ক্যাটস্কিল পাহাড়ে মধ্যদুপুর

সুরভির চোখ মুখে অন্য এক স্নিগ্ধতা। বয়স বেড়েছে সেটা কেবল বোঝা যায় চুলের দুপাশে কিছুটা শুভ্রতা দেখে। কিন্তু চেহারার কোমনীয়তা এতটুকু কমেনি। সেই লাবণ্য যেন আজও আছে। মুগ্ধ চোখে তার দিকে তাকায় সফিকুল।
‘সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাও, এভাবে আর দেখতে হবে না’—মৃদু শাসন সুরভির কণ্ঠে। দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় সফিকুল। গাড়ি ছুটে চলেছে। উঁচু নিচু পাহাড়ি পথ। এমনিতেই ভয়াল বাঁকের কারণে কখনো কখনো এই রাস্তাই হয়ে ওঠে কঠিন। তার ওপর তীব্র তুষারপাতে ঢেকে আছে চারপাশ।
গাড়ি চলছে। তুষারপাতের এই দিনে গান বাজছে, বৃষ্টির। ‘একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে’। সফিকুলের প্রিয় গান। অসংখ্যবার শোনা হয়েছে। এখনো শোনা হয়। এই গানটার সঙ্গে তার অনেক মধুর স্মৃতি। বিশেষ করে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় যখন সুরভির সঙ্গে তীব্র প্রেম ছিল, তখন এটি ছিল তার প্রধান সংগীত। এমনও হয়েছে গানটির মতো করেই দুজন অসংখ্য দিন বৃষ্টিতে ভিজেছে। মজার ব্যাপার কি, সুরভি সব সময়ই সফিকুলের পাগলামি প্রশ্রয় দিত। তাদের দিনগুলো ছিল রঙিন।
ঝাঁকুনি দিয়ে দিয়ে গাড়িটা এগিয়ে চলেছে। কখনো বরফে পিছলে যেতে চায়। হঠাৎ করেই চোখের সামনে অন্য এক দুনিয়া। এ যেন রূপকথার এক রাজ্য। পৃথিবীতে এমনও সৌন্দর্য আছে, না দেখলে হয়তো বিশ্বাসই হতো না! একদিন আগেই মারাত্মক একটি তুষার ঝড়ের কবলে পড়েছিল নিউইয়র্ক। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক। উপড়ে গেছে অনেক গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি। এমনকি পাহাড়ি এই জনপদের অনেক এলাকায় তখনো বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। এরপরও প্রকৃতি যেন উদার হাতেই সাজিয়ে রেখেছে চারপাশ। এমন দৃশ্যে চোখ জুড়ে কেবল ভালো লাগা টেনে নিতে ইচ্ছে করে নিজের ভেতরে। সাদা বরফ কেটে কেটে ছুটে চলেছে জিপ-বাঙলার রুবিকন গাড়িটা। ফোর হুইলার গাড়িটা একটু একটু করে এগিয়ে চলেছে ওপরের দিকে।
চারদিকে সাদা আর সাদা। পথঘাট, গাছ, কোনো কিছুই আলাদা করে চেনার কোনো উপায় নেই। তবে অবয়ব দেখে কিছু কিছু বোঝা যায়। বরফের চাদরে ঢেকে থাকা চারপাশ যেন ভাস্কর্যের এক নগরী। মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তাগুলোর কোথাও কোথাও কেবল কালো পিচের দেখা মিলছে। সর্পিল আকারে এগিয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা রাস্তা। কখনো বামে অনেক নিচে নেমে যাওয়া গিরিখাদ, ডানে সারি সারি গাছ। এগিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ রাস্তার ডান দিকে চোখে পড়ল একটা পাহাড়ি ঝরনা। অনেকটাই বরফে ঢেকে গেছে। এর মধ্য থেকেই উঁকি মারছে ক্ষীণ হয়ে আসা জলের ধারা। পাশেই গাড়ি পার্ক করার জায়গা আছে। সেখানে গাড়িটা থামাল সফিকুল। ‘থামলে যে’?—সুরভির প্রশ্ন।
