জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে গ্রেপ্তার আকায়েদের মা-বোনের মুক্তি

আকায়েদ উল্লাহ
আকায়েদ উল্লাহ

যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন বিভাগে আটকের দুই দিন পর দিলরুবা বেগম (৫৪) ও আয়ফা হায়াতকে (২২) ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার তাঁদের ডিটেনশন সেন্টার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

নিউইয়র্কে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে ২০১৭ সালে গ্রেপ্তার হন আকায়েদ উল্লাহ। তাঁর কারণে বিপদে আছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। আদালতে হাজিরাসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তাঁরা। ৬ নভেম্বর পরিবারসহ ফেডারেল প্লাজায় হাজিরা দিতে গেলে ইমিগ্রেশন বিভাগ আকায়েদের মা দিলরুবা বেগম (৫৪) ও বোন আয়ফা হায়াতকে (২২) আটক করে। সেখান থেকে তাঁদের এলিজাবেথ আটককেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। বৈধ অভিবাসী হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের অভিবাসনে অনিয়মের কথা বলে আটক করা হয়েছিল। শুরু থেকেই স্বেচ্ছাসেবী নাগরিক সংগঠন ড্রাম তাঁদের আইনগত সহযোগিতা করে আসছে।

আকায়েদ উল্লাহর বড় ভাই মার্কিন নাগরিক আহসান উল্লাহকে গত ২২ অক্টোবর ব্রুকলিনে তাঁর বাড়ির সামনে থেকে আটক করা হয়। মিথ্যা তথ্য দিয়ে অভিবাসী হওয়ার অভিযোগ এনে তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য হাডসন কারাগারে রাখা হয়েছে।

দেসিজ রাজিং আপ অ্যান্ড মুভিং ড্রাম দিলরুবা এবং আয়ফার মুক্তির কথা গতকাল শুক্রবার দুপুরে সংবাদমাধ্যমকে জানায়। ড্রামের নির্বাহী পরিচালক ফাহাদ আহমেদ জানান, আটক নারীদের মুক্তির জন্য ইমিগ্রেশন বিভাগে অসংখ্য ফোন গেছে। ড্রামের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কমিউনিটি ঐক্যবদ্ধ এবং সোচ্চার হওয়ার কারণেই এমনটি ঘটেছে। ড্রাম বলেছে, পরিবারটির জন্য আইনগত লড়াইয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ তারা নিয়মিত সবাইকে জানাবে। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাসহ অন্যান্য মাধ্যমে তাঁদের আটক করার সংবাদ প্রকাশিত হলে ইমিগ্রেশন বিভাগে হাজার হাজার ফোন যেতে থাকে। 

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সন্তান আকায়েদ উল্লাহ পরিবারের সঙ্গে ব্রুকলিনের ফ্ল্যাটল্যান্ডস এলাকায় থাকতেন। তিনি বৈদ্যুতিক সামগ্রীর দোকানে কাজ করতেন। ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বরে নিউইয়র্কের ব্যস্ততম বাস টার্মিনালে ‘সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টার’ অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পারিবারিক অভিবাসনে আমেরিকায় আসা এই পরিবারটিকে এরপরেই মার্কিন ইমিগ্রেশন বিভাগ নজরদারিতে রেখেছে। নানা সময় তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তাঁদের নানা সময় ইমিগ্রেশন বিভাগে হাজিরা দেওয়ার নোটিশ দেওয়া হচ্ছে।

নোটিশের জের ধরে ৬ নভেম্বর আকায়েদের পরিবারের সদস্যদের হাজিরার দিন ধার্য ছিল। আইনজীবীসহ উপস্থিত হলেও তাঁদের ওপর খড়্গ নেমে আসে। পরিবারের দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ককে রেখে আকায়েদের মা দিলরুবা বেগম ও বোন আয়ফা হায়াতকে আটক করে নিয়ে গেছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের গ্রিন কার্ড থাকা সত্ত্বেও বলা হয়, পারিবারিক ইমিগ্রেশনে আসার সময় তাঁরা মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। দিলরুবা বেগম শারীরিকভাবে অসুস্থ, আয়ফা কলেজশিক্ষার্থী। একজনের জীবন সংকট এবং আরেকজনের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হওয়ার কথা জানানো হলেও তাতে ভ্রুক্ষেপই করেনি ইমিগ্রেশন বিভাগ।

এর আগে ২০ বছর থেকে আমেরিকায় থাকা আকায়েদের ভাই, মার্কিন নাগরিক আহসানকে এমনি করে গ্রেপ্তার করে দেশে পাঠানোর জন্য কারাগারে রাখা হয়েছে। নাগরিক অধিকার সংগঠন ড্রাম আটক দিলরুবা ও আয়ফার মুক্তির জন্য নাগরিকদের দ্রুত সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানায়।

২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর সকালে অফিসগামী যাত্রীদের ভিড়ে টাইম স্কয়ার সাবওয়ে স্টেশন থেকে ম্যানহাটনের পোর্ট অথোরিটি বাস টার্মিনালে যাওয়ার ভূগর্ভস্থ পথে বিস্ফোরণ ঘটান বাংলাদেশি আকায়েদ উল্লাহ। তিনি নিজের শরীরে ‘পাইপ বোমা’ বেঁধে নিয়েছিলেন। কিন্তু বোমাটি ঠিকমতো বিস্ফোরিত হয়নি। এতে প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় পুলিশ তাঁকে আটক করে। এ বিস্ফোরণে আহত হয়েছিলেন আরও তিন পুলিশ সদস্য। পরে নিউইয়র্ক পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে এই হামলা চালান।