মার্কিন নাগরিকেরাও সীমান্তে নাজেহাল

অভিবাসীবিরোধী ট্রাম্প প্রশাসনের নানা পদক্ষেপে বিপাকে পড়ছেন মার্কিন নাগরিকরাও। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কোপানলে পড়ছেন তারাও। ফ্রান্সিসকো এরউইন গ্যালিসিয়া মার্কিন নাগরিক হওয়ার পরও আমেরিকা থেকে বহিস্কার হয়েই যাচ্ছিলেন। এক মাস ইমিগ্রেশন হেফাজতে থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন তিনি।
ডালাসে জন্মগ্রহণকারী ১৮ বছর বয়সী মার্কিন এই বালকের মামলাটি একজন ইমিগ্রেশন বিচারকের আদালতে দায়ের করা হয়েছে। ফ্রান্সিসকো এরউইন গ্যালিসিয়া বলেন, তিনি আশঙ্কা করছেন ইমিগ্রেশন বিভাগ এখনো তাকে বিতাড়িত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফ্রান্সিসকোল মা নিশ্চিত করেছেন, তার ১৮ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক সন্তান ফ্রান্সিসকো, যিনি প্রায় এক মাস ধরে ফেডারেল ইমিগ্রেশনের হেফাজতে আটক ছিলেন। ফ্রান্সিসকো টেক্সাসের এডিনবার্গ নামক একটি হাইস্কুলের ছাত্র। তার অ্যাটর্নি ক্লউডিয়া গ্ল্যানের তথ্যানুসারে, গত ২৭ জুন কলেজ ফুটবল টিমে যোগ দিতে রোড ট্রিপে বের হনফ্রান্সিসকো।
দক্ষিণ টেক্সাসের ফালফুরিয়াস শহরে একটি বর্ডার পেট্রলের চেকপোস্টে ফ্রান্সিসকোকে থামানো হয়েছিল। তিনি তাঁর ভাই ও এক দল বন্ধুর সঙ্গে স্কাউটিং ইভেন্টের জন্য উত্তর টেক্সাস যাচ্ছিলেন। তাদের কাগজপত্রের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ফ্রান্সিসকো জানান, তার কাছে সব রকমের কাগজপত্র ছিল। টেক্সাসের ওয়ালেট সাইজ বার্থ সার্টিফিকেটসহ টেক্সাসের আইডি ও সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড। কিন্তু আমেরিকার সীমান্তের কাস্টম ও সীমান্ত রক্ষীবাহিনী তাকে আটকে ফেলে। সম্প্রতি শত শত আমেরিকান নাগরিকের মধ্যে তিনিও একজন, যাকে ভুল করে ফেডারেল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বাধ্য করেছে তাদের বৈধতার কাগজপত্র নিয়ে কোর্টে হাজির হতে। ফ্রান্সিসকোসহ অন্যরা ডিপোর্টেশনের ভয়ে প্রমাণাদি কোর্টে দাখিল করতে বাধ্য হন।

ফ্রান্সিসকো বলেন, ‘আজীবন তিনি এ দেশেই আছেন। যখন সীমান্ত রক্ষাকারীরা তার কাগজপত্র চেক করে, তারা বিশ্বাস করছিলেন না, তার কাগজপত্র সত্য। তারা আমাকে বারবার বলতে থাকেন, তার কাছে সব জাল কাগজপত্র।’ বুধবার এক বিবৃতিতে ইমিগ্রেশন বিভাগ বলেছে, ফ্রান্সিসকো সীমান্ত টহল দলের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে ইমিগ্রেশন এবং শুল্ক প্রয়োগকারী হেফাজতে স্থানান্তরিত হন। তার আগে তিনি নাগরিকত্বের সার্টিফিকেটসহ সব পরম্পরবিরোধী কাগজপত্র দাখিল করেছেন।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পৃথক ও একাধিক জন্ম সনদ, মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতির অন্য বিষয়গুলো তদন্তের জন্য আরও সময় লাগতে পারে। যদিও আমরা পরিস্থিতির সত্যতা নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি, ওই ব্যক্তিকে আইসের আওতা থেকে মুক্ত করা হয়েছে। সিবিপি ও আইস উভয়ই আমাদের আওতায় থাকা অভিবাসীদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই পরিস্থিতির সব তথ্য যাচাই করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’
