ধর্মান্ধতাবিরোধী অসাম্প্রদায়িক এক কথাসাহিত্যিক

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ

বাংলা সাহিত্যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে যদি বলা হয় ছোট গল্পের রাজা, তাহলে ছোট গল্পের রাজপুত্র হচ্ছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। তবে তিনি রবীন্দ্রবলয়ের বাইরে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র এক আধুনিক গল্পকার। মূলত তিনি বঙ্কিমচন্দ্র ও মীর মশাররফ হোসেনের অনুসারী ছিলেন। তিনি উচ্চবিত্ত পরিবারের একজন হয়েও সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কথাকেই তাঁর সাহিত্যের উপজীব্য করেছেন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ একজন রুচিশীল মানুষ ছিলেন। তিনি ছোট গল্প লেখা দিয়ে সাহিত্যাঙ্গনে পথচলা শুরু করলেও পরে একজন সফল ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার হিসেবেও নিজেকে উপস্থাপন করেন। ছোট গল্প ও উপন্যাস রচনায় আলাদা একটি ধারা সৃষ্টি করেছিলেন তিনি, যা পরে অনেক লেখকের কাছে ছিল অনুসরণীয়।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লেখন শৈলী, দৃশ্য বিন্যাস ও গল্প নির্মাণের ধরন পাঠকদের সহজেই আকৃষ্ট করে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকে এ কারণেই একজন ভাষা শিল্পীও বলা যায়। তাঁর লেখায় উঠে আসে সমাজের অসংগতি, ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার ও সাধারণ মানুষের অধিকারের কথা। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সব অসংগতির বিরুদ্ধে স্পষ্টবাদী প্রতিবাদী লেখক ছিলেন। তিনি একজন সমাজসংস্কারক ও দার্শনিকও বটে। সাধারণ মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে সমাজের অসংগতিগুলো যেমন দেখিয়ে দিয়েছিলেন, তেমনি সমস্যা সমাধানের দিশাও দিয়েছেন তিনি। তিনি আধুনিক কালের বাংলা সাহিত্যে প্রথম শ্রেণির সাহিত্যিকদের তালিকায় এক আলাদা স্থান দখল করে আছেন। ‘একটি তুলসী গাছের কাহিনি’ ও ‘লালসালু’-এর লেখক বলতেই সবাই তাঁকে চিনে নেয়। একাডেমিক পড়াশোনার খাতিরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ঝেড়ে মুখস্থ করতে হয় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যকর্মের পরিচিতি। ‘চাঁদের অমাবস্যা’ ও ‘কাঁদো নদী কাঁদো’-এর মতো উপন্যাস এবং ‘বহিপীর’, ‘তরঙ্গভঙ্গ’, ‘সুড়ঙ্গ’-এর মতো নাটকগুলোর লেখক হিসেবেই তাঁকে আমরা চিনি।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জন্ম ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট, চট্টগ্রামের ষোলোশহর। তাঁর মা নাসিম আরা খাতুন ছিলেন চট্টগ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারের সন্তান; আর বাবা সৈয়দ আহমদউল্লাহ ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। ওয়ালীউল্লাহর বাবা ছিলেন নোয়াখালীর অধিবাসী। তবে তাঁর সরকারি চাকরির সুবাদে ময়মনসিংহ, ফেনী, ঢাকা, হুগলি, চূঁচুরা, কৃষ্ণনগর, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ প্রভৃতি জায়গায় ওয়ালীউল্লাহর শৈশব ও শিক্ষাজীবন কেটেছে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বেড়ে ওঠেন সম্পূর্ণ সেক্যুলার পরিবেশে। বাবার দিক থেকে তিনি এক ধরনের সুফিবাদী, অসাম্প্রদায়িক ও উদার মানবতাবাদী শিক্ষা পেয়েছিলেন। তাঁর পরিবারে ইসলামি মূল্যবোধ ও মুসলিম শিষ্টাচারের সঙ্গে হিন্দু-মুসলমানের সমন্বয়ধর্মী খাঁটি বাঙালিয়ানার কোনো বিরোধ ছিল না।
খুব অল্প বয়সে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ মাকে হারান। মায়ের মৃত্যুর পর ওয়ালীউল্লাহর বাবা পুনরায় বিয়ে করেন টাঙ্গাইলের করোটিয়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। বিমাতা ও বৈমাত্রেয় ভাই-বোনদের সঙ্গে ওয়ালীউল্লাহর যথেষ্ট মধুর সম্পর্ক ছিল। