আমেরিকার রাজনৈতিক বিপ্লব ভাসিয়ে দেবে ট্রাম্পকে: স্যান্ডার্স

ডেমোক্র্যাট নেতা বার্নি স্যান্ডার্সের নিউইয়র্কের সমাবেশে সমর্থকেরা। কুইনসব্রিজ পার্ক, লং আইল্যান্ড, নিউইয়র্ক, ১৯ অক্টোবর। ছবি: সংগৃহীত
ডেমোক্র্যাট নেতা বার্নি স্যান্ডার্সের নিউইয়র্কের সমাবেশে সমর্থকেরা। কুইনসব্রিজ পার্ক, লং আইল্যান্ড, নিউইয়র্ক, ১৯ অক্টোবর। ছবি: সংগৃহীত

বহুল আলোচিত ডেমোক্র্যাট নেতা বার্নি স্যান্ডার্স নিউইয়র্কে বিশাল সমাবেশে বলেছেন, আমেরিকার রাজনৈতিক বিপ্লব প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভাসিয়ে দেবে এবং দেশে দীর্ঘকালীন কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

গতকাল শনিবার (১৯ অক্টোবর) উদারনৈতিক নগরী হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের কুইনসব্রিজ পার্কে দেওয়া উত্তাল জনসভায় বার্নি স্যান্ডার্স এসব কথা বলেন।

জনসভায় আমেরিকার রাজনীতির বর্তমান তারকা ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস ওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ বার্নি স্যান্ডার্সকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন। অন্য গুরুত্বপূর্ণ বক্তাদের মধ্যে ছিলেন হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা পরিচালক মাইকেল মোর, বার্নি স্যান্ডার্সের স্ত্রী জেন স্যান্ডার্স এবং নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট নেতা টিফেনি কোবান।

ডেমোক্র্যাট দলের হয়ে আগামী নির্বাচনে আবার প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার দৌড়ে নেমেছেন ভার্মন্ট থেকে নির্বাচিত সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। ৭৮ বছর বয়সী ডেমোক্রেটিক দলের এ নেতা তরুণ ডেমোক্র্যাটদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। গত নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলে তৃণমূলের সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছেন অতি উদারনৈতিক বক্তব্য রেখে। শেষ পর্যন্ত হিলারি ক্লিনটনের কাছে দলের প্রাইমারিতে হেরে গেলেও নিজের সমর্থকদের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা এখনো চরমে। গত নির্বাচনে বার্নি সমর্থকেরা হিলারি ক্লিনটনকে শেষ মুহূর্তে ব্যাপকভাবে সমর্থন না করার অভিযোগ রয়েছে।

বার্নি স্যান্ডার্সের জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকে লোকজনকে কুইনসব্রিজ এলাকায় জমায়েত হতে দেখা যায়। বহু অভিবাসীর নগরী নিউইয়র্কের সব জাতিগোষ্ঠীর লোকজনকে দেখা গেছে এ জনসভায়। বেশ কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি আমেরিকান বার্নি স্যান্ডার্সের ব্যানার হাতে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। জনসভায় দেওয়া বক্তব্য নিউইয়র্কের জনপ্রিয় কংগ্রেস ওম্যান ওকাসিও কর্টেজ নিজের রাজনৈতিক উত্থানের জন্য বার্নি স্যান্ডার্স তাঁর প্রেরণার উৎস বলে মন্তব্য করেন। স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, শিক্ষা, ন্যূনতম মজুরি নিয়ে বার্নি স্যান্ডার্সের আহ্বান নিজের রাজনৈতিক চেতনাকে জাগ্রত করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কেউ যখন আমেরিকার চলমান ব্যবস্থাকে চ্যলেঞ্জ করছে না, তখনই বার্নি স্যান্ডার্স রাজনৈতিক মাশুলের দিকে না চেয়ে তা করেছেন। ওকাসিও বলেন, বার্নি এসব জনপ্রিয় বিষয় বলে করেননি, করেছেন অব্যবস্থার বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই করার জন্য।

হাজারো জনতার মুহুর্মুহু স্লোগানের মধ্যে বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, এমন উত্তাল জনস্রোত দেখলে আমার আর কোনো সন্দেহ থাকে না, আমেরিকার রাজনৈতিক বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে। এ জনজোয়ার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভাসিয়ে বিদায় করবে এবং দেশের দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

