জন্মদিনে গুলি করে ২ সহপাঠীকে হত্যা

যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোতে বন্দুক হামলার ঘটনা বেড়েই চলছে। ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোতে বন্দুক হামলার ঘটনা বেড়েই চলছে। ছবি: এএফপি

ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হাইস্কুলে এক কিশোর গুলি ছুড়ে তার দুই সহপাঠীকে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে তিনজন। গতকাল বৃহস্পতিবার ১৬তম জন্মদিনে ওই কিশোর স্কুলের ছাত্রদের ওপর হামলা চালানোর সময় নিজেও আহত হয়। পুলিশ জানায়, বন্দুকধারীকে গুরুতর অবস্থায় আটক করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার লস অ্যাঞ্জেলেসের উত্তরে সান্তা ক্লারিটার সওগাস হাইস্কুলে ক্লাস শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট আগে গুলি করে এই হত্যার ঘটনা ঘটে।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গুলি ছোড়ার ঘটনায় গত দুই দশকে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে এসব হামলার জের ধরে শিক্ষার্থীদের বন্দুক হামলার সময় করণীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে লস অ্যাঞ্জেলসের কাউন্টি শেরিফ অ্যালেক্স ভিলানুয়েভা জানান, স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩৮ মিনিটে পুলিশের কাছে বন্দুক হামলার খবর আসে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অনেক জরুরি ফোনকল আসতে থাকে। দুই মিনিটের মধ্যে পুলিশের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বলে জানান তিনি।

ভিলানুয়েভা জানান, গুলিতে আহত ছয় শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। পরে আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় ১৬ বছরের একটি মেয়ে আর ১৪ বছরের একটি ছেলে নিহত হয়েছে। আহত লোকজনের মধ্যে ১৪ বছর বয়সী দুজন ছেলেমেয়ে এবং ১৫ বছর বয়সী অপর একটি মেয়ের কথা জানানো হয়েছে।

আগ্নেয়াস্ত্র বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন কেন্ট ওয়েজনার জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন বন্দুকধারী ১৬ বছর বয়সী ছেলেটির কাল জন্মদিন ছিল। মার্কিন গণমাধ্যম তাকে নাথানিয়েল বারহো বলে শনাক্ত করেছে।

সন্তানকে কাছে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন মা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সন্তানকে কাছে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন মা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

বার্তা সংস্থা এএফপির খবর অনুযায়ী, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, সন্দেহভাজন ছেলেটি নিজের ব্যাকপ্যাক থেকে একটি বন্দুক বের করে। পাঁচ ছাত্রকে গুলি করে সে নিজের ওপর গুলি চালায়। উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি একটি ০.৪৫ ক্যালিবারের আধা-স্বয়ংক্রিয় পিস্তল। পুলিশ জানিয়েছে, তারা সন্দেহভাজন ছেলেটির বাড়ির হদিস পেয়েছে। প্রয়োজনীয় তল্লাশি চালাতে বাড়িটি খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

হামলা চলাকালীন সওগাস হাইস্কুলসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর স্কুলগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়।

লস অ্যাঞ্জেলসের সহকারী শেরিফ টিম মুরাকামি এক টুইট বার্তায় জানান, মা-বাবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার আগে সওগাস হাইস্কুলের সব শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার নেবে পুলিশ। তিনি বলেন, গুজব উঠেছে, সন্দেহভাজন কিশোর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামলা চালানোর কথা আগেই জানিয়েছিল। এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে।

আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র বহন করার অধিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিতর্কিত রাজনৈতিক ইস্যু। ২০১৭ সালে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৪০ শতাংশ আমেরিকান বলছেন, তাঁরা একটি বন্দুকের মালিক বা তাদের বাড়িতে অন্তত একটি বন্দুক আছে। দেশটিতে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা হত্যা বা হত্যাযজ্ঞের হার উন্নত বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

ওয়াশিংটন পোস্টের মতে, ১৯৯৯ সালে কলোরাডোতে কলাম্বাইন হাইস্কুল গণহত্যার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি তরুণ স্কুলে বন্দুক হামলার শিকার হয়েছে।