ভালোবাসার রং বদলায়

নিজেকে আজ বড় শক্তিহীন মনে হচ্ছে। উত্তর যেন নিজেরই জানা। জীবনের ধাপ যখন অন্যকে অবহেলা করে, এক সময় সে কারণেই নিজের জীবনের ভুলের মাশুল গুনতে হয়। বাবা-মা নাম রেখেছিল হৃদয়। আমি ছিলাম একমাত্র ছেলে। কলেজে পড়ার সময় রানুর সঙ্গে পরিচয় হয়। রানু তখন কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তাকে প্রথম দেখাতে কেমন যেন ভেতরে তোলপাড় হয়ে গেল। প্রতিদিন রানুকে প্রেম নিবেদনের চেষ্টা করত।
রানু রিকশা নিয়ে কলেজে আসার পথে দাঁড়িয়ে থাকত হৃদয়। রানু অনেক দিন দেখেছে একটি ছেলে খুব সকালে কলেজ যাওয়ার সময় দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রাখতে চাইত। রানুর কাছে ইতস্তত লাগত। রানু বুঝতে পেরে এড়িয়ে যেত। কিন্তু মনের মধ্যে যেন তোলপাড় হয় ওই ছেলেটার জন্য। কেন ও প্রতিদিন আসে ঠিক একই জায়গায়? মাঝে মাঝে মন্তব্য করে আজ বেগুনি সালোয়ার কামিজে তোমাকে অনেক ভালো লাগছে। খোলা চুলে তোমাকে অতুলনীয় লাগছে। আবার কখনো বলত কাল নীল সালোয়ার কামিজ পরবে তো। নীল আমার পছন্দের রং। রানু ভাবে আমার বয়েই গেছে। কেন আমি ওর কথায় নীল পরব। সে কে আমার, কেনইবা এভাবে আবদার করে! রানুর কাছে অবাক লাগে। কিন্তু পরের দিন ঠিকই অনেক রঙের মাঝে নীল সালোয়ার কামিজ খুঁজে বের করে পরে কলেজে যায়। যাওয়ার পথে হৃদয় হাতের ইশারায় বলত অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে। রানুর ভালো লাগত। এভাবে বেশ কয়েক মাস চলতে থাকে। কয়েক মাস পর একদিন হৃদয় রানুর সামনে দাঁড়ায়। ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে রানুর দিকে তাকিয়ে বলে আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
আমি অনেক আগে বলতে চেয়েও বলতে পারিনি। আমার মনে হয় সময় এখন এসেছে তোমাকে আমার মনের কথা বলার। রানু অবাক হলেও এটাই যেন চেয়েছিল মনের অজান্তেই। তাই তো সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ের হাতের ফুল নিজের কাছে নিয়ে নিজের অব্যক্ত কথা বলার জন্য ব্যাকুল হয়ে গেল। আচ্ছা, বলেন তো আপনি প্রতি দিন কেন এভাবে সকালে এখানে দাঁড়িয়ে আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন? কথা শেষ হওয়ার আগেই নিজেই উত্তর দিল ও আজ আমি বুঝেছি। হৃদয় রানুর হাত ধরে বলতে লাগল, আমাকে তুমি বলো না গো, তুমি আমাকে ভালোবাসো। রানু মুচকি হেসে বলে ধ্যাত বুদ্ধু কোথাকার। ভালোই যদি না বাসতাম তোমার দেওয়া ফুল হাতে না মাটিতে পরে থাকতে দেখতে।
—আচ্ছা তোমরা মেয়েরা এমন হেঁয়ালি করে কথা বলো কেন? সত্যি বলো না আমাকে তুমি ভালোবাস। রানু লজ্জায় লাল হয়ে বলল, বলব না, কথা বুঝে নিতে হয়। সেদিন রানুর আর কলেজে যাওয়া হলো না। দুজন এক ভালো লাগার আবেশে যেন ডুবে গেল। পর দিন কলেজে যাওয়ার সময় রানু নিজেকে বারবার আয়নায় দেখছে। অনেক পরিবর্তন লাগছে নিজেকে। আজ হৃদয়ের প্রিয় রঙের একটা সালোয়ার কামিজ যদি পরে যাই কেমন হবে?