‘সামনেই একটা পাহাড়ি ঝরনা। চলো দেখে আসি’।—সফিকুলের এই প্রস্তাবে সুরভির ‘না’ নেই। আগেও কখনো তেমন বাধা দিত না। ভালোবাসার দিনগুলোতে সুরভি কেবল সফিকুলের ইচ্ছাকে মূল্য দিয়ে গেছে। শেষ সিদ্ধান্তের বেলাতেও তেমনটাই ছিল। একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে দাঁড়িয়ে ভরা বর্ষায় সুরভির হাতে একগুচ্ছ কদম ফুল তুলে দিয়ে হঠাৎ সফিকুল বলে বসে, ‘শোনো, আমার স্কলারশিপ হয়েছে। আমি আমেরিকার ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যাচ্ছি।’
সেদিন সিদ্ধান্তটা শেষমেশ মেনে নিলেও ভীষণ বিস্মিত হয়েছিল সুরভি, ‘মানে! কী বলছ এসব। কবে, কীভাবে হলো? আমাকে তো কিছুই জানাওনি।’
—‘ভেবেছিলাম সারপ্রাইজ দেব। তাই বলিনি। ফাইনাল চিঠি পেয়ে গেছি। আগামী মাসেই যাওয়া।’ সহজ ও সাবলীল ভাষায় বলে যায় সফিকুল। আর শক্ত মেয়ে বলে পরিচিত সুরভির চোখ বেয়ে তখন গল গল করে নেমে আসে কষ্টের অশ্রুধারা। সে মনে মনে ভাবে, ‘এই ছেলেটা এমন কেন? জীবন নিয়ে এতটা খামখেয়ালিপনা কেন করে সে!’ ভাবে আর চুপ করে থাকে। কিছু বলার নেই তার। কেবল সে জানে, এমন সিদ্ধান্তেও তাকে ‘হ্যাঁ’ বলতে হবে।
—‘বুঝলে ইয়েল ইউনিভার্সিটি আমেরিকার কানেকটিকাটে। সেখানে গিয়ে কিছুদিন পর সুযোগ মতো দেশে ফিরে আসব। এরপর আমাদের বিয়ে। তোমাকে নিয়ে যাব সেখানে।’ গড় গড় করে বলে যায় সফিকুল। সুরভি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘ঠিক আছে নিয়ে যেও।’
—‘ব্যস এটুকুই! আর কিছু বলছ না যে?’ জানতে চায় সফিকুল। এবার অনেক কষ্টে হাসে সুরভি। সেই হাসির অর্থ হয়তো সফিকুলের কোনো দিন জানা হবে না। ছেলেটা তাকে অনেক ভালোবাসে, এটা ঠিক। কিন্তু কোথায় যেন কিছু একটার অভাব আছে তার ভেতর। সুরভি সেটা টের পায়, কিন্তু প্রকাশ করতে পারে না। হাসি ছড়িয়ে দিয়ে সুরভি বলে, ‘সিদ্ধান্ত তো নিয়েই নিয়েছ। সবকিছু পাকাপাকি। আমি তো কেবল বলতে পারি, বিদায়। ভালো থেকো।’
সেই যে সফিকুলের যাওয়া, মাঝখানে চলে গেছে বিশটি বছর। সেই সঙ্গে সুরভির জীবন থেকেও চলে গেছে সে। টানা যোগাযোগ থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্নতা। একসময় হঠাৎ হারিয়ে গেল দুজন দুজনের জীবন থেকে। সফিকুল বিয়ে করেনি। একাই কাটাচ্ছে জীবন। এখানে একটা ইউনিভার্সিটির ইকোনমিকসের প্রফেসর। পাগলাটে ভাবটা মনে হয় আরও বেড়েছে। সফিকুল একা হলেও সুরভির এখন রয়েছে একটি পরিবার। স্বামী হার্টের ডাক্তার। এক ছেলে, এক মেয়ে। দিন যাচ্ছে, তার ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে একটু একটু করে। বড় একটি এনজিওতে কাজ করে সুরভি, পদটাও বড়। এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে একটা সেমিনারে যোগ দিতে নিউইয়র্কে এসেছে। আসার আগে তার হঠাৎ মনে হলো এই দেশে তো সফিকুল নামে একটা মানুষ থাকে। খুব ইচ্ছা হলো তার সঙ্গে যোগাযোগ করার। ফেসবুক খুঁজে মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠাল। কিন্তু উত্তর নেই। বোঝাই যায় নামে মাত্র ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে সফিকুলের, কাজে নেই। অতটা অ্যাকটিভ না। সেমিনার শেষে আর একদিন পরে ঢাকায় চলে যাওয়ার কথা সুরভির। সফিকুলের সঙ্গে দেখা হওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। হঠাৎ তাকে চমকে দিয়ে কল এল মেসেঞ্জারে। সফিকুলের ছবি ভাসছে। মনটা দুলে উঠল সুরভির। কী যে ভালো লাগা! এত বছর পর যেখানে কেবল ঘৃণা থাকার কথা, সেখানে আনন্দই বেশি হচ্ছে তার। সেই খুশি অন্য কোনো জগতের। সুরভি বুঝতে পারে, সফিকুল কথা না রাখলেও তাকে কতটা ভালোবাসে সে। তার জীবনের অন্য এক অনুভূতি হয়ে আজও আছে সেই ছেলেটা। যার বয়স কখনো বাড়ে না।
