অভিশংসন ইস্যুতে ডেমোক্র্যাট শিবিরেই বিভক্তি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন প্রশ্নে বিভক্তি দেখা দিচ্ছে ডেমোক্র্যাট শিবিরেই। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন প্রশ্নে বিভক্তি দেখা দিচ্ছে ডেমোক্র্যাট শিবিরেই। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন তদন্ত নিয়ে বিভক্তির চিহ্ন আগে থেকেই ছিল ডেমোক্র্যাট শিবিরে। নেতৃত্ব পর্যায়ে এক ধরনের ঐকমত্য থাকলেও সমর্থকদের মধ্যে এ নিয়ে বিভক্তি বেশ স্পষ্ট বলা যায়। আইওয়া থেকে ডেমোক্রেটিক দলের হয়ে প্রথমবারের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়া সিনথিয়া অ্যাক্সনের অভিজ্ঞতা অন্তত তেমনই।

আজ সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, থ্যাংকসগিভিং ডের ছুটিতে নিজের নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে সমর্থকদের তোপের মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন সিনথিয়া। প্রত্যন্ত ওই অঞ্চলের কৃষকেরা চলমান অভিশংসন তদন্তের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট মত ব্যক্ত করেছেন বলে জানান তিনি।

কারও নাম উল্লেখ না করে সিনথিয়া জানান, স্থানীয় একটি জনপরিসরে তাঁর এক সমর্থক সরাসরি বলেন, ‘অভিশংসনের জন্য ভোট নিয়ো না। বিষয়টি নিয়ে আমি রীতিমতো ক্লান্ত।’ ওই সমর্থক যখন এ কথা বলছিলেন, তখন সেখানে উপস্থিত অন্যরা তাতে সম্মতি জানায়।

আইওয়াতে যখন এ ঘটনা ঘটছিল, তখন নিউজার্সির হোয়ার্টনে প্রথমবারের মতো কংগ্রেসম্যান নির্বাচিত হওয়া টম মালিনোস্কি সম্পূর্ণ বিপরীত পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। সেখানে তাঁকে রীতিমতো তারকার সম্মানে বরণ করে নেয় প্রায় দেড় শ ডেমোক্র্যাট সমর্থকের একটি জমায়েত। সমর্থকদের অভিবাদনে সাড়া দিয়ে তিনিও ট্রাম্পের ‘অভিশংসন এই হলো বলে’ ধরনের বক্তব্য দেন। তাঁর এ বক্তব্য সমর্থকদের বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ভীষণভাবে উজ্জীবিত করে।

এ দুই নেতাই রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে প্রথমবারের মতো কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁদের নির্বাচনী এলাকার মধ্যে যে ভিন্নতা, তা হচ্ছে একটি শহর অঞ্চল, অন্যটি গ্রামাঞ্চল। সিনথিয়া তাঁর সমর্থকদের সামনে যে বিষয়ে রীতিমতো তোপের মুখে পড়েছেন, ঠিক একই বিষয়ে মালিনোস্কি পেয়েছেন অভিবাদন। এখন পর্যন্ত হওয়া জরিপে অভিশংসন ইস্যুটিতে দ্বিদলীয় বিভক্তির বিষয়টি উঠে এলেও এ দুই নেতার অভিজ্ঞতা কিন্তু ভিন্ন কথা বলছে। তাঁদের অভিজ্ঞতা বলছে, ডেমোক্রেটিক দলের সমর্থকদের মধ্যেই অভিশংসন প্রশ্নে বেশ বড় ধরনের বিভক্তি রয়েছে। এই বিভক্তিকে শহর ও গ্রামাঞ্চল হিসেবে মোটাদাগে চিহ্নিত করা যেতে পারে।

