ট্রাম্পের ইউক্রেন-বিষয়ক প্রতিনিধির পদত্যাগ

ইউক্রেন-বিষয়ক মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি কার্ট ভলকার পদত্যাগ করেছেন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেন-বিষয়ক মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি কার্ট ভলকার পদত্যাগ করেছেন। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন তদন্তে কংগ্রেসের প্রশ্নের মুখে ইউক্রেন-বিষয়ক মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি কার্ট ভলকার পদত্যাগ করেছেন। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার তিনি পদত্যাগ করেন।

আজ শনিবার বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিষয়টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে কার্ট ভলকারের পদত্যাগ করার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। বিশেষ দূতের পদত্যাগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ করে অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সংবাদপত্র। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন কার্ট ভলকার।

ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে আগামী বৃহস্পতিবার ভলকারকে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিল। এর আগেই তিনি পদত্যাগ করলেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ফোনালাপের কিছু অংশকে ট্রাম্পের ক্ষমতার অপব্যবহার উল্লেখ করে হুইসেলব্লোয়ার অভিযোগ ওঠে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর একজন কর্মকর্তা হুইসেলব্লোয়ার হিসেবে সংস্থার শীর্ষ আইনজীবীর কাছে এ অভিযোগ করেন বলে জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হুইসেলব্লোয়ার অভিযোগে বলা হয়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কাছে ট্রাম্পের দাবির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে ভলকার ইউক্রেনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন।

গত ২৫ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির টেলিফোনে আলাপ হয়। ফোনালাপে ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী জো বাইডেন এবং তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ট্রাম্প চাপ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই তদন্ত না করলে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সাহায্য স্থগিত রাখা হবে বলেও ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে।

হুইসেলব্লোয়ারের অভিযোগের বিষয়টি সামনে আসার পর ইউক্রেন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিশংসনযোগ্য অপরাধ করেছেন কি না, তা তদন্তে কমিটি করেছেন ডেমোক্র্যাটরা।

স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আনুষ্ঠানিকভাবে এই তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, জো বাইডেনকে ঘায়েল করতে ট্রাম্প বিদেশি শক্তির সাহায্য চেয়েছেন। সে ক্ষেত্রে দর-কষাকষিতে ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তাকে ব্যবহার করেছেন।

ট্রাম্পের দাবি, বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ইউক্রেনের একটি গ্যাস কোম্পানির ব্যাপারে সে দেশের সরকার যে তদন্ত শুরু করে, তা বন্ধে তিনি (বাইডেন) চাপ প্রয়োগ করেন।

ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার আগেই তিনি ব্যক্তিগতভাবে ইউক্রেনে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তা বন্ধ করেছিলেন। তবে বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনের নেতাকে চাপ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত এক চিঠিতে জানা গেছে, আইনপ্রণেতারা ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি জুলিয়ানির একটি টুইটের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ওই টুইটে রুডি একটি কথোপকথনের স্ক্রিনশট তুলে ধরেছিলেন, যেটিতে জেলেনস্কির শীর্ষ উপদেষ্টার সঙ্গে ভলকার তাঁর যোগাযোগের কথা বলেছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘এসব যেকোনো দপ্তরের কর্মীদের নির্ধারিত সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ে উপস্থিত হওয়ার ব্যর্থতা প্রতিনিধি পরিষদের অভিশংসন তদন্তে প্রমাণ পেতে বাধার সৃষ্টি করবে।’

ভলকার ইউরোপবিষয়ক একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিক। জর্জ ডব্লিউ বুশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকার সময় তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট দ্য নর্থ আটলান্টিক ট্রিয়েটি অর্গানাইজেশনের (ন্যাটো) মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পরে পরামর্শক হিসেবে পেশা গড়ে তুলতে তিনি কূটনীতিকের পেশা ছেড়ে দেন এবং ২০১২ সালে অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ম্যাককেইন ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রশাসন ভলকারকে ইউক্রেন-বিষয়ক মার্কিন নীতি ইস্যুতে দায়িত্ব দেয়।

অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের পরিচালিত সংবাদপত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃতি করে বলা হয়, ভলকার ইউক্রেন-বিষয়ক তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।

‘অ্যারিজোনা রিপাবলিক’ পত্রিকাও জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মাইকেল ক্রো নিশ্চিত করেছেন, ভলকার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। তবে তিনি ইনস্টিটিউটের দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

বিশেষ দূত হিসেবে ভলকার রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের মুখে পড়া ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তার বিষয়টি দেখভাল করতেন। ২০১৪ সালে ইউক্রেনে শুরু হওয়া লড়াইয়ে ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। ওই সময় রাশিয়া ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে সরিয়ে এনে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে।

ডেমোক্র্যাটরা খুঁজছেন, ট্রাম্প ইউক্রেনের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি দেরি করিয়ে বাইডেনের বিরুদ্ধে নিজের উদ্দেশ্য সাধনের উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন কি না।