আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন ২o২o-এর প্রস্তুতি

বিশ্ব ইতিহাসে একমাত্র বাংলাদেশেরই রয়েছে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাস। বিশ্বে আর একটি দেশও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা মাতৃভূমির স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং মাতৃভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে, মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। আমাদের ভাষা বাংলা ভাষা। বাংলার মানুষের বাঁচার মন্ত্র ও শক্তি আলো ছড়ায় তার ভাষার ক্রমবিস্তীর্ণমান শ্বাসত সুষমায় ও প্রাণ অতল ভালোবাসায়। স্বদেশভূমি বাংলাদেশের প্রতি প্রবাসীদের রয়েছে অতি সংবেদনশীল ভালোবাসা। বাংলা ভাষায় বিশ্ব বাঙালি তাদের যাপিত জীবনকে আত্মিকবন্ধনে সমাদৃত করে যাচ্ছে বিশ্ব দরবারে। বাংলা আমাদের চেতনার প্রতীক।

নিঃসন্দেহে এই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি শ্রদ্ধা, আদর-যত্ন, বিকাশ-উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় সব বাংলা ভাষাভাষীর আবেগতাড়িত বিবেকবোধের এক নিরবচ্ছিন্ন অংশ। দলমতের ভিন্নতা থাকলেও একই আবেগ, একই উদ্দীপনা, একই চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে মহান একুশে উদ্‌যাপনে বাঙালির কোনো মতদ্বৈধতা নেই। একুশের প্রতি এ যেন এক পরম দায়বদ্ধতা। এ দায়বদ্ধতা যেমন ভাষা শহীদদের প্রতি তেমনি মাতৃভাষা বাংলা ও মাতৃভূমির প্রতি। প্রবাস জীবনে যে যেখানেই থাকুক বাংলাকে কেউই ভুলতে পারে না। শত দুঃখ-কষ্ট আর নিঃসঙ্গতা কিংবা আনন্দ মহানন্দের চিত্ত বিনোদনের পরম সারথি হয়ে ভেসে বেড়ায় প্রবাসীদের অন্তরাত্মায়।

একটি জাতির মৌলিক মূল্যবোধ ও অস্তিত্ব তার নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যেই নিহিত। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান আজও উজ্জীবিত করে বাংলা ভাষাভাষীদের জীবন ও মনকে। ভাষার মসলিন ঐশ্বর্য নির্মাণ করে ‘এক পৃথিবী জোড়া গান’ বাংলার স্রোতের ধারা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশিদের বিশ্বদোলার সব চারণভূমিতে। তাই তো প্রবাসেও বাঙালিরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চায় থেমে নেই। যান্ত্রিক জনজীবনের মধ্যেও প্রবাস বিনোদনের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নানা উৎসব উদ্‌যাপনের পাশাপাশি বইমেলা, বাংলা সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে-যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। ইউনেসকো কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি বাংলা ভাষা ও তার সমৃদ্ধ সাহিত্য ভান্ডারকেও সমভাবে করেছে সমাদৃত। তাই তো আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসি এলাকায় প্রায় চল্লিশ হাজার বাঙালি অধ্যুষিত বিশাল কমিউনিটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন ২o২o।

এই সাহিত্য সম্মেলনের উদ্যোক্তা বৃহত্তর ওয়াশিংটনের অন্যতম সাহিত্য সাময়িকী ও প্রকাশনা সংস্থা ‘স্বদেশ শৈলী’ হলেও আয়োজন সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন বাংলা ভাষাভাষী নন্দন পিপাসু সুধীজন, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, কবি-সাহিত্যিক এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। এই সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, সেমিনার, প্রবন্ধ পাঠ, কবি-সাহিত্যিক-পাঠক ও প্রকাশকদের মিলন মেলা। সর্বোপরি দু দিনব্যাপী সম্মেলনস্থলে বসবে বাংলা ভাষার বিভিন্ন গ্রন্থের মেলা।

সম্মেলনে অংশ নিতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ওপর পাণ্ডিত্যপূর্ণ মার্কিন স্কলারসহ বিভিন্ন সাহিত্য অনুরাগীদের সমাগম ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের প্রবাসে বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোরদের জন্য ছড়া, কবিতা ও গল্প বলার বিশেষ প্রতিযোগিতার পাশাপাশি শিশুদের সৃজনশীলতা বিকাশে ভাষা ও সাহিত্যের গুরুত্ব বিবেচনায় বিশেষ সেমিনার ও ওয়ার্কশপের আয়োজন ইতিমধ্যে সর্বমহলে প্রশংসা পাচ্ছে। প্রবাসী কবিদের কবিতা সংকলন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য ঘরানার পাশাপাশি বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক একাডেমির বর্ণাঢ্য পরিবেশনা উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের নির্মল আনন্দ দেবে। বাংলা ভাষার ভৌগোলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল যদিও ক্ষুদ্র, তারপরও দু দিনব্যাপী এ সম্মেলনে প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের মূল ধারার চর্চাকারীদের আমন্ত্রণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে স্বরচিত কবিতা, ছড়া, গল্প এমনকি বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নিতে অত্যাধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ২o২o সালের ২১ ও ২২ মার্চ। ইতিমধ্যে সম্মেলনের জন্য ওয়াশিংটন ডিসি এলাকায় হোটেল কমফোর্ট ইন বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন সুন্দর, সার্থক ও যথার্থ হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।