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যচর্চা ও ছবি আঁকার ঝোঁক ছিল শৈশব থেকেই। ফেনী হাই স্কুল ও চট্টগ্রাম জেলা স্কুলে তিনি পড়াশোনা করেন। পাঠ্যপুস্তকের বাইরেই তাঁর পড়াশোনার আগ্রহ বেশি ছিল। তারপরও প্রতি ক্লাসেই প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানটি তাঁর অধিকারে থাকত। ১৯৩৯ সালে কুড়িগ্রাম হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। কলেজের প্রথম বর্ষে থাকতেই ঢাকা কলেজ ম্যাগাজিনে তাঁর প্রথম গল্প ‘সীমাহীন এক নিমেষে’ প্রকাশিত হয়। ১৯৪১ সালে তিনি প্রথম বিভাগে আইএ পাস করেন। এরপর ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে ১৯৪৩ সালে ওয়ালীউল্লাহ ডিসটিঙ্কশনসহ বিএ পাস করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে এমএ ক্লাসে ভর্তি হন। বাবার মৃত্যুর পর তাঁর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় এবং পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব তাঁর ও তাঁর বড় ভাইয়ের ওপর এসে পড়ে।
চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তাঁর মামা খান বাহাদুর সিরাজুল ইসলামের সহায়তায় ‘কমরেড পাবলিশার্স’ নামে একটি প্রকাশনী সংস্থা খোলেন। ১৯৪৫ সালে ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’ পত্রিকার সাব-এডিটর হিসেবে যোগ দেন। যদিও ওয়ালীউল্লাহ ভালো ইংরেজি জানতেন, তবু স্টেটসম্যানে ঢোকার পর শুধু বিশুদ্ধ নয়, সাহিত্যগুণ সম্পন্ন ইংরেজি লেখার প্রতি তাঁর ঝোঁক আসে। ভোরবেলা ঘড়ির অ্যালার্মে উঠে তিনি শুরু করতেন উন্নত ইংরেজি চর্চা। তাঁর পরবর্তীকালের ইংরেজি রচনাবলিই তাঁর কঠোর পরিশ্রমের স্মারক। ইতিমধ্যে গল্পকার হিসেবে ওয়ালীউল্লাহর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। বুলবুল, সওগাত, মোহাম্মদী, অরণি, পূর্বাশা, চতুরঙ্গ প্রভৃতি প্রখ্যাত সাময়িকীতে তাঁর লেখা প্রকাশ পেতে থাকে। পূর্বাশার সম্পাদক সঞ্জয় ভট্টাচার্য ওয়ালীউল্লাহর লেখাতে মুগ্ধ হয়ে ১৯৪৫ সালের মার্চ মাসে তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘নয়নচারা’ প্রকাশ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের কিছুদিন পর ওয়ালীউল্লাহ স্টেটসম্যানের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের সহকারী বার্তা সম্পাদক হয়ে আসেন। ভোরের প্রথম শিফটে ডিউটি থাকত তাঁর। তাই সারা দিন বাসায় থাকার দীর্ঘ অবকাশ পেতেন তিনি। এই অবকাশেরই ফসলই তাঁর ‘লালসালু’। এটি তিনি লেখা শুরু করেছিলেন ১৯৪৪-৪৫ সালে কলকাতাতে থাকতেই। ‘লালসালু’ বই আকারে বের করার ব্যাপারে ওয়ালীউল্লাহকে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দেন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের বাংলার অধ্যাপক অজিত গুহ। এটি দু হাজার কপি মুদ্রিত হয়েছিল। কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশকের অভাবে ও ওয়ালীউল্লাহর ব্যক্তিগত প্রচারণার অভাবে মাত্র শ দু-এক কপি বিক্রি হয়। ‘লালসালু’র প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন।
১৯৫১ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ওয়ালীউল্লাহ দিল্লি, সিডনি, জাকার্তা ও লন্ডনে পাকিস্তান দূতাবাসের প্রেস উইংয়ে কাজ করেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি প্যারিসে পাকিস্তান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ছিলেন এবং ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল অবধি তিনি ইউনেসকোর প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালে দিল্লি থেকে তিনি বদলি হন অস্ট্রেলিয়াতে। সেখানে তাঁর জীবনে আবির্ভাব ঘটে ফরাসি কন্যা অ্যান মেরির। অ্যান মেরি তাঁর দূর প্রবাসের নিঃসঙ্গতার অনেকটাই দখল করে নেন। ১৯৫৪-তে ওয়ালীউল্লাহ ঢাকায় বদলি হয়ে আসার পর অ্যানের বিরহে কাতর হয়ে পড়েন। দুজন অনবরত পরস্পরের কাছে চিঠি লিখেছেন সে দিনগুলোতে। ১৯৫৫ সালে অ্যানকে বিয়ে করেন ওয়ালীউল্লাহ। তাঁর স্ত্রী পরে তাঁর ‘লালসালু’ উপন্যাস ফরাসি ভাষাতে অনুবাদ করেন। এটি পরে ইংরেজিতে ‘Tree Without Roots’ নামেও অনূদিত হয়।
