১০ লাখ ডলার বিনিয়োগে ভিসা

নিউইয়র্কভিত্তিক বাংলাভাষী টাইম টেলিভিশনের জনপ্রিয় ‘ল অ্যান্ড ইমিগ্রেশন’ অনুষ্ঠানে ইমিগ্রেশন বা অভিবাসন নিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন অভিজ্ঞ অ্যাটর্নি নাজমুল আলম। অনুষ্ঠানটি কোন আইনি পরামর্শ নয়, ইমিগ্রেশন নিয়ে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে একটি দিক্‌নির্দেশনা পাওয়া যায় মাত্র। গত ২৯ নভেম্বর প্রচারিত অনুষ্ঠানে ইমিগ্রেশন নিয়ে দর্শকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন অ্যাটর্নি নাজমুল।
আমেরিকায় ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগ ভিসা নিয়ে আলোচনা করেন অ্যাটর্নি নাজমুল। জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশের যে সব ব্যবসায়ী আমেরিকায় কোন ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে চায়, তাহলে তারা কীভাবে ভিসা পাবেন? কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে? কত বিনিয়োগ করলে তাঁরা এ দেশে ইমিগ্রেশন ভিসা বা লিগ্যালিটি পাবে?
জবাবে অ্যাটর্নি নাজমুল বলেন, এটা হচ্ছে ইনভেস্টর ক্যাটাগরি ভিসা। এতে প্রথম যে ক্যাটাগরিতে ভিসা পাবেন তা হচ্ছে ইভি-৫ ক্যাটাগরি। এই ক্যাটাগরিতে আমেরিকাতে আন্ডার প্রিভিলাইজ্‌ড এরিয়াতে ১০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে ব্যবসা করতে পারবেন। সেই ব্যবসায় অন্তত ১০ জন লোক বছর ধরে কাজ করলে, তাদের কাজের ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীকে দুই বছরের জন্য একটি টেম্পরারি ওয়ার্ক কার্ড দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এই ক্যাটাগরিতে স্ত্রী, ছেলেমেয়েকে ভিসা দেওয়া হবে। ছেলেমেয়েরা ২১ বছরের নিচে বয়স ও অবিবাহিত হতে হবে এবং এসব ছেলেমেয়ে এ দেশে যেকোনো স্কুল–কলেজে পড়ালেখা করতে পারবে। এমনকি বিনিয়োগকারীর স্ত্রী/স্বামীও ওয়ার্ক পারমিট পাবেন এবং যোগ্যতা অনুযায়ী তিনি ভালো কাজও করতে পারবেন।
অ্যাটর্নি আরও বলেন, ১০ লাখ ডলার ছাড়াও ৫০০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করা যাবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর টাকাটা অন্য কোন বড় কোম্পানির মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হবে। তখন তারা বিনিয়োগকারীকে একটা টেম্পরারি গ্রিনকার্ড দিতে আমেরিকার সরকারের কাছে আবেদন করবে। এই বিনিয়োগ অবশ্য একটি বিনিয়োগকারী পুলের কাছে অর্থাৎ একটি সিন্ডিকেটের হাতে যাবে। তবে এই পদ্ধতিতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা একটু দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন। কারণ এতে তাদের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ১০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করার মতো অর্থ থাকলে নিজেই বিনিয়োগ করাই ঠিক হবে বলে জানান। এতে বিনিয়োগকারী নিজের হাতে অর্থটা লেনদেন করবেন এবং ব্যবসার মালিক ইনভেস্টর নিজেই থাকবেন।
অ্যাটর্নি নাজমুল বলেন, আরেক ধরনের ক্যাটাগরিতেও ইনভেস্টরের ভিসা পাওয়া যাবে। তা হলো ই-২ ক্যাটাগরি ভিসা। তবে এই ক্যাটাগরিতে গ্রিনকার্ড পেতে সময় লাগে। এই পদ্ধতিতে ইনভেস্টর আমেরিকায় এসে একটা ব্যবসা চালু করবেন। তা হালাল পশুর ফার্ম বা হালাল ফুডের গ্রোসারির ব্যবসা হতে পারে। এতে একজন ব্যবসায়ী ১০০ হাজার ডলার ইনভেস্ট করে যেকোনো বৈধ ব্যবসা করতে পারেন। পরিবারসহ এই ভিসা পাবেন। তবে ছেলেমেয়ের বয়স ২১ বছরের নিচে ও অবিবাহিত হতে হবে। এই পদ্ধতিতেও স্ত্রী/স্বামী ওয়ার্ক পারমিট পাবে এবং যেকোনো ধরনের ভালো ইনকামের কাজ করতে পারবে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়াও করতে পারবে। এই ব্যবসায় কতজন লোক নিয়োগ করতে হবে, তাঁর কোন বাঁধাধরা সংখ্যা নেই। এই ব্যবসা পার্টনারশিপেও করতে পারবেন। তবে এতে মেইন ইনভেস্টর ৫১ শতাংশ ইনভেস্ট করতে হবে। পার্টনার আমেরিকার সিটিজেন হওয়ার কোন দরকার নেই।
বাংলাদেশ থেকে কীভাবে আমেরিকায় অর্থ আনা যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল বলেন, ইনভেস্টমেন্টের অর্থ অবশ্যই বৈধ হতে হবে। এটা আমেরিকার সরকারের একটি শর্ত। বৈধ উৎসের অর্থ কোন তৃতীয় দেশের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। যেমন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং ইত্যাদি দেশের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। কারণ বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যে সরাসরি লেনদেনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
