রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন নিয়ে তোপের মুখে জাকারবার্গ

মার্ক জাকারবার্গ
মার্ক জাকারবার্গ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মিথ্যাচার–সংবলিত রাজনৈতিক প্রচারণার বিজ্ঞাপন প্রকাশ এবং কেমব্রিজ অ্যনালিটিকার কেলেঙ্কারির ঘটনার ব্যাপক জেরার সম্মুখীন হলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের আর্থিক সেবাবিষয়ক কমিটিতে শুনানির সময় তাঁকে এই জেরার মুখে পড়তে হয়।

২০১৮ সালের অন্যতম বড় রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি ছিল যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কেলেঙ্কারির ঘটনা। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ফেসবুক থেকে তারা প্রায় ৯ কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য অনৈতিকভাবে সংগ্রহ করেছে। এ তথ্য রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে অ্যানালিটিকা। এ তথ্য প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘটনায় ২০১৮ সালের এপ্রিলে মার্ক জাকারবার্গকে কংগ্রেসের শুনানিতেও অংশ নিতে হয়েছিল। আবারও একই বিষয় নিয়ে বুধবার তোপের মুখে পড়লেন তিনি।

ফেসবুকের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা লিবরা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের উদ্বেগ দূর করতে ওই কমিটির শুনানিতে গিয়েছিলেন মার্ক জাকারবার্গ। এ সময় ডেমোক্র্যাটদের কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কোর্তেজ বলেন, ‘লিবরা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার (মার্ক জাকারবার্গ) অতীত সম্পর্কে আলোকপাত করা দরকার। আমাদের গণতন্ত্রের প্রতি আপনার প্রতিষ্ঠানের যে আচরণ, সেটা দেখা দরকার।’

প্রতিনিধি পরিষদের এই সদস্য জাকারবার্গকে জিজ্ঞেস করেন, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার এই কেলেঙ্কারির ঘটনা আপনি কবে জেনেছিলেন? এর উত্তরে জাকারবার্গ বলেন, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে এ–সংক্রান্ত খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর এ সম্পর্কে জেনেছেন তিনি। তবে সূত্র বলেছে, প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ তথ্য জানতেন।

>

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে শুনানি
রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে মিথ্যা তথ্য থাকলে বিজ্ঞাপন অপসারণ করা হবে কি না, এ প্রশ্নের উত্তর দেননি জাকারবার্গ

এই প্রথম অ্যানালিটিকার তথ্য হাতিয়ে নেওয়া তারিখ নিয়ে মুখ খুললেন জাকারবার্গ। এর আগে তিনিসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও তাঁরা মুখ খোলেননি।

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা সম্পর্কে ২০১৫ সালে খবর প্রকাশ করেছিল যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম গার্ডিয়ান। এ প্রসঙ্গে কোর্তেজ বলেন, জাকারবার্গের দলের এমন কেউ কি আছেন, যিনি ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে গার্ডিয়ান পত্রিকায় খবর প্রকাশ হওয়ার আগে থেকে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা সম্পর্কে জানতেন?

এ প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে মার্ক জাকারবার্গ বলেন, ‘আমি এই প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতাম। কিন্তু কীভাবে তারা ফেসবুক থেকে তথ্য নিয়ে কাজ করছে, সেটা জানতাম না।’

রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে ফেসবুক কীভাবে সত্যতা যাচাই করে, সে বিষয়েও প্রশ্নের মুখ পড়তে হয়েছে জাকারবার্গকে। কোর্তেজ তাঁকে প্রশ্ন করেন, তিনি যদি নির্বাচনের ভুল তারিখসহ একটি বিজ্ঞাপন ফেসবুককে দেন, তাহলে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে?

এর উত্তরে জাকারবার্গ বলেন, ওই বিজ্ঞাপনটি যদি সহিংসতা বা উত্তেজনা সৃষ্টি করে, তাহলে বিজ্ঞাপনটি সরিয়ে নেবে ফেসবুক। তবে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে কোনো মিথ্যাচার থাকলে সেই বিজ্ঞাপন অপসারণ করা হবে কি না, এ প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি।

সাম্প্রতিক সময়েই এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের বিজ্ঞাপন থেকে তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন সম্পর্কে মিথ্যাচার করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগের পরও বিজ্ঞাপনটি নামিয়ে ফেলেনি ফেসবুক।

এ প্রসঙ্গে কোর্তেজ বলেন, রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে সত্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ফেসবুকের যে ঘাটতি রয়েছে, তা কি আপনি লক্ষ করেছেন? এ ছাড়া কট্টর ডানপন্থীদের সঙ্গে জাকারবার্গের নৈশভোজের বিষয়টিও সামনে এনেছেন কোর্তেজ।