বরফে ঢাকা ঝরনার একটি শীর্ণধারা তখনো গড়িয়ে যাচ্ছে নিচের দিকে। কুল কুল শব্দ শোনা যাচ্ছে। চারপাশটা অদ্ভুত রহস্যময়। দেখে মনে হতে লাগল এ যেন অন্য এক ভুবন। থরে থরে তুষার জমে আছে। তাজা, এখনো জমাট বাঁধেনি। চারদিকে তখন ঝকঝকে রোদ থাকলেও, আগের রাতেই হয়েছে প্রচণ্ড তুষার ঝড়। একটি জায়গায় দিক-নির্দেশনার একটি বোর্ড চোখে পড়ল। তার ওপর বরফের স্তূপ। লেখা ঠিকমতো পড়া যাচ্ছে না। হাত দিয়ে কিছু বরফ সরাতেই লেখাটি পড়ার উপযুক্ত হয়ে উঠল, ‘ট্রেইল টু ক্যাটার স্কিল ফলস’। এখান থেকে আধা মাইল দূরত্বের পাহাড়ি পথ ধরে হেঁটে গেলে দেখা মিলবে আসল ঝরনাটির।
—‘ভালো হয়েছে, তোমাকে পাহাড়ের অন্য রূপ দেখাতে পারলাম। মনে হচ্ছে আমরা দুজন রূপকথার দেশে চলে এসেছি। কী বলো!’ বলে ওঠে সফিকুল। সুরভি কিছু বলে না। একদিন পরে চলে যাবে। আবহাওয়া খুব খারাপ। এরপরও সফিকুলের সঙ্গে দেখা হওয়ার আনন্দে ভরে আছে তার মন। কেন জানি কোনো রাগ করতেই পারছে না। ক্ষোভও হচ্ছে না। তাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য দোষও দিতে ইচ্ছে করছে না। আবার কবে দেখা হবে, জানা নেই। তাই এই সময়টা একটু অন্য জগতে ডুব দিতে চাইল সুরভি। যে জগতের কোনো নাম হয় না।
—‘বুঝলে সুরভি, এই পাহাড়টা শীতে এক রকম, আর গরমে একদম আলাদা। পাহাড়টার নাম ক্যাটস্কিল।’ এরপর একের পর এক তথ্য দিয়ে যেতে থাকে সফিকুল। সুরভি ভাবে ‘ছেলে’ থেকে ‘লোক’ হয়ে যাওয়ার পরও বদলায়নি সে। এতগুলো বছর পর দেখা, কোথায় কেমন ছিলাম দুজনে, কেমন আছি, কত অভিমান; এসবের ধার দিয়েও যাচ্ছে না সফিকলু। সুরভি ভাবে, ‘থাক আর ওসব ভেবে কী হবে!’
সাদা বরফ শুভ্র এই পাহাড়টাই গরমে হয়ে ওঠে সবুজ। সেই সবুজে চলে তখন অন্য উৎসব। শীতে স্কি খেলা চলে। কিন্তু গরমে দুঃসাহসী অভিযাত্রীর দল ওপরে ওঠে, সাইকেলে করে নিচে নেমে আসে। অনেকে ছোট ছোট এক ধরনের বিশেষ গাড়ি চালায় এই পথে। কেউ করে ট্রেইল, কেউবা ট্রেকিং। অনেকে গলফ খেলে সময় কাটায়। অর্থাৎ পুরো বছর ধরেই এই পাহাড় জেগে থাকে, থাকে জমজমাট। রাতে হোটেলগুলোর ভেতরে থাকে কমেডি-শো, গান কিংবা নানা ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা। বাহারি খাবার আরও আনন্দময় করে তোলে। এতসব তথ্য জানা হয়ে গেল সুরভির।
একটু পর আবারও গাড়িতে উঠে বসল তারা। গাড়ি ছুটে চলল হান্টার মাউন্টেন রিসোর্টের দিকে। ক্যাটস্কিল পর্বতমালার মধ্যেই পড়েছে এটি। উঁচু নিচু পাহাড়ি পথ পেরিয়ে ছুটে চলেছে গাড়ি। কখনো পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে চোখে পড়ছে সমভূমি। কোথাও খাঁড়াভাবে নেমে গেছে। তারপরও রাস্তাগুলো যথেষ্ট নিরাপদ করেই তৈরি। মসৃণ ও প্রশস্ত। তার ওপর কোথাও যদি পাহাড়ের খাঁড়া ঢালের পাশ দিয়ে গেছে, সেখানে নিরাপদ লোহার পাতের বেষ্টনী দেওয়া। খুব বেপরোয়া না চালালে, খুব বেশি বিপদ হওয়ার কারণ নেই। তবে সাদা বরফে রাস্তা ঢেকে আছে, তাতে গাড়ি চালানোর জন্য দরকার বাড়তি সতর্কতা। সেই সঙ্গে ফোরহুইলার গাড়ি ছাড়া এই পথে এগিয়ে যাওয়া প্রায় সম্ভবই নয়।