অ্যাসাইলাম বা আশ্রয়ের আপডেট সম্পর্কে নাজমুল বলেন, অ্যাসাইলামের আবেদনকারী এখন ওয়ার্ক পারমিট পেতে এক বছর লাগবে, যা আগে ছিল ছয় মাস।
অ্যাসাইলামের অ্যাপ্লিকেশন বা আবেদনের জন্য এখন ফি দিতে হবে। এই প্রস্তাব পাস হয়ে গেছে। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই তা চালু হবে। অ্যাসাইলামের জন্য তিনি একটা সুখবরও দেন। তা হচ্ছে, কেউ যদি মামলার সঠিক কাগজপত্র সঠিকভাবে উপস্থাপন, সঠিক ল’ ফার্মের মাধ্যমে প্রক্রিয়া করিয়ে আবেদনপত্র জমা দেন, তা হলে তাঁর অ্যাসাইলাম অ্যাপ্লিকেশন মঞ্জুর হতে পারে।
স্টুডেন্ট ভিসার ব্যাপারে অ্যাটর্নি নাজমুল বলেন, এসব ভিসায় যারা আসতে চান, তারা যেন কোন দালালের মাধ্যমে কাজ না করান। অবশ্যই যেন কোন ভালো ল’ ফার্মের মাধ্যমে করেন।
নাজমুল ভারতের একটি দালাল চক্রের ভুয়া এজেন্সির কথা উল্লেখ করে বলেন, কেউ যেন এমন কোন বিজ্ঞাপন দেখে বিশ্বাস না করে, যেখানে অ্যাডমিশনের সীমিত সময় উল্লেখ দেখায়—এত দিনের মধ্যে অ্যাডমিশন না নিলে আর সুযোগ পাবে না। এসব বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাই এরূপ দালালের মাধ্যমে কেউ যদি ভিসা পেতে চান, তাহলে তারা যেন অবশ্যই ভালো করে আগে অনুসন্ধান করেন। জেনে নিন, এই এজেন্সির সঙ্গে কোন ভালো ল’ ফার্ম জড়িত আছে কিনা। যদি ল’ ফার্ম থাকে, তাহলে ওই ল’ ফার্মের সঙ্গে সরাসরি ফোনে যোগাযোগ অথবা ইমেইল করে জেনে নিন, ওই এজেন্সির সঙ্গে তাদের সংযোগ আছে কিনা। যদি তারা বলে সব ঠিক আছে, তাহলে আবেদন করতে পারেন।
শফিকুল ইসলাম নামের এক দর্শকের প্রশ্ন ছিল, তার পরিবারের কিছু সদস্য সরকারি বেনিফিট যেমন ফুড স্টাম্প ইত্যাদি নিচ্ছেন। এতে সিটিজেনশিপে কোন অসুবিধা হবে কি?
জবাবে নাজমুল বলেন, কোন অসুবিধা হবে না যদি তা বৈধভাবে হয়। এটি ট্রাম্প প্রস্তাব করেছিলেন কিন্তু এখনো কার্যকর হয়নি।
দর্শক শারমিন আক্তার প্রশ্ন করেন, তাঁর স্বামীর জন্য আবেদন করেছেন এবং ওয়েলকাম লেটার আসছে। এখন আর কত দিন লাগবে? ডিসেম্বরের আগে যদি কোন লেটার না আসে, তাহলে কি তাকে আবার আবেদন করতে এবং ফি দিতে হবে?
উত্তরে নাজমুল বলেন, আর কোন আবেদন ও ফি ওয়েভারও দিতে হবে না।
আরেক দর্শক ইসরাত জাহান জানতে চান, তাদের সৎ মাকে অফিশিয়ালি আপন মা বলেছেন। মা এখন এখানে আছেন। অন্য বোনদের জন্য আবেদন করেছেন। এখন অনুসন্ধানে ধরা পড়লে কি কোনো অসুবিধা হবে?
জবাবে নাজমুল বলেন, ইমিগ্রেশনের ব্যাপারে নিজের জন্মদাতা মা ছাড়া অন্য কাউকে মা বলা যাবে না। এটা গ্রহণযোগ্য নয়, পরবর্তীতে অসুবিধা হবে। তিনি একজন আইনজীবীর পরামর্শ নিতেও বলেন।
দর্শক মোজাম্মেল হকের প্রশ্ন ছিল, মায়ের জন্য আবেদন করেছি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। অ্যাপ্রুভাল লেটার পেয়েছি চলতি বছরের এপ্রিলে। এ পর্যন্ত আর কোনো চিঠি পাইনি। এখন কি করতে হবে?
নাজমুল আলম ভিসা অফিসে ফোন করে বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দেন।
মিলু ভূঁইয়া জানতে চান, তিনি তাঁর সন্তানদের জন্য পিটিশন করেছেন। কিন্তু তিনি মারা গেলে তার সন্তানেরা আসতে পারবে কিনা?
উত্তরে নাজমুল বলেন, সুযোগ আছে। কিন্তু প্রসেসটা একটু জটিল। এ ব্যাপারে ওয়াশিংটন ডিসিতে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টে হিউম্যান সিকুরিটিতে মানবিক আবেদন করতে হবে। যদি আবেদনটি গ্রান্ট হয়। তারা অ্যাম্বাসিকে বলে দেবে, মানবিক কারণে তাদের ভিসা দেওয়া হবে।
এনাম উদ্দিন প্রশ্ন করেন, বিবাহিত ছেলেমেয়ের জন্য নাগরিক মা আবেদন করলে কত দিন লাগবে?
উত্তরে নাজমুল বলেন, ৬ থেকে ৭ বছর লাগবে। কারণ এই আবেদনটি তৃতীয় ক্যাটাগরিতে পড়ে।
দর্শক আলমগীর জনি প্রশ্ন করেন, অ্যাসাইলাম থাকাকালে ইনভেস্টর ভিসার জন্য কি আবেদন করা যাবে?
জবাবে নাজমুল বলেন, যদি আপনার স্ট্যাটাস থাকে। এই ক্যাটাগরিতে এক স্ট্যাটাস থেকে আরেক স্ট্যাটাসে চেঞ্জ করতে হয়। তাই আপনার আগের স্ট্যাটাস ঠিক থাকতে হবে, তাহলে পারবেন। এ ব্যাপারে একজন আইনজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