নিউইয়র্কের জনসভায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিপহপ শিল্পী অনিক খান সংগীত পরিবেশন করেন। আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ ও বার্নি স্যান্ডার্সের সঙ্গে অনিক খান। ছবি: সংগৃহীত
নিউইয়র্কের জনসভায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিপহপ শিল্পী অনিক খান সংগীত পরিবেশন করেন। আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ ও বার্নি স্যান্ডার্সের সঙ্গে অনিক খান। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনী প্রচারের মাঝপথে ১ অক্টোবর বার্নি স্যান্ডার্স হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। সন্দেহ দেখা দেয়, আগামী নির্বাচনে এ বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কি না। ডেমোক্রেটিক দলের অন্য উদারনৈতিক প্রার্থী এলিজাবেথ ওয়ারেনের পক্ষে হঠাৎ করে জনমত বাড়তে থাকে। অনেকেই মনে করছেন নিউইয়র্কের জনসভায় আলেজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজের সমর্থনের পর বার্নি স্যান্ডার্স আবারও উদারনৈতিক সমর্থকদের মধ্যে ঝড় তুলবেন। ডেমোক্রেটিক দলের অন্য তারকা কংগ্রেস ওময়ান ইহলান ওমর এর মধ্যেই বার্নি স্যান্ডার্সকে সমর্থন করেছেন। যদিও আমেরিকাজুড়ে শ্বেতাঙ্গ ডেমোক্র্যাট আমেরিকানদের কাছে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখনো এগিয়ে আছেন। জনসভা শেষে আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও বলেছেন, শেষ পর্যন্ত আমরা সবাই একজোট হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে চাই।

উৎফুল্ল জনতাকে নিজের স্বামীর শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে জেন স্যান্ডার্স বলেন, বার্নি শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত আমেরিকার কর্মজীবী মানুষের স্বার্থে তাঁর আজীবনের লালিত লড়াইকে চালিয়ে নেওয়ার জন্য। চলচ্চিত্র নির্মাতা মাইকেল মোর বলেছেন, একমাত্র হৃদ্‌রোগের কথা আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। বার্নি স্যান্ডার্স আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ওয়াল স্ট্রিটের হৃদ্‌রোগ হবে।

বার্নি স্যান্ডার্সের তৃণমূল আন্দোলন ডেমোক্রেটিক দলের অন্য যেকোনো প্রার্থীর চেয়ে বেশি তহবিল সংগ্রহ করেছে এ পর্যন্ত। এ বছরের থার্ড কোয়ার্টারে তাদের নির্বাচনী তহবিলে জমা হয়েছে ২ কোটি ৫৩ লাখ ডলার (২৫ দশমিক তিন মিলিয়ন)।

নিউইয়র্কের জনসভায় যোগদান শেষে ডেমোক্র্যাট অ্যাক্টিভিস্ট জোবাইদা বলেছেন, ২৫ হাজারেরও বেশি লোকের সমাগম ছিল। বার্নি স্যান্ডার্সের জনসভা থেকে ইতিবাচক চেতনা নিয়ে ফিরেছেন জানালেন। ব্রুকলিন থেকে যোগ দেওয়া কমিউনিটির সংগঠক শাহানা হানিফ বলেছেন, ‘বার্নি স্যান্ডার্স আমাদের কর্মজীবী মানুষের অধিকারের জন্য কথা বলে আসছেন। তাঁর সমর্থনে আমরা সংগঠিত হতে থাকব। জনাকীর্ণ জনসভায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিপহপ শিল্পী অনিক খান সংগীত পরিবেশন করেন। জনসভায় যোগ দেওয়া মিনহাজ আহমেদ জানালেন, আমেরিকার মূলধারার বিশাল রাজনৈতিক জনসভায় অনিক খানের পারফরম্যান্সের সময় নিজের মধ্যে ভিন্ন অনুভূতি কাজ করেছে। আমেরিকার বর্তমান কঠিন সময়ে বার্নি স্যান্ডার্সের জাগরণের আহ্বান আমাদের নানাভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।