অপূর্ণতা

সকালে আমি যখন ঘুমিয়ে থাকতাম, তখন আমার মাথায় গায়ে হাত বুলিয়ে দিতেন। হয়তো মন খারাপ করতেন তিনি। এমনই একদিন সকালে খুব আস্তে প্রায় শোনা যায় না এমনভাবে আমাকে বললেন, মা, তুমি তো এখন অনেক বড় হয়ে গেছ। আবার একদিন আমার কোলে ওঠো তো। আমার বয়স হয়ে যাচ্ছে। যদি তোমাকে আর কোলে না নিতে পারি। কথাটা শুনে কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল আমার। কিছু বলতে পারিনি। শুধু চুপচাপ মাথা নেড়ে সায় দিয়েছিলাম। এরপর অনেক দিন কেটে গেছে।
বাবা ব্যস্ত থাকেন চাকরি নিয়ে আর আমি আমার পড়াশোনা নিয়ে। এরই মধ্যে একদিন কলেজ থেকে ফিরে শুনি, বাবা রোড অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন। মনে হলো, পুরো দুনিয়া আমার চোখের সামনে দুলছে। ডাক্তার বললেন, বাবার পা ভেঙে গিয়েছে। আর অন্য ছোটখাটো আঘাত তো আছেই। এরপর দিন যায়। বাবা আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠলেন। কিন্তু আর আগের মতো হাঁটতে পারলেন না। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হতো বাবাকে। তারপর মাঝখানে কেটে গেছে কয়েকটা বছর। বাবা আর আমাকে কোলে নিতে পারেননি। পড়াশোনার জন্য এখন আমি বাবার কাছ থেকে অনেক দূরে থাকি। বাড়িতে যাই কয়েক মাস পরপর। তাও মাত্র কয়েক দিনের ছুটিতে। বাবাকে আর কোনো দিন মনেও করিয়ে দিইনি কোলে নেওয়ার কথা। যদি বাবা না পারেন।