আজ এমন আনন্দ লাগছে কলেজে যেতে। খুব আপনজনের যেন দেখা মিলল। ভাবছে, ওকে আজ চমকে দেব তার প্রিয় রঙের সালোয়ার কামিজ পরে। ঘর থেকে বের হয়েই দেখতে পেল রিকশার সামনে হৃদয় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। কাছে যেতেই দুজন একই রিকশায় বসল। রানু কিছুটা লজ্জা পেতে লাগল। কিন্তু ভালো লাগা যেন আলিঙ্গন করে নিল হৃদয়ের পাশে বসা হাত ধরে। বাসা থেকে কলেজ আধা ঘণ্টার পথ। সেদিন যেন মনে হলো অল্প সময়ে কলেজ পৌঁছে গেছে। নামার সময় হৃদয় রানুকে বলল, তুমি নেমে যাও আমি রিকশা নিয়ে অন্য জায়গায় যাব। রানু রিকশা ভাড়া দিতে গেলেই হৃদয় বলল, ওটা তোমার কাছে থাক। রানু দুষ্টুমি করে বলে ফেলল, কেন? এখনই আমার সব দায়িত্ব নিতে চাও।
হৃদয় কথা শেষ হতেই বলল, নিতে নয়, নিয়ে নিয়েছি। ও শোনে, তোমাকে তো আসল কথাই আজ বলা হয়নি। কলেজ শেষে আমরা একটু কফি হাউসে বসব। রানু বলল, আচ্ছা বেশি দেরি করতে পারব না। হৃদয় বলল, না আমি তোমাকে সহজে আজ ছাড়ছি না। এভাবে হৃদয়ের অধিকার নিয়ে কথা বলা রানুর ভীষণ ভালো লাগে। এরপর রানু ক্লাসে গিয়ে ভাবনায় মত্ত হয়ে যায়।
বেলা তিনটায় ক্লাস শেষে দুজনে কফি হাউসে বসেছে। চোখে চোখ রাখতে রানুর যেন ইতস্তত। খাবারের অর্ডার দিল হৃদয়। ওয়েটার এসে অর্ডার নিয়ে চলে গেল। এরই মধ্যে হৃদয় রানুর কাছে এল। হাত ধরল। আলতো করে আধো আলোতে হাতের ওপর চুমু দিতে থাকল। রানু লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। হৃদয় বলল, আমার দিকে দেখ, আমাদের তো আর লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আমরা তো ভালোবাসি তাই না। এরই মধ্যে খাবার এল। ওয়েটার বলল, স্যার আর কিছু লাগবে? হৃদয় বলল, আপাতত না।
খেতে খেতে হৃদয় রানুকে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে লাগল। হৃদয় বলতে লাগল, আমি বাবা-মার একমাত্র ছেলে। পড়ালেখা করার জন্য বাবা আমাকে আমেরিকা পাঠাতে চান। মা চাইছে না। কারণ আমি তাদের একমাত্র ছেলে। কিন্তু আমি আগে চাইতাম বিদেশ গিয়ে পড়ালেখা করব, এখন তোমাকে পেয়েছি তাই আর যেতে চাই না।
রানু বলল, কেন বিদেশ গিয়ে ডিগ্রি নিলে ভালো চাকরি পাবেন। কথাটা শেষ না করতেই হৃদয় বলল, আর আপনি নয় তুমি বলো। রানু বলল, তুমি বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করো, আমাদের জন্য ভালো হবে। হৃদয় রানুর কপালে আলতো চুমু দিয়ে বলল, সে দেখা যাবে। এভাবে সুন্দর ভালোবাসার একটা বছর কেটে গেল। দুজন খুব আপন হয়ে গেল এই এক বছরের মধ্যে। এভাবে দুজন দুজনের অনেক কাছে চলে এল। হঠাৎ রানু টের পেল ওর শরীরের পরিবর্তন। ও তাহলে মা হতে যাচ্ছে! সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়কে ফোন করে বলল, হৃদয় আমাদের তো একটা বিরাট ভুল হয়ে গেছে। আমি তো মনে হয় মা হতে যাচ্ছি। হৃদয় শুনেই তার স্বর পরিবর্তন করে বলল, এটা কীভাবে সম্ভব? রানু বলল, আমার বাবা-মা জানলে আমার সমস্যা হবে। দেখি আমি কী করতে পারি—হৃদয়ের জবাব।
হৃদয় এখন আর আগের মতো রিকশার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে না। ফোন করলে আগের মতো ফোন আর ধরে না।
একদিন রানুর মা রানুকে বলল, আমাদের পাশের বাড়ির মেয়েটির আজ গায়েহলুদ। আমি যাচ্ছি তুইও চল। রানু বলল, না মা তুমি যাও। আমার ভালো লাগছে না। এরই মধ্যে রানুর মা পাশের বাড়ি গেলে রানু হৃদয়কে ফোন করে। হৃদয় ফোন ধরে বলল, রানু আমি জানি না আমি কী করব। কারণ আজই আমার আমেরিকা যাওয়ার ফ্লাইট। রানু কাঁদতে থাকে ফোনে আর কাকুতি মিনতি করে বলে আমাকে এ অবস্থায় ফেলে রেখে তুমি যেও না। তুমি যেতে পার না। হৃদয় বলে রানু আমার যেতেই হবে আজ। তবে আমি আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে বলে যাচ্ছি, ও তোমাকে সাহায্য করবে। রানু আজ তার হৃদয়কে চিনতে পারছে না। আজ রানুর কাছে কান্না ছাড়া কোনো সম্বল নেই। ঘৃণা ভরা বুক নিয়ে কী করবে বুঝতে পারছে না।
আত্মহত্যার পরিকল্পনা করছে রানু। মা-বাবা জানার আগেই। কিন্তু সেটা করতে পারছে না, কারণ এতে বাবা-মাকে সারা জীবন ধিক্কার নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। পরের দিন রানু কলেজে যাবে বলে রিকশা নেবে। এমন সময় রানু দেখল অনেক শান্ত স্বভাবের একটি ছেলে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরিচয় দিল, ভয় পাবেন না, আমি হৃদয়ের বন্ধু শামীম। আমি ডাক্তারি পড়ছি। রিকশায় উঠুন। তাহলে ওর বন্ধু সব জেনে গেছে? রানু আগে শামীমের কথা হৃদয়ের কাছে শুনেছে। বলল, আপনি এখানে কী চাইছেন? শামীম বলল, না আমি এখানে এসেছি হৃদয়ের অনুরোধে।—আপনি আমাকে চিনলেন কীভাবে? হৃদয় আমাকে সব সময় আপনার ব্যাপারে বলত। হুহু করে কেঁদে ফেলল রানু।
শামীম বলল, প্লিজ, কাঁদবেন না। আমি জানি আপনি অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। আমি হৃদয়কে অনেক বোঝাতে চেয়েছি, তুই রানুর এই অবস্থায় সমাজের সামনে ফেলে যেতে পারিস না। ওর একটাই কথা আমি এখন কী করব? আমার আমেরিকা যেতেই হবে। আমার সময় হয়ে গেছে আমেরিকা যাওয়ার। আমি এই সময় বিয়ে করতে পারব না। হৃদয় চলে গেল রানুকে না বলে।
শামীম রানুকে বলল, আগামীকাল আমি আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাব। রানু কোনো কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেল। পরদিন রানু সবকিছু নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। শামীম আর রানু গাড়িতে করে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছে। গত কয়েক দিন ঘুম হয়নি, তাই আজ গাড়িতে চোখ লেগে গেছে কখন বুঝতেই পারেনি। শামীমের কাঁদে ওর মাথা দিয়ে পরম শান্তিতে যেন ঘুম চলে এসেছে। শামীম দেখছিল রানুকে। কি যে অপরূপা দেখতে। এত কষ্টের মাঝেও ঠোঁটের কোনায় কোথায় যেন মিষ্টি হাসি উঁকি দিচ্ছে। হাসপাতাল চলে এসেছে, কীভাবে ডাকবে রানুকে।