গাড়ি তখন এসে দাঁড়িয়েছে হান্টার রিসোর্টের সামনে। কিন্তু খারাপ খবর হচ্ছে, রিসোর্টটা বন্ধ। আগের দিনের ঝড়ে এই এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে; যা তখনো ঠিক করা সম্ভব হয়নি। তাই রিসোর্টটা বন্ধ রাখতে হয়েছে। সারি সারি গাড়িতে মানুষ এসেছে। পর্যটকেরা এসেছেন বাসভর্তি করে। তাদের প্রায় সবাই খোঁজ নিয়ে আসেননি পার্কটি খোলা কিনা। যেমন খোঁজ নিয়ে আসেনি সফিকুলও। ভেবেছিল এখানে পাহাড়ি এলাকায় দুজনে ঘুরে বেড়াবে। মন চাইলে রাতটাও থাকবে। তবে এক সঙ্গে নয়। আলাদা রুমে। দুজনের মনেই এমন ভাবনা। তবে পরিস্থিতি যা, তাতে মনে হচ্ছে ফিরেই যেতে হবে। সফিকুল তাকায় সুরভির দিকে। —‘স্যরি, আজ তো দেখছি জায়গাটা বন্ধ। ইলেকট্রিসিটি নেই।’ অনুতাপের ভঙ্গিতে বলল সফিকুল।
—‘তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু আমেরিকায় বিদ্যুৎ নেই, বিষয়টা কেমন হয়ে গেল না?’ জানতে চায় সুরভি।
—‘এখানে এটা রেয়ার। কালেভদ্রে নয়। কিন্তু ব্যাড লাক হলে হয়। যেমন আজ হলো।’
—‘কোনো অসুবিধা নেই। তোমার সঙ্গে তো দেখা হলো। এমন একটি স্বপ্নের জায়গায় তুমি আমাকে নিয়ে এলে। তুমি গাড়ি চালাচ্ছ, আমি পাশে বসে। চারপাশ স্বর্গীয়। এর চেয়ে বেশি কী চাইতে পারি আমি!’ সুরভির কথায় অন্যদিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল সফিকুল। মনে হচ্ছে তার চোখে কিছুটা জল জমতে শুরু করেছে। সেই জল গড়িয়ে পড়তে শুরু করল দুই চোখ বেয়ে। দেখে ফেলল সুরভি। ভীষণ অবাক হলো সে। বিস্ময় যেন কাটছে না তার। সফিকুল কাঁদছে। যে ছেলে জীবন আর ভালোবাসার মানে বোঝে কিনা, এ নিয়ে সব সময়ই সন্দেহ করে এসেছে সুরভি, সেই সফিকুল কাঁদছে। এই কান্নার মানে কি!
—‘চলো গাড়িটা কোথাও দাঁড় করিয়ে নামি। এমনিতেই একটু ঘুরে ফিরে দেখি।’ সুরভির প্রস্তাবে একটা নদীর পাশে গাড়িটা থামায় সফিকুল। দুজনে নেমে এসে বাইরে দাঁড়ায়। সুরভি তাকিয়ে আছে নদীটার দিকে। অন্যদিকে তাকিয়ে সফিকুল। যেন কেউ কাউকে চেনে না।
দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে সুরভি জানতে চায়, ‘আমাকে ফেলে কীভাবে তুমি থেকে যেতে পারলে? কীভাবে তুমি হারিয়ে যেতে পারলে? আমি তো তোমার কোনো কিছুর বিরোধিতা করতাম না। তুমি কীভাবে পারলে? কেন?’ এবার পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছতে মুছতে সফিকুল বলল, ‘আমি তোমার যোগ্য ছিলাম না। আমি তোমার যোগ্য নই।’ বরফ ভেজানো প্রচণ্ড একটা বাতাসের ঝটকা এসে লাগল সুরভির চোখে মুখে। এখন মধ্য দুপুর। কিন্তু বোঝার কোনো উপায় নেই। দিনের কোন ভাগ চলছে, ঘড়িতে না তাকালে কেউ বলতেই পারবে না। আকাশে সূর্যের হাসি ছিল একটু আগেও। আবার ঢেকেছে অন্ধকারে।
সুরভি মনে মনে ভাবে, ‘হাজারো মধ্যদুপুর তোমাকে ছাড়া কেটে গেছে। আজ অনেক দূরের দেশে, এই শ্বেতশুভ্র বরফে ঢাকা পাহাড়ি জনপদের মধ্যদুপুরটাই না হয় আমার হয়ে থাক।’ এবার সুরভিও কাঁদছে।