'সুপারহিরোরা' আসছে বন্দুক হামলা রুখতে

‘ইগনাইটেড’ বই হাতে অঙ্কনশিল্পী ফিলিপ ব্রিয়োনেস। ছবি: এএফপি
‘ইগনাইটেড’ বই হাতে অঙ্কনশিল্পী ফিলিপ ব্রিয়োনেস। ছবি: এএফপি

বন্দুকধারীর নির্বিচার গুলিতে মানুষ হত্যার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় মাথাব্যথা। হরহামেশাই দেশটিকে এই বেদনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এই বন্দুক হামলার বিরুদ্ধে প্রচার ও লড়াইয়ের নতুন উপায় খুঁজে বের করেছেন দুই মার্কিন লেখক। কমিক বইয়ের সুপারহিরোদের মাধ্যমে তুলে আনা হচ্ছে বন্দুক হামলা রুখে দেওয়ার ঘটনা।

ওয়াল্ট ডিজনির মার্ভেল এবং টাইম ওয়ার্নারের ডিসি কমিকের সাবেক লেখক মার্ক ওয়াইড ও কেওয়ানজা ওসাজইয়েফো ‘ইগনাইটেড’ নামের কমিক সিরিজ লিখছেন। এটার প্রকাশক হিসেবে রয়েছেন ফরাসি প্রকাশনা সংস্থা হিউম্যানোয়েডস অ্যাসোসিয়েটস।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিনিক্স ও অ্যারিজোনা স্কুলের বন্দুকধারীর হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া কাল্পনিক চরিত্রের ছয় কিশোর-কিশোরীর গল্প থাকছে এই কমিক বইয়ে। গভীর শোক ও বেদনার মধ্যে এই ছয়জন তৈরি করবে তাদের সুপার পাওয়ার। তাদের সন্ত্রাসের বিশ্বে তারা এই নতুন খুঁজে পাওয়া শক্তিকে ব্যবহার করে ভিন্ন কিছু করার সুযোগ হিসেবে দেখবে। তা না হলে কোনো কারণ ছাড়াই এই বেদনা তাদের বহন করে চলতে হবে বলে মনে করবে তারা।

সত্যিকারের বন্দুক হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষদের কথা বলতে দেওয়ার সুযোগের পাশাপাশি ‘ইগনাইটেড’ আরেকটি সুযোগ তৈরি করছে লেখকদের জন্য। ক্যাপটেন আমেরিকা, এক্স-ম্যান, ব্যাটম্যান এবং সুপারম্যান লেখার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ‘ইগনাইটেড’র লেখক ওয়াইড এবং ওসাজইয়েফো যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের এই ইস্যু এবং এর সংবেদনশীলতার মাত্রাকে শনাক্ত করার সুযোগ পাচ্ছেন।

‘ইগনাইটেড’ কমিক বইয়ের লেখক মার্ক ওয়াইড। ছবি: এএফপি
‘ইগনাইটেড’ কমিক বইয়ের লেখক মার্ক ওয়াইড। ছবি: এএফপি

কমিকসের প্রথম কয়েকটি ইস্যুতে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, অভিবাসনবিষয়ক পুলিশের লাতিনো পরিবার ও মিলিশিয়াতে অভিযান, শিক্ষকদের অস্ত্র সাজে সজ্জিত হতে অতি রক্ষণশীলদের বারবার আহ্বানের বিষয়গুলো আনা হয়েছে।
কমিক বইটি প্রসঙ্গে লেখক ওয়াইড (৫৭) বলেছেন, ‘ আমার মতে, “ইগনাইটেড” বোঝাতে চেয়েছে বিশ্ব ভিন্ন জায়গা, তারা আসলে ঠিক সুপারহিরো নয়। আমি লাখ লাখ সুপারহিরো কমিকস লিখেছি। সেগুলো ছিল, মুখোশ ও কেপ পরা শক্তির অধিকারী সুপারহিরো আর সুপার ভিলেন।’
তিনি জানান, ‘ইগনাইটেড’–এ ভিলেনরা হচ্ছে চরমপন্থী এবং ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের (এনআরএ) গান লবি। এখানে হিরোরা অনেক বেশি মানুষের পর্যায়ে এবং তাদের কার্যক্রমও থাকবে বাস্তবসম্মত।

কমিক বইটির প্রকাশনা সংস্থা হিউম্যানোয়েডস অ্যাসোসিয়েটস ১৯৭৪ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা একমাত্র ফরাসি ভাষার কমিক বই প্রকাশক, যারা মার্কিন বাজারে সফলতার সঙ্গে প্রবেশ করতে পেরেছে। ১৯৯৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে এটি যুক্তরাষ্ট্রে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
প্রকাশনা সংস্থাটির স্বত্বাধিকারী ফেব্রিস গিগার বলেছেন, সুপারহিরো কমিকস তাঁদের জন্য নতুন বিষয়। বন্দুক হামলার বিষয়টিকে এই বইয়ে অন্য ভঙ্গিতে প্রকাশ করাই লক্ষ্য।

‘ইগনাইটেড’–এর চরিত্র আঁকছেন ফিলিপ ব্রিয়োনেস। ছবি: এএফপি
‘ইগনাইটেড’–এর চরিত্র আঁকছেন ফিলিপ ব্রিয়োনেস। ছবি: এএফপি

‘ইগনাইটেড’ সিরিজটি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রকাশ করা হবে। মাসিক কমিক বই হিসেবে এটি প্রকাশ হবে।

লেখক ওয়াইড স্বীকার করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের কমিক বইগুলো করপোরেট মালিকানাধীন। তাদের রাজনৈতিক বিষয় বিবেচনায় রেখে ইস্যু পরিবেশন করতে হয়। ‘ইগনাইটেড’–এর মতো ইস্যু করপোরেট ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। সে হিসেবে তুলনামূলক ছোট প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাঁরা এই ক্ষেত্রে ভিন্ন কিছু করে ধাক্কা দিতে পারবেন বলে মনে করেন। তিনি বলেন, এটা সময়োপযোগী বই। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে যে উন্মাদনা শুরু হয়েছে এই বই সেটাকে উপজীব্য করেই হচ্ছে।

‘ইগনাইটেড’–এর জন্য ছবি এঁকেছেন ফিলিপ ব্রিয়োনেস। তিনি ডিজনিতে এক দশক কাজ করেছেন। তিনি ‘ইগনাইটেড’–এ যুক্তরাষ্ট্রের বন্দুক হামলার মতো রাজনৈতিক এবং ট্যাবুকে এভাবে উপস্থাপনের সিদ্ধান্তকে সাহসী উল্লেখ করে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাস করে দেখছি, এখানে এটাকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিষয়টি কৌশলের সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি এমন বিষয় নিয়ে কিছু করতে চাইতাম না।’ তিনি আরও বলেন, মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কথা বলা, আর এ ক্ষেত্রে কমিক সবচেয়ে ভালো পথ।