—এই রানু ওঠ, আমরা চলে এসেছি। রানু উঠে গাড়ি থেকে নেমে হাসপাতালের দিকে ধীরে ধীরে হেঁটে চলছে। সবকিছু চেকআপ শেষ। বাচ্চার বয়স চার মাস। অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যখন ডাক্তার রেডি, তখনই কান্নায় ভেঙে পড়ল রানু। ডাক্তার শামীমকে ডেকে পাঠালেন। শামীম বাইরে নিয়ে রানুকে বোঝাতে চাইল। রানু শামীমের পা ধরে বলল, তুমি শুধু একদিনের জন্য আমাকে বিয়ে করে এই বাচ্চার বাবার পরিচয় দাও। আমি কথা দিচ্ছি আমি তোমার জীবন থেকে চলে যাব। শুধু সমাজ জানবে আমি একটি সুন্দর রীতিতে এই সন্তানের জন্ম দিয়েছি। ও অবৈধ সন্তান হবে না। হৃদয়ের কাছে সব সময় রানুর গল্প শুনত। রানুর কষ্ট দেখে শামীম দুর্বল হয়ে গেল।
রানুকে পায়ের কাছ থেকে তুলে বলল, তুমি আর কেঁদো না। দেখি আমি কী করতে পারি। শামীম ভেতরে গিয়ে ডাক্তারকে বলল আমি ওকে বুঝিয়ে পরে আসব। এই বলে দুজনে গাড়ি নিয়ে সোজা কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ঘরে ফিরল। ঘরে গিয়ে মাকে বলে সব কথা। মা হতভম্ব হয়ে যায় সব শুনে। শামীম মাকে বলে কোনো চিন্তা করবেন না, আজ থেকে ওর সব দায়িত্ব আমার। আমি ডাক্তারি পড়ছি, ফাইনাল ইয়ারে। আপনার মেয়ে ভালো থাকবে।
মা দেখলেন মেয়ে যোগ্য পাত্রের কাছে গিয়েছে। শুরু হলো রানু ও শামীমের জীবন। একই বাড়িতে পাশাপাশি রুমে থাকা। বাচ্চা রানুর গর্ভে বড় হতে লাগল। সময় হয়ে এসেছে। সারা রাত শামীমের ঘুম নেই। শিশুর কান্নার শব্দ, ছেলে হয়েছে। রানু সুস্থ আছে তো! শামীম উদ্‌গ্রীব। পরদিন রানুকে বলল, এবার ঘরে ফেরার পালা। ধীরে ধীরে শিশু বড় হচ্ছে শামীম ও রানুর আদরে। এখন প্রায় চার বছর বয়স। শামীম আর কিছু ভাবতে পারে না ওদের দুজনকে ছাড়া। রানুকে বউ হিসেবে মেনে নিল। যদিও দুজন দুই রুমে এখনো থাকে। দিন যত যাচ্ছে শামীম বাচ্চার মায়ায় জড়িয়ে পরছে। ভালোই দিন কাটছে ওদের তিনজনের।
রানু একদিন শামীমকে বলল, এখন তো আমাদের ছেলে আবির্ভাব বড় হয়েছে। আমি একটা চাকরি করতে চাই। তারপর তুমি আর একটা বিয়ে করো। এভাবে তো তোমার জীবন হতে পারে না। শামীম শুনে বলল, বিয়ে মানুষের একবার হয়। আর আমি আবির্ভাবকে ছেড়ে কোথাও যাব না। তোমার চাকরি করতে হবে না। তোমাদের সব দায়িত্ব আমার। শামীমের প্রতি রানুর শ্রদ্ধা দিন দিন বাড়ছে।—তাই বলে তোমার নিজের জীবনে কোনো চাওয়া পাওয়া থাকবে না? শামীম উত্তর দেয় পাওয়ার সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একেক রকম। আমার যা পাওয়ার তা আমি পেয়েছি। আজ থেকে আর কখনই বলবে না আমাকে বিয়ে করার কথা। রানু মাথা নত করে কিছু না বলে চলে গেল।
