অভিবাসন নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আরেকটি পরাজয়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রয়টার্স ফাইল ছবি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রয়টার্স ফাইল ছবি।

আমেরিকায় বৈধ অভিবাসন সীমিত করার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরেকটি পদক্ষেপ আদালতে হোঁচট খেয়েছে। ‘পাবলিক চার্জ’ বলে পরিচিত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করলে গ্রিন কার্ড পাওয়া যাবে না বলে প্রশাসনিক নির্দেশনাটি স্থগিত করেছেন আদালত। 

ফুড স্ট্যাম্প, স্বাস্থ্য ও আবাসন সুবিধা নেওয়া যাবে না—ট্রাম্প প্রশাসনের এমন নির্দেশনা অভিবাসী প্রত্যাশীদের জন্য চরম উদ্বেগ নিয়ে আসে। নির্দেশনাটি ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। ১১ অক্টোবর তিনজন ফেডারেল বিচারক প্রশাসনিক নির্দেশনাটি স্থগিত করে রায় দিয়েছেন। এই রায়কে ট্রাম্প প্রশাসনের পরাজয় বলে মনে করা হচ্ছে। অভিবাসী গ্রুপগুলো আদালতের এ রায়কে নিজেদের বিজয় হিসেবে দেখছে। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনাটি কার্যকর করার জন্য নতুন উপায় খোঁজার কথা জানানো হয়েছে।
পারিবারিক অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে আগ্রাসী পদক্ষেপ ছিল এটি। পারিবারিক বন্ধন নয়, আমেরিকায় ইমিগ্রেশনের জন্য অর্থনৈতিক সামর্থ্যকেই এ নির্দেশনায় প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। অভিবাসনের দেশ আমেরিকায় এমন নির্দেশনায় অভিবাসী গ্রুপ এবং উদারনৈতিক মহল দ্রুত প্রতিবাদ জানায়। এ নিয়ে উদারনৈতিক রাজ্যগুলোতে একের পর এক মামলা করা হয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী নানা পদক্ষেপের বিপক্ষে ডেমোক্র্যাট দলের কোনো ঐক্যবদ্ধ জোরালো অবস্থান না থাকলেও বিচার বিভাগ বারবার এগিয়ে এসেছে। নতুন নির্দেশনা কার্যকর হওয়ার মাত্র চার দিন আগে নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়াশিংটন ডিসির দেওয়া এই রায় অভিবাসীদের মধ্যে স্বস্তি নিয়ে এসেছে।
নিউইয়র্কের ফেডারেল বিচারক জর্জ ড্যানিয়েলস তাঁর দেওয়া রায়ে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা অভিবাসন আইনকে একটি নতুন কাঠামো দিয়ে সংজ্ঞা দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। এই নির্দেশনাটি কার্যকর হওয়ার অনুমতি দিলে ‘আইন মেনে চলা লোকজন যারা আমেরিকায় উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় এসেছে, তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
জর্জ ড্যানিয়েলস বলেন, বিধিটি কার্যকর হলে লোকজনের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হবে। আইনগত প্রাপ্য সুবিধা গ্রহণে তারা ভয় পাবে। সমাজে অবদান রাখার জন্য নাগরিকদের এসব সুবিধা আইনগতভাবেই গ্রহণ করার পথ অবারিত করা আছে। প্রেসিডেন্টের নির্দেশনাটি ভীতি দেখিয়ে এসব সুবিধা গ্রহণ থেকে অভিবাসীদের নিরুৎসাহিত করবে বলে বিচারক তাঁর রায়ে উল্লেখ করেন।
স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর মার্কিন ইমিগ্রেশন সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কেন কুকিনেল্লি বলেন, আমেরিকায় বসতি স্থাপনকারী অভিবাসীদের আর্থিকভাবে সাপোর্ট করার বিষয়টি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসন এই প্রয়াসটি নিয়ে শেষ পর্যন্ত একটি আইনগত উদ্যোগ ও নীতিমালা তৈরি করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত বিচার বিভাগও বুঝতে সক্ষম হবে আমেরিকায় আসা অভিবাসীরা নিজেদের সামর্থ্যে চলার বিষয়টি আইনের মধ্যেই আছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেসসচিব স্টেফানি গ্রিশাম বলেছেন, বিচারকদের এসব রায় ‘অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক’।
নিউইয়র্কে জেলা আদালতের বিচারক জর্জ ড্যানিয়েলস দেশব্যাপী আদেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। সান ফ্রান্সিসকোয় তৃতীয় জেলা আদালতের বিচারক বলেছেন, প্রশাসন নবম সার্কিট কোর্ট অব আপিলের এখতিয়ারের মধ্যে এই আইন প্রয়োগ করতে পারে না।
বিচারক ড্যানিয়েলস তাঁর আদেশে কেন ‘পাবলিক চার্জ’–এর সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হলো বা কেন পরিবর্তনের প্রয়োজন হলো, তা পর্যাপ্তভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, কঠোর পরিশ্রম এবং জীবনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সমৃদ্ধি ও সাফল্যের যে আমেরিকান স্বপ্ন—তাঁর সঙ্গে অভিবাসনসংক্রান্ত প্রশাসনিক নির্দেশটি সাংঘর্ষিক ।
মেক দ্য রোড নিউইয়র্ক নামের একটি একটি অভিবাসী গ্রুপের সহনির্বাহী পরিচালক জ্যাভিয়ার ভালদেস বিচারক ড্যানিয়েলের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, অভিবাসন ব্যবস্থায় বর্ণবাদ চাপিয়ে দেওয়ার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ কৌশলটি আজকের সিদ্ধান্তের ফলে বড় পরাজয়ের নজির হয়ে থাকবে।