এ বিষয়ে সিনথিয়া অ্যাক্সনে রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি অভিশংসন নিয়ে কোনো কথা বলি না। নিজের ও পরিবারের চাহিদা জোগান দিতে কঠোর পরিশ্রম করে চলা মানুষ তাঁরা। ওয়াশিংটনের রাজনীতি ও আমলাতন্ত্র নিয়ে তাঁরা বীতশ্রদ্ধ। তাঁদের জীবনে অভিশংসনের তেমন কোনো গুরুত্ব নেই।’

ব্যক্তিগতভাবে সিনথিয়া অবশ্য এ তদন্তের পক্ষেই। তাঁর মতে, ক্ষমতার অপব্যবহারের দোষে যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দোষী হন এবং এ কারণে যদি যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতির শিকার হয়ে থাকে, তবে তাঁকে অভিশংসনের পক্ষেই তিনি ভোট দেবেন। এ জন্য নিজের আসনটি হারাতে হলেও, তিনি তার পরোয়া করবেন না। তিনি বলেন, ‘আমার কাজ মানুষের জন্য কাজ করা। একই সঙ্গে দেশের স্বার্থ রক্ষাও আমার কাজ।’

অন্যদিকে অভিশংসন ইস্যুতে কথা বলতে কোনো দ্বিধায় ভোগেন না মালিনোস্কি। নিজের সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থের জন্য প্রয়োজনীয় মনে করলে প্রেসিডেন্ট চাইলে যেকোনো বৈদেশিক নীতিতে অবস্থান নিতে পারেন। কিন্তু এমন কোনো পররাষ্ট্র নীতিগত অবস্থান নিতে পারেন না, যা শুধুই তাঁর স্বার্থে।’

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার পাঁচ দিন ধরে চলা অভিশংসন শুনানির প্রাথমিক উপসংহারে উপনীত হয় ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন অভিশংসন তদন্ত দল। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর জন্য ইউক্রেনের ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চাপ দিয়েছিলেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এ তদন্তে। অভিযোগ আছে, জো বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে তদন্তকাজ না চালালে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা সহায়তা বাবদ প্রতিশ্রুত ৩৯ কোটি ১০ লাখ ডলারের তহবিল ছাড় করা হবে না বলেও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। এখন পর্যন্ত যেসব সাক্ষ্য পাওয়া গেছে, তাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে তদন্তকাজ শুরুর জন্য চাপ প্রয়োগ করেছিলেন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

এসব সাক্ষ্যের বিষয়ে বেশ আস্থাবান মালিনোস্কি। অভিশংসন প্রস্তাবের ওপর ভোট হলে কোন পক্ষে ভোট দেবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বেশ শক্ত প্রমাণ রয়েছে।’

সব মিলিয়ে ভোটারদের অবস্থানের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাম ও শহরাঞ্চলের ডেমোক্র্যাট শিবিরে অভিশংসন ইস্যুতে সুস্পষ্ট বিভক্তি দৃশ্যমান। গ্রামাঞ্চলে, বিশেষত কৃষকেরা অভিশংসন বিষয়টিকে বাড়তি উপদ্রব হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে শহুরে ডেমোক্র্যাটদের কাছে বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামাঞ্চলের ডেমোক্র্যাট সমর্থকেরা বিষয়টিকে সময় ও অর্থের অপচয় হিসেবে দেখছেন। আর শহরাঞ্চলের ডেমোক্র্যাটরা বিষয়টিকে দেখছেন দলীয় জয়-পরাজয়ের সমীকরণে দাঁড়িয়ে। শহরাঞ্চল থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকানদের থ্যাংকসগিভিং ডের ছুটিতে অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে ‘অভিশংসনের পক্ষে’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানোর মাধ্যমে। এ সম্পর্কিত প্রচুর বিলবোর্ড শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন শহরে। গ্রামের দিকে এমন কোনো বিলবোর্ড অন্তত এখনো চোখে পড়েনি। শেষ পর্যন্ত এ বিভক্তি ডিঙিয়ে ডেমোক্রেটিক দল প্রেসিডেন্টের অভিশংসন তদন্ত কতটা এগিয়ে নিতে পারে, তা-ই এখন দেখার বিষয়।