আবির্ভাব দৌড়ে শামীমের কাঁধে এসে বসেছে, আর বাপ্পীকে ঘোড়া বানিয়ে খেলছে। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ। শামীম দরজা খুলে চমকে গেল। ওর মুখে যেন কোনো ভাষা নেই। হৃদয়! হৃদয় বলল, আরে আমাকে আসতে বলবি না ভেতরে। শামীম আসতে বলে ভেতরে। জিজ্ঞেস করে, কবে ফিরলি? গতকাল ফিরেছি। তা এতকাল পর ফিরে এলি যে। দোস্ত আমি এত দিন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। অর্থ সম্পদকে ভেবেছিলাম সুখ। আসলে আমি সেদিন রানুর সঙ্গে অনেক অন্যায় করেছি। না জানি আমার কারণে ওকে কত লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছে! তোকে বন্ধু অনেক ধন্যবাদ। আমি শুনেছি রানুকে তুই মিথ্যা বিয়ে করে এখানে রেখেছিস। আমার রানুকে ফিরিয়ে নিতে এত বছর পার করে এসেছি।
শামীম বুক ভরা ব্যথা নিয়ে ঘরের ভেতর চলে গেল। রানুকে বলল, হৃদয় এসেছে। শামীম দেখল, রানুর কোনো আকুলতা নেই। সে আবির্ভাবকে নিয়েই ব্যস্ত। শামীম আবার হৃদয়ের কাছে গিয়ে বসল। হৃদয় বলল, আমি সব শুনেছি দোস্ত। আমি এখন প্রতিষ্ঠিত, আমি আমার রানুকে ফেরত চাই। আমি ফিরে এসেছি। এরই মধ্যে আবির্ভাব দৌড়ে শামীমকে জড়িয়ে ধরে বলে বাপ্পী উনি কে? শামীম বলতে পারছিল না উনি কে। এরই মধ্যে রানু রুমে ঢুকে বলল, উনি বাইরের মানুষ। আমাদের কেউ না। উনি মনে হয় তোমার বাপ্পী আর আমার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছেন। এ কথা শুনে হৃদয় হতভম্ব হয়ে গেল।
রানু আবির্ভাবকে নিয়ে ভেতরে গেল। হৃদয় বলল, তোরা বিয়ে করেছিস? শামীম অনেক রাগ নিয়ে শুধু বলল, শিশুটিকে যাতে বৈধ করে দুনিয়ায় আনতে পারি তাই বিয়ে করেছিলাম। তাহলে আবির্ভাব আমারই ছেলে? হ্যাঁ। আমি আমার বউ আর বাচ্চাকে আবার ফিরিয়ে নিতে চাই।
শামীম কিছু না বলে রানুকে কথা বলার জন্য হৃদয়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়। রানু হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার অতীত মৃত। আমার বর্তমান এখন শামীম। আশা করি আমাদের সংসারে বাইরের কোনো লোক বিরক্ত করতে আর আসবে না। হৃদয় যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিল না। বারবার আবির্ভাবকে একটু দেখার অনুরোধ করছিল। রানু হাতের ইশারায় বের হওয়ার দরজা দেখিয়ে বলছিল, এই মুহূর্তে প্লিজ চলে যান।
হৃদয় উঠে দড়িয়ে বলল, আজ আমার নিজের পরাজয় নিজের কর্ম ফলের জন্য। আমার ধন সম্পদের আজ অভাব নেই, তবে আমি সত্যিই আজ ভিক্ষুক। আমি পরাজিত। ভালোবাসার নীল রং বদলে গেছে।