প্রথম নারী ধারাভাষ্যকার

তামান্না সিদ্দিকী
তামান্না সিদ্দিকী

তামান্না সিদ্দিকী (ইউনা)। বাংলাদেশের প্রথম নারী ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার। দেশে একটি বেসরকারি বেতারে নিয়মিত ধারাভাষ্য দেন। আন্তর্জাতিক এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়ে সম্পতি নিউইয়র্ক নগরে এসেছিলেন। ভয়েস অব আমেরিকার নিউইয়র্ক প্রতিনিধি আকবর হায়দার প্রথম জানান তাঁর কথা। তাঁর কথার সূত্র ধরে তামান্নার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা। জ্যাকসন হাইটসের এক অফিসে দেখা ও কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তাঁর কথা শুনে মুগ্ধ ও বিস্মিত হলাম। খেলাধুলাসহ নানা বিষয়ে তাঁর জ্ঞানের গভীরতা আর সেটা সরল প্রাঞ্জল ভাষায় বলতে পারা নিঃসন্দেহে একটা বড় গুন। 

ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটরস লিডারশিপ প্রোগ্রামের আওতায় নিউইয়র্কে এসেছেন তামান্না। এখানে সেমিনারের বিষয় ছিল ‘ওমেন এমপাওয়ারমেন্ট থোরো স্পোর্টস জার্নালিজম’। মোট ৪৭ দেশের প্রতিনিধি এতে অংশ নেয়। বাংলাদেশ থেকে একমাত্র তামান্নাকেই নির্বাচন করা হয়েছে। আর এই নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেছে আমেরিকান অ্যাম্বাসি অব বাংলাদেশ। সেমিনার ছাড়াও এই সফরে তামান্না স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ও সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা করেছেন। এভাবেই তাঁর সঙ্গে দেখা জ্যাকসন হাইটসের বাংলা ভিশন অফিসে। নিউইয়র্কপ্রবাসী তামান্নার দুই সহপাঠী দেখা করতে এসেছিলেন তাঁর সঙ্গে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ মাস্টার্স করেছেন তিনি। পরে এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন।
তামান্নার বাবার নাম ইকবাল আহমেদ সিদ্দিকী। মা ডা. তাহেরা সিদ্দিকী ব্রেন টিউমারে মারা যান যখন তামান্না বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তরুণ বয়সের ওই ঘটনায় মানসিকভাবে তাঁকে অনেক বেশি শক্তিশালী করেছে। এমনিতে স্কুলজীবন থেকে তিনি খুব সংগঠনপ্রিয়। সৃষ্টিশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে ভালোবাসেন। পাশাপাশি ব্যতিক্রমী যেকোনো কাজ তাঁকে খুব টানে।
একজন ধারাভাষ্যকার হিসেবে নিজের সূচনাটা সহজ ছিল না। কারণ এখনো বাংলাদেশের মানুষ বাঙালি মেয়েদের এই পেশায় দেখতে অভ্যস্ত হয়নি। এই নিয়ে তামান্না বলেন, ‘আমার শুরুটা ছিল উপস্থাপনা দিয়ে। যার জন্য আমার মধ্যে তেমন দ্বিধা কাজ করেনি। তবে একটা ব্যাপার, আমি তো খেলোয়াড় নই। কখনো ক্রিকেট বা ফুটবল খেলিনি। আর এই দুই খেলারই ধারাভাষ্য দিতে হয় বেশি। তাই যখন শুরু করলাম, দেখি চারপাশে সবাই পুরুষ। আমি একা ছিলাম। সেই জায়গাটিতে সবাই আমাকে সহায়তা করেছেন। কিছু বাধা তো ছিলই। খেলা বোঝা, নিয়ম-কানুন জানা একটা বড় ব্যাপার। এটা একটা ধৈর্য্যেরও পরীক্ষা বটে। কারণ প্রেসবক্সে আট ঘণ্টা বসে থাকতে হয়।’
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেটের সাফল্য আপামর মানুষের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কারণে ধারাভাষ্য দেওয়াকে বিরাট চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তামান্না। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ছয় থেকে আট ঘণ্টা একটা খেলা দেখা, বোঝা, তারপর সেটি নিয়ে কমেন্ট্রি সহজ নয়।’
একজন ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার হিসেবে আমেরিকা সফরের সময় তামান্নার সুযোগ হয়েছে এই দেশের অনেক ক্রীড়া সাংবাদিকের কথা শোনার। পাশাপাশি অনেক ক্রীড়া স্থাপনা দেখার। একাধিক অঙ্গরাজ্যে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে তাঁর। তবে যেখানে গেছেন, সেখানে এটি ভেবে খারাপ লেগেছে, বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা উন্নত মানের সুযোগ পেলে হয়তো অনেক ভালো ফলাফল করতে পারত। একটা গেমসকে সামনে রেখে মাত্র এক মাস আগে থেকে প্রশিক্ষণ শুরু করে কত দূর আর যাওয়া সম্ভব !
ক্রীড়াঙ্গণে নারীদের ক্ষেত্রে নানা বৈষম্য তামান্নাকে পীড়া দেয়। তিনি বলেন, ‘দেখুন এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ কখনো চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। সেখানে বাংলাদেশের মেয়েরা সেই সাফল্য এনে দিয়েছে। বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে তাঁরা। কিন্তু তার বিনিময়ে কি পেয়েছে? পুরুষ ক্রিকেটারদের তুলনায় তাদের বেতন অতি সামান্য। অথচ তাদেরও তো সমান পরিশ্রম করতে হয়। আমেরিকা এসে ভালো লেগেছে, এখানে নারী-পুরুষ উভয়কে ক্রীড়া ক্ষেত্রে সমানভাবে মাপা হয়। পুরুষ সকার টিমের চেয়ে এ দেশের নারী সকার টিম অনেক বেশি জনপ্রিয়।’
ভবিষ্যতে ক্রীড়া ধারাভাষ্যকারের কাজ করার পাশাপাশি ক্রীড়া বিষয়ক টুরিজম করার ইচ্ছা আছে তামান্নার। ধারাভাষ্যের পাশাপাশি আরও কিছু কাজের সঙ্গে যুক্ত তিনি। এর মধ্যে আছে ভারমিলন ফিল্ম সোসাইটির সদস্যপদ, বৈকুণ্ঠ আবৃত্তি একাডেমির হয়ে পারফরমেন্স।