ওয়ালীউল্লাহর কৈশোর ও যৌবন অতিবাহিত হয় এক উত্তাল ও উষ্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশে। সে সময়ে জন্ম নেওয়া কোনো মানুষের পক্ষেই রাজনৈতিক বিষয়ে উদাসীন থাকা সম্ভব ছিল না। রাজনীতিতে সরাসরি অংশ না নিলেও ওয়ালীউল্লাহ চিরকাল ছিলেন বামপন্থী রাজনীতির স্বপক্ষে ও প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির বিপক্ষে। সমাজতন্ত্রীদের প্রতি তিনি ছিলেন সহানুভূতিশীল। উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর থেকেই তিনি ছিলেন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ঘোর বিরোধী। ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত ‘The Ugly American’ বইটির প্রত্যুত্তরে তিনি লেখেন ‘The Ugly Asian’। সেই সময় উপমহাদেশে বিশ্বযুদ্ধ, মন্বন্তর, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির তৎপরতা, সন্ত্রাসী আন্দোলন, অর্থনৈতিক মন্দা, হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব—সবকিছু মিলিয়ে কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষেই রাজনৈতিকভাবে নিস্পৃহ থাকা সম্ভব ছিল না। বাঙালি মুসলমানকে তিনি একটি অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ শ্রেণি হিসেবে দেখতেন, কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে নয়। তাদের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে তিনি সচেতন ছিলেন। তবে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ও সাম্প্রদায়িকতাকে তিনি ঘৃণার চোখেই দেখতেন।
ওয়ালীউল্লাহ অস্তিত্ববাদ, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন—তা অনেকেই বলেন। তবে তাঁর স্ত্রী অ্যান মেরির মতে, মার্ক্সবাদ, অস্তিত্ববাদ প্রভৃতি মতবাদ দ্বারা তিনি খুব যে প্রভাবিত ছিলেন তা না। তবে এসব বিষয়ে তাঁর পড়াশোনা ছিল গভীর। তিনি খুব বেশি হতাশ হয়েছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য দেখে। দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট ও আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে না পারলেও একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন। সবার মতোই তিনিও একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করেছেন, সাধ্যমতো টাকা পাঠিয়েছেন কলকাতায় মুক্তিযুদ্ধ তহবিলে। তাঁর সন্তানদের ধারণা, তাঁদের বাবার অকাল মৃত্যুর একটি কারণ দেশ নিয়ে দুশ্চিন্তা, আশঙ্কা ও হতাশা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি খুব বেশি উদ্বিগ্ন থাকতেন। পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক সারা দেশে নারকীয় নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের সংবাদে তিনি প্রতিনিয়ত মানসিকভাবে দগ্ধ হতেন। মুক্তিবাহিনীর যেকোনো সফলতায় উচ্ছ্বসিত হতেন। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, স্বাধীন বাংলাদেশ দেখার আগেই এক বুক হতাশা নিয়ে ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে নিজ বাসভবনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁর ছাত্রজীবনের বন্ধু পরবর্তীতে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, আবু সাঈদ চৌধুরী সৈয়দের মৃত্যুর সাত মাস পর তাঁর স্ত্রীকে একটা আধা সরকারি সান্ত্বনা বার্তা পাঠিয়েছিলেন। তাতে লেখা ছিল, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ওয়ালীউল্লাহর মাপের প্রতিভার সেবা গ্রহণ থেকে এক মুক্ত বাংলাদেশ বঞ্চিত হলো; আমাকে এটুকু বলার সুযোগ দিন যে, আপনার ব্যক্তিগত ক্ষতি বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষতি।’ খুব পরিতাপের বিষয় এই যে, তাঁর সন্তানেরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাননি।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ধার্মিক ছিলেন; কিন্তু ধর্মান্ধ ছিলেন না। কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য তাঁকে পিইএন পুরস্কার (১৯৫৫), উপন্যাসে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬১), আদমজী পুরস্কার (১৯৬৫), একুশে পদক (১৯৮৩, মরণোত্তর) প্রভৃতি সম্মাননা প্রদান করা হয়। তবে পুরস্কার ও সম্মাননা দিয়ে যেমন সবাইকে বিচার করা যায় না, তেমনি একজন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মে এক অনন্য উচ্চতায় মহীয়ান হয়ে আছেন। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন।