সিলেটে রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৯ সালের ৫ নভেম্বর তিন দিনের এক সংক্ষিপ্ত সফরে সিলেট সফর করেছিলেন। বাংলা বর্ষপঞ্জিকা তথ্যমতে সময়টা ছিল ১৩২৬ বঙ্গাব্দ। তাঁর জন্ম সাল ছিল ১৮৬১ সালে, বাংলা বর্ষপঞ্জিকা মতে ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বাংলা।
রবীন্দ্রনাথ বিশ্বের প্রায় সবগুলো বড় শহরে ঘুরেছেন। ভ্রমণপিপাসু মনের অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯১৩ সালে তিনি গীতাঞ্জলি বইয়ের জন্য নোবেল পুরস্কার পান। এ ঘটনার ছয় বছর পরে কবিগুরু সিলেট সফর করেছিলেন। ৫ থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সিলেটে অবস্থান করেন। অবশ্য এই সিলেট সফরের পেছনে সিলেটের সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা মানুষের আগ্রহ ছিল প্রচুর।
কবির কাছে সিলেট সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে বারবার তারবার্তা পাঠালেও তিনি তাতে সাড়া দিতে একটু দ্বিধান্বিত ছিলেন। শরীরটা ভালো যাচ্ছে না, এমন অজুহাত ছাড়াও তিনি তৎকালীন সময়ের যাতায়াত ব্যবস্থা দুর্গম ও অপ্রতুলতার বিষয়টা সামনে এনেছিলেন। নিজের বয়স বাড়ার কথাটা স্মরণ করিয়ে দিয়ে অপারগতার কথা উল্লেখ করেছিলেন আপত্তি পত্রে।
এমনিতে সিলেট একটা সীমান্ত শহর। এর তিন দিক ঘিরে রেখেছে ভারতীয় সীমান্ত দেয়াল। যদিও সেই সময়ে সিলেট আসামের একটা অংশ ছিল কিন্তু সিলেট অঞ্চলকে তিন দিকে ঘিরে রাখার ভৌগোলিক নমুনা হলো—উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য এবং খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়। সিলেটের দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং পূর্বে আসামের করিমগঞ্জ ও কাছাড় জেলা। সিলেট থেকে ওই সব অঞ্চলে যাতায়াতের ব্যবস্থা তখন খুব একটা সহজসাধ্য ছিল না। রবীন্দ্রনাথ যখন সিলেট আসেন, সে সময়ে সিলেটের সুরমা নদীর ওপর কিনব্রিজ নির্মিত হয়নি। সিলেট-শিলং রাস্তা ছিল না। কিন্তু শৈল শহর হিসেবে শিলং প্রসিদ্ধ একটি স্থান ছিল। শেষ দিকে কবিগুরু প্রায়ই শিলং আসতেন। সাহিত্যিক মৈত্রী দেবীর আমন্ত্রণেও কয়েকবার তিনি শিলং এসেছিলেন।
কবিগুরু তখন কলকাতা থেকে গুয়াহাটি হয়ে শিলংয়ে আসা-যাওয়া করতেন। কিন্তু সিলেট থেকে শিলং যাতায়াতের পথ সহজসাধ্য ছিল না। সিলেটের উত্তর দিকের খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের বৃষ্টিবহুল চেরাপুঞ্জি পার্বত্য অঞ্চল পাড়ি দিতে হতো ঘোড়ার গাড়িতে। অথবা সেই পাহাড়ি ঢালু পথ ভারবাহী মানুষের কাঁধের ওপর ভর করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবে যাতায়াতে অভ্যস্ত ছিলেন না। তাঁর আপত্তি ছিল সেখানেই। কিন্তু সিলেটের ব্রাহ্ম সমাজের টেলিগ্রামে পাঠানো সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিতে অপারগতা জানিয়ে বসলেন। সিলেটের বোদ্ধা সমাজের কাছে এটা একটা বেদনাদায়ক বিষয়ে পরিণত হলো। তখন সিলেট মহিলা সমিতি এবং আঞ্জুমানে ইসলামিয়া ও আরও কয়েকটি সংগঠন রবীন্দ্রনাথের কাছে তারবার্তা পাঠিয়ে সিলেটী জনমানুষের আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় আনার বিনীত অনুরোধ জানালেন। শেষ পর্যন্ত সাড়া দিলেন। কবি রাজি হলেন, তিনি সিলেট সফর করবেন এবং তারিখ ঠিক হলো ১৯১৯ সালের নভেম্বরে। ওই সময় তিনি অবকাশ যাপনের উদ্দেশ্যে শিলংয়ে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু শিলং থেকে সরাসরি সিলেট আসা সম্ভব নয় বলে গুয়াহাটি ফিরে গেলেন কবিগুরু। সেখান থেকে রেলযোগে লামডিং বদরপুর এবং করিমগঞ্জ হয়ে কুলাউড়া জংশন পৌঁছান ৪ নভেম্বর রাতে।
সফরে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ছিলেন কবির একমাত্র ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী। সিলেট আসার প্রাক্কালে গুয়াহাটি শহরেও কবিকে এক বিশাল নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সিলেট শহরে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে অভ্যর্থনা পরিষদ গঠন করা হয়েছিল। তখন সেই পরিষদের সভাপতি মনোনীত হয়েছিলেন শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিক খান বাহাদুর আবদুল মজিদ সি আই ই। লোকে তাঁকে কাপ্তান মিয়া হিসেবেই ডাকতেন। পরবর্তীতে তিনি আসাম প্রাদেশিক পরিষদে শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন। সিলেট থেকে একটি প্রতিনিধিদল আসামের বদরপুর পর্যন্ত গিয়েছিলেন কবিকে বরণ করে নিয়ে আসার জন্য। রাতে ট্রেন কুলাউড়ায় পৌঁছানোর কারণে কবি রাতে কুলাউড়ায় থেকে যান। পাঁচ নভেম্বর সকালে কবি ও তাঁর সফর সঙ্গীদের নিয়ে ট্রেন সিলেট রেলস্টেশনে পৌঁছালে কবিকে রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তখন খান বাহাদুর সৈয়দ আবদুল মজিদ, রায়বাহাদুর সুখময় চৌধুরী, তৎকালীন ভাইসরয়ের কাউন্সিল অব স্টেটসের সদস্য মৌলভি আবদুল করিম ছাড়াও রায়বাহাদুর প্রমোদ চন্দ্র দত্ত ও সিলেট মহিলা সমাজের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন নলিনী বালা চৌধুরী। ওই সময় সিলেটের প্রখ্যাত পরিবারগুলোর ভেতরে মজুমদার বাড়ি, কাজী বাড়ি, দস্তিদার বাড়ি ছাড়াও এহিয়া পরিবারের সদস্যরা স্টেশনে উপস্থিত থেকে কবিকে বরণ করেছিলেন। স্কুল ও কলেজের ছাত্র-শিক্ষকেরা উপস্থিত হয়েছিলেন রেলস্টেশনে। কিন্তু তখন পর্যন্ত সুরমা নদীর ওপর কিনব্রিজ নির্মিত না হওয়ায়, নদী পারাপারের জন্য একটি সুসজ্জিত বজরায় সফর সঙ্গীসহ কবিকে চাঁদনি ঘাটে আনা হয়। ওই সময় চাঁদনি ঘাটকেও সুসজ্জিত করা হয়েছিল। মঙ্গলঘটসহ পুষ্প সম্ভারে লালসালু দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল ঘাটের প্রতিটি সিঁড়ি। মৌলভি আবদুল করিমকে নিয়ে কবিগুরু একটি ফিটন গাড়িতে করে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। তাঁর থাকার জন্য সে সময়ে সিলেট শহরের উত্তর-পূর্বাংশে ছোট একটি টিলার ওপর, যেখানে পাদ্রি টমাস সাহেবের বাংলো রয়েছে তার পাশের আরেকটি বাংলোতে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ওই দিন সন্ধ্যায় কবি স্থানীয় ব্রাহ্ম সমাজের আমন্ত্রণে উপাসনা সভায় যোগ দেন। পরের দিন ৬ নভেম্বর সকালে স্থানীয় লোকনাথ হল, পরে যেটা সারদা হল নামে পরিচিত হয়েছিল সেখানে হাজারো উপস্থিতিতে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
খান বাহাদুর সৈয়দ আবদুল মজিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা সভায় মানপত্র পাঠ করেছিলেন নগেন্দ্র চন্দ্র দত্ত। অনুষ্ঠান শেষে মুরারি চাঁদ কলেজের বাংলা ও সংস্কৃতির অধ্যাপক নলিনী মোহন শাস্ত্রীর আমন্ত্রণে তাঁর বাড়িতে কিছু সময়ের আতিথ্য গ্রহণ শেষে বেলা দুইটার দিকে সিলেট মহিলা সমিতি আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় যোগ দেন কবি। সেখান থেকে রবীন্দ্রনাথ শহরের উপকণ্ঠে মাসিমপুর এলাকায় অবস্থিত মণিপুরী পল্লিতে গিয়েছিলেন। ওই সময়ে মণিপুরী হস্তশিল্প প্রদর্শনী ছাড়াও তারা কবিকে মণিপুরী নৃত্য এবং গান দিয়ে বরণ করেছিলেন। মণিপুরী সংস্কৃতি তাঁকে এতটাই প্রভাবিত করেছিল, পরবর্তীতে শান্তিনিকেতনে তিনি তাঁর প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন পাঠ্যতালিকায় মণিপুরী নৃত্যের প্রবর্তন করে।
৭ নভেম্বর সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুরারি চাঁদ কলেজের ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্যোগে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় যোগ দেন কবিগুরু। দুই হাজারেরও বেশি লোকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই সভায় যোগদানের আগে ছাত্র সমাজের একটি অংশ কবিকে বহনকারী ঘোড়ার গাড়ি থেকে ঘোড়া দুটি ছাড়িয়ে দিয়ে তারা নিজেরাই গাড়িটিকে টেনে নিয়ে যান পুরো পথ। গান-বাজনা সহযোগে যাত্রা শেষে এমসি কলেজের ছাত্র শিক্ষকদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় একাধিক মানপত্র তুলে দেওয়া হয় কবির হাতে। শিক্ষার্থীদের দেওয়া ভাষণে নিজেদের বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার আকাঙ্ক্ষার কথা জানান লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী। কবিগুরু তাঁর ভেতর এতটাই আলোড়ন তুলেছিলেন যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে ফিরে গেলে কবির কাছে চিঠি লিখে জানতে চেয়েছিলেন আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের উপায় কি? চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন কবি। পরে শান্তিনিকেতনে চলে যান মুজতবা আলী। সেখানে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। তিনি কবির শিষ্যত্ব বরণ করে সেখানেই কাটিয়ে দিলেন কয়েকটা বছর।
মুজতবা আলীর সিদ্ধান্ত ছিল যে কবিগুরু বেঁচে থাকতে তাঁর লেখক সত্তার প্রকাশ ঘটাবেন না। মুজতবা আলী ঘুরেছেন দুনিয়ার বড় বড় শহরে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি গ্রহণ শেষে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছিলেন। পরবর্তীতে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএস করেন তিনি এবং ডক্টরেট করেছিলেন জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অনেক খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করলেও জীবনের শেষের দিকে আবারও ফিরে এসেছিলেন শান্তিনিকেতনে এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন কয়েক বছর।
কবিগুরু যখন সিলেটে আসেন তখন মরমি কবি হাসন রাজা বেঁচে ছিলেন। হাছন রাজার জন্ম হয়েছিল ১৮৫৪ সালে আর মৃত্যু ১৯২২ সালে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৯ সালে সিলেট এসেছিলেন। আসার আগেই হাসন রাজার ভাবনার সঙ্গে কিছুটা পরিচয় ঘটেছে। তবে তাঁদের সামনাসামনি সাক্ষাতের কোনো খবর পাওয়া যায় না। কিন্তু তাঁর গান সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্ঞান ছিল। ১৯২৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর কলকাতার সিনেট হলে অনুষ্ঠিত ভারতীয় দার্শনিক কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে সভাপতির ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি সিলেটের প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম নেওয়া সাধক কবি গীতিকার হাছন রাজার নাম উল্লেখ করেন রবীন্দ্রনাথ। পরবর্তী সময়ে তিনি কিছু গান ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন। অনুবাদসহ হাছন রাজা সংক্রান্ত ভাষণ ১৯২৬ সালের জানুয়ারি সংখ্যা বিশ্বভারতী কোয়ার্টারলি ও মর্ডান রিভিউ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তত দিনে অবশ্য হাছন রাজা আর নেই। রবীন্দ্রনাথ ১৯৩০ সালে যখন বিলেত গিয়েছিলেন সে সময় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় একটা ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। ভাষণে তিনি হাছন রাজার গান ও তাঁর অধ্যাত্মবাদ নিয়ে আলোচনার শেষে নিজের করা সেই ইংরেজি অনুবাদকৃত গান দুটির উল্লেখ করেন।
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংক্ষিপ্ত সিলেট সফর শেষ করে ৮ নভেম্বর রেলযোগে আখাউড়া হয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের তৎকালীন রাজধানী আগরতলার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। আখাউড়া পর্যন্ত সিলেটের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। সেই পথটুকু সংক্ষিপ্ত সময়ের হলেও কবির কাছে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য এক আনন্দদায়ক স্মৃতির খোরাক জুগিয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর কালিদাস নাগের কাছে লেখা এক পত্রে সেই কথাটি উল্লেখ করেছিলেন কবি।
