আইএসের বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াই চায় যুক্তরাষ্ট্র

আবু বকর আল-বাগদাদি। রয়টার্স ফাইল ছবি
আবু বকর আল-বাগদাদি। রয়টার্স ফাইল ছবি

সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জোরালো সম্মিলিত লড়াই চায় বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এক অভিযানে আইএস প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি নিহত হওয়ার পর গতকাল সোমবার এ কথা বললেন ওই মার্কিন কর্মকর্তা।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাগদাদির মৃত্যুর ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। তবে তাঁরা এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বর হামলাকারী এবং বেশির ভাগ মুসলিমকে ভীতসন্ত্রস্ত রাখা আইএস সিরিয়াসহ অন্যদের জন্য এখনো হুমকি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই কর্মকর্তা বলেন, ৬ অক্টোবর সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার মানে এই নয় যে ওয়াশিংটন আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই থামিয়ে দিচ্ছে।

ওই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইএসের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে আমরা সমাপ্তি টানতে যাচ্ছি—বিষয়টি মোটেও তা নয়। এই উদ্যম অব্যাহত থাকবে।’

এই অভিযানের বিষয়ে আলোচনার জন্য বিদেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আগামী ১৪ নভেম্বর ওয়াশিংটনে এক বৈঠকে মিলিত হবেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের পুনরুত্থান রোধে যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অবশিষ্ট আইএসকে ধ্বংস করতে ও এর বৈশ্বিক আকাঙ্ক্ষা ব্যর্থ করতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ওয়াশিংটন বৈঠকে সিরিয়ার উত্তর–পূর্বে সাম্প্রতিক অভিযান এবং ওই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বৈঠকে আলোকপাত করা হবে।

কংগ্রেস ও নিজ দল রিপাবলিকানদের তোপের মুখে পড়ে সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা শিথিল করেছেন ট্রাম্প। কংগ্রেস ও কয়েকজন রিপাবলিকান নেতা বলেছেন, কুর্দিদের জন্য দীর্ঘ সময়ের হুমকি তুর্কি বাহিনী সেনা প্রত্যাহারে ট্রাম্পের ঘোষণার কারণে ৯ অক্টোবর কুর্দিদের ওপর হামলা চালায়। অথচ কুর্দিরা ২০১৪ সাল থেকে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

যদিও বাগদাদি নিহত হওয়ার অভিযানের কারণে সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারে তাঁর সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হবে না বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প; তবে যখন প্রতিনিধি পরিষদে তাঁর অভিশংসনবিষয়ক তদন্ত চলছে, সেই সময়ে বাগদাদি নিহত হওয়ার ঘটনায় নিঃসন্দেহে লাভবান হবেন ট্রাম্প।

গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী সিরিয়ায় অভিযান চালিয়ে বাগদাদিকে একটি সুড়ঙ্গের মধ্যে কোণঠাসা করলে তিনি তাঁর তিন সন্তান নিয়ে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহত হন।

গতকাল সোমবার ট্রাম্প বলেন, অভিযানের সময়ে ধারণ করা ভিডিওর কিছু অংশ তিনি প্রকাশ করতে পারেন। ভিডিওতে বাগদাদির বিরুদ্ধে অভিযানের সময় সেনাদের মাথায় স্থাপন করা ক্যামেরা থেকে পাওয়া দৃশ্য এবং এরিয়াল ফুটেজ রয়েছে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

গত রোববার ট্রাম্প বলেন, অভিযানে মারা যাওয়ার সময় বাগদাদি ‘ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করছিলেন এবং কাঁদছিলেন’। অভিযানটি প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তার শীর্ষ লক্ষ্য পূরণ করেছে বলে তিনি জানান।

তিনজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ইসলামি রীতিনীতি পালনের পর বাগদাদির মরদেহ সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বাগদাদি নিহত হওয়ার ঘটনায় আইএসকে বড় ধাক্কা দেওয়া গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। তবে এই জঙ্গিগোষ্ঠীকে পুরোপুরি নির্মূল করতে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে বলে তিনি জানান।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, দায়েশের (আইএস) হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংস কর্মকাণ্ডের সমাপ্তি টানতে যুক্তরাজ্য যৌথ অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করব।

মিসর বাগদাদি নিহত হওয়ার ঘটনাকে জঙ্গিবাদ নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ ইরানের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রই আইএস তৈরি করেছে।

বাগদাদিকে ধরার জন্য বহু বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। বাগদাদির জন্য আড়াই কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল দেশটি। বাগদাদিকে ধরতে হন্যে হয়ে খুঁজছিল বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। কিন্তু কিছুতেই তাঁর অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। তবে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। ওই সময় বাগদাদির শীর্ষ সহযোগী ইসমাইল আল-ইথাবি গ্রেপ্তার এড়াতে আইএস প্রধানের আত্মগোপনের কৌশল সম্পর্কে ইরাকের গোয়েন্দা বাহিনীকে জানান। সেই সূত্র ধরেই ইরাকি গোয়েন্দারা বাগদাদির অবস্থান শনাক্ত করেন।