো যেন সহায়তা বাড়ায়, সে লক্ষ্যেই তিনি সহায়তা বন্ধ করেছিলেন।