সুদীর্ঘ ৬৫ বছর আসামের একটি প্রদেশে পরিণত করে রাখায় সিলেট অঞ্চলের মানুষের চেতনায় যে প্রচণ্ড কষ্টের জন্ম হয়েছিল, কবিগুরু মনপ্রাণ দিয়ে তা অনুভব করেছিলেন। বিষয়টা আর সেই কারণেই সফরকালীন সময়ে তিনি লিখেছিলেন সুন্দরী শ্রীভূমি।
সিলেট থেকে শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে শান্তিনিকেতন এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন কেউ কেউ তেমনি শান্তিনিকেতনে শিক্ষকতাও করেছেন সিলেটী কৃতি পুরুষ অনাদি ঘোষ দস্তিদার, অমিতাভ চৌধুরী, নির্মলেন্দু চৌধুরী, সৈয়দ মুজতবা আলী এবং শোভন সোম। অধ্যাপক সোম ফাইন আর্টস ফ্যাকাল্টির ডিন ছিলেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অমিতাভ চৌধুরী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স শেষ করে কলকাতায় মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনা করেছেন। তাঁর লেখা ৫০টি বইয়ের মধ্যে ১১টি লেখা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর। কবি অশোক বিজয় রাহা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কৃতী শিক্ষক ছিলেন। ১৯৫১ সালে বাংলা বিভাগে যোগ দিয়ে প্রায় দুই যুগ শিক্ষকতা করেছেন বিশ্বভারতীতে। অবসর গ্রহণের পর ১৯৯০ সালে ৮০ বছর বয়সের সময় শান্তিনিকেতনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। শিক্ষাবিদ সুধীর চন্দ্র পাল বিশ্বভারতীর কৃতি ছাত্র ছিলেন। কবিগুরুর অত্যন্ত প্রিয় পাত্র ছিলেন তিনি। অধ্যাপক যতীন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য ১৯৮৫ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট উপাধি পেয়েছিলেন এবং সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ মঞ্জুশ্রী চৌধুরী রবীন্দ্রনাথের রূপক ও সাংকেতিক নাটকের ওপর গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন। বিপ্লবী এবং নারী আন্দোলনের অগ্রদূত লীলা রায় ১৯৩১ সালে যখন একটি মহিলা মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন, সেই মাসিক পত্রিকার নামকরণ ‘জয়শ্রী’ দিয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
সিলেটী বংশোদ্ভূত ভারতীয় ভূপর্যটক রমানাথ বিশ্বাস দুই চাকার সাইকেল সঙ্গে করে ঘুরেছেন সারা দুনিয়া। ১৯৩১ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত বিরামহীন পদচারণা ছিল তার। লিখেছেন পঞ্চাশটির মতো বই। আর তিরিশটি ভ্রমণ কাহিনি। আশ্চর্যজনকভাবে সেই রমানাথ বিশ্বাসের কাছে এক সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠলেন। ১৯৩৮ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে গিয়ে কবিগুরুর সঙ্গে দেখা করলেন। সিলেটের রাজনীতিক ও শিক্ষাবিদ মৌলভি আবদুল করিমের লেখা ইসলাম কন্ট্রিবিউশন টু সায়েন্স অ্যান সিভিলাইজেশন গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর এভাবেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেটী জনমানুষের আত্মার কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছেছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন একান্ত আপনজনের মতো।
কবিগুরুর মৃত্যু হয় ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট। মৃত্যুর পরে সিলেটে একটি সর্বজনীন শোকসভা আয়োজন করা হয়েছিল। ওই সময়ে ‘কবি প্রণাম’ শিরোনামে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল।
২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর সিলেটে রবীন্দ্রনাথের আগমনের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে আহ্বায়ক নির্বাচিত করে ইতিমধ্যে প্রায় তিন শতাধিক সদস্য বিশিষ্ট একটি উদ্‌যাপন পরিষদ গঠিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে কবির লেখা সুন্দরী শ্রীভূমি কবিতার একটি মনোজ্ঞ ম্যুরাল উন্মোচনসহ সেমিনার সিম্পোজিয়াম এবং রবীন্দ্র সংগীতের সুর দিয়ে রবীন্দ্র স্মরণ উৎসব পালন করা হবে।