গাড়িতে থাকা অন্যদের কাছে যথাযথ কাগজপত্র না থাকায় প্রাথমিকভাবে সিবিপি ফ্রান্সিসকোকে সন্দেহ করে। তাঁর মেক্সিকোতে জন্ম নেওয়া ১৭ বছর বয়সী ভাই; যার এ দেশে স্কুল আইডি ছাড়া অন্য কোন আইনগত বৈধতা নেই। ফ্রান্সিসকো; যিনি ২০০০ সালে ডালাসে জন্মগ্রহণ করেন, কর্তৃপক্ষ তার টেক্সাসের কাগজপত্র নিশ্চিত করতে চায়। উইকেন্ডে তাকে স্থানান্তরিত করে আইসের আটককেন্দ্রে সেন্টারে আনা হয়। তাঁর ভাই মারলোনকে দুদিনের মধ্যেই আমেরিকার ইমিগ্রেশন বহিষ্কার করে দেশে ফিরে যেতে বাধ্য করে।
ফ্রান্সিসকোর মা সানজুয়ানার মার্কিন নাগরিকত্ব নেই। ফ্রান্সিসকো নাবালক থাকা অবস্থায় তাঁর সন্তানের নামে মার্কিন পর্যটন ভিসা নিয়েছিলেন এবং মিথ্যা তথ্য দেন যে, তাঁর সন্তানের জন্ম মেক্সিকোতে। সানজুয়ানা দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাঁর ছেলের ফিঙ্গার প্রিন্টের পর তাঁর ছেলের ভিসা সম্পর্কে জানতে পারে। পরস্পরবিরোধী দলিলগুলোই এজেন্সিটির সন্দেহকে উসকে দেয়।
স্প্যানিশ পোস্টকে ফ্রান্সেসকোর মা বলেন, ছেলেকে যেসব অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে, সেটা তার জন্য খুব বেদনাদায়ক ছিল। নাগরিকত্ব নিয়ে মিথ্যা বলেছে ভেবে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাঁর ছেলের ক্ষতি করতে পারে মনে করে তিনি রাতে ঘুমাতে পারতেন না।
কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রা ওকাসিও বলেছেন, ‘আমেরিকান নাগরিককে আটক করা হয়েছে। সীমান্তে ফাঁদে আটকা পড়ে আপনাদের কাছে কেমন অনুভব হবে? মানুষের দুর্গন্ধ এতটাই তীব্র যে সেখানে রক্ষীরা মুখোশ পড়েন। আমরা যখন কারও অধিকার লঙ্ঘিত করার অনুমতি দিই, তখন সবার অধিকার খুব বেশি পিছিয়ে থাকে না।’
যদিও আইসের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আমেরিকান নাগরিকের সংখ্যা খুবই কম। তবুও সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে এটি কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। ২০১৮ সালের এপ্রিলের একটি তদন্তে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস আবিষ্কার করেছে, আইস তাদের নাগরিকত্বের দাবি তদন্তের পরে ২০১২ সাল থেকে তাদের কারাগার থেকে ১ হাজার ৪৮০ জনকে মুক্তি দিয়েছে।
ক্যাটো ইনস্টিটিউট অনুমান করেছিল, একমাত্র টেক্সাসে আইস ভুলবশত অভিবাসীদের আটকে রেখেছিল। স্থানীয় জেলগুলোকে অনুরোধ করেছিল, অভিবাসীদের হেফাজতে রাখতে, যাতে আইস তাদের পরে ধরে নিতে পারে।