ভিসা সম্পর্কিত বার্তা

পরিবারভিত্তিক এবং চাকরিভিত্তিক ভিসা প্রদানের বার্ষিক সংখ্যা কংগ্রেস কর্তৃক সীমাবদ্ধ। এই ক্যাটাগরির আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার নির্ধারিত হয় যদি তাঁদের অগ্রাধিকার তারিখ হালনাগাদ থাকে ও ভিসার সংখ্যা বর্তমান থাকে। যদিও সম্ভাবনা আছে, অগ্রাধিকার তারিখের পরিবর্তন হতে পারে এবং সাক্ষাৎকারের সময় ভিসার সংখ্যা আর বর্তমান নাও থাকতে পারে। আপনার ক্যাটাগরির ভিসার সংখ্যা যদি বর্তমান না থাকে, তবুও আপনার সাক্ষাৎকার যথা সময়ে হবে, তবে আপনার ভিসা ততদিন পর্যন্ত ইস্যু হবে না, যতদিন পর্যন্ত অগ্রধিকার তারিখ হালনাগাদ হয় এবং নতুন ভিসার সংখ্যা বর্তমান হয়। সকল অভিবাসী ভিসা আবেদনকারীগণ তাঁদের অগ্রাধিকার তারিখের অগ্রগতি সম্পর্কে জানার জন্য পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে (https://bit.ly/2EfaUuN) ভিসা বুলেটিন দেখতে পারেন।

বর্তমানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে সকল তারিখ সমূহের কাজ চলছে?

মাস : ডিসেম্বর ২০১৯

F1 : ১৫ মে ২০১৩: (আমেরিকান নাগরিকদের অবিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য)
F2A : চলতি: [এলপিআর ব্যক্তিদের স্বামী বা স্ত্রী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য (দেশভিত্তিক কোটা সাপেক্ষে)]
FX : ০১ জুলাই ২০১৯: (F2A কেইসেস যাদের অগ্রাধিকার তারিখ পুরোনো)
F2B : ০৮ আগস্ট ২০১৪: [এলপিআর ব্যক্তিদের অবিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য (২১ বছর বা উপরে)]
F3 : ০৮ নভেম্বর ২০০৭: (মার্কিন নাগরিকদের বিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য)
F4 : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০০৭: (প্রাপ্ত বয়স্ক মার্কিন নাগরিকদের ভাই/বোন ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)

এমপ্লয়মেন্ট ভিসা
E1 : ১৫ জুলাই ২০১৮
E2 : চলতি: (বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি অথবা বিশেষ ডিগ্রীধারী)
E3 : চলতি: (দক্ষ কর্মী ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)
EW : চলতি: (অদক্ষ কর্মী ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)
E4 : চলতি: সার্টেন স্পেশাল ইমিগ্রান্ট
E5 : চলতি: ইমপ্লয়মেন্ট ক্রিয়েশন