ভারত কালামকে মনে রাখবে

>আমাদের বয়সী যাঁদের ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান দেশভাগের আগের জন্ম, তাদের স্কুল, কলেজের পাঠ্যপুস্তকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাহিত্যক্ষেত্রে মুসলমানদের অনেক ভূমিকা ও উপস্থিতি পরিলক্ষিত হতো। ধীরে ধীরে সিলেবাস বদল হতে হতে, বিশেষত ইতিহাস বারবার পুনর্লিখিত হওয়ার ফলে, ভারতের নানা ক্ষেত্রে মুসলমানদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অবদানের কথা একরকম ধামাচাপা পড়ে গেছে। এর ফলে নতুন প্রজন্মের কাছে তা অজানা আর চোখে না পড়ার ফলে বয়স্কদের কাছেও সেসব স্মৃতিও আর বেঁচে নেই। ভারতের স্বাধীনতাপূর্ব, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতা পরবর্তীকাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সব ক্ষেত্রেই মুসলমানদেরও যে অনেক মূল্যবান অবদান আছে, সে সম্পর্কে পাঠকদের জানাতে এই ধারাবাহিক লেখা
এ পি জে আবদুল কালাম
এ পি জে আবদুল কালাম

দ্বিতীয় পর্ব
ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এ পি জে আবদুল কালামের মৃত্যুর সংবাদে সারা দেশে এক সপ্তাহব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হয়। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজেপি নেতা রাজনাথ সিংসহ বহু নেতা তাঁর মৃত্যুতে শোক ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘এটি আমাদের সায়েন্টিফিক কমিউনিটির জন্য একটি দারুণ ক্ষতি। তিনি ভারতকে একটি মহান উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। আসলে তিনিই আমাদের পথ দেখিয়েছেন।’

আারেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেন, ‘আমরা এমন একজন ভারতীয়কে হারিয়েছি, যিনি ভারতের ডিফেন্স টেকনোলজিতে অভূতপূর্ব অবদান রেখে গেছেন। তিনি আমার সরকারেরও রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আমি তাঁর সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি এবং তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তাঁর অবদান ভারতবাসী বংশপরম্পরায় মনে রাখবে।’

ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (আইএসআরও) জি মাধবন নায়ার বলেন, ‘তিনি একজন বিশ্বনেতা। সুযোগবঞ্চিত ও গরিব মানুষ ছিল তাঁর কাছে সবার আগে। তিনি তাঁর মনের চিন্তাধারার কথা বলে নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করে গেছেন। তাঁর এই শূন্যস্থান কখনো পূরণ হবে না।’

এ ছাড়া এশিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা সবাই একজন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী, নেতা ও জনদরদি মানুষ হিসেবে আবদুল কালামের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন।

স্মৃতিরক্ষা: রামেশ্বরম দ্বীপ শহরের পেই কারুম্বুতে ‘ড. এ পি জে আবদুল কালাম ন্যাশনাল মেমোরিয়াল’ নামে জাতীয় স্মৃতিসৌধটি ২০১৭ সালের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করেন। সেখানে যেসব রকেট ও মিসাইল প্রজেক্টে কালাম কাজ করেছিলেন, সেগুলোর প্রতিকৃতি রয়েছে। এই জননেতার জীবনের বহু বিচিত্র ঘটনাও চিত্রায়িত করে প্রদর্শিত হচ্ছে। বীণা বাজাচ্ছেন, এমন একটি কালামের মূর্তি প্রবেশদ্বারে রক্ষিত আছে। তাঁর দাঁড়ানো ও বসা অবস্থায় আর দুটি ছোট মূর্তিও ওখানে রাখা আছে।

ব্যক্তিগত জীবন: কালামদের ৪ ভাই ও এক বোনের মধ্যে বোনটাই সবার চেয়ে বড়। এক ভাই মোহাম্মদ মুথু মিরা লেব্বাই ছাড়া বাকিরা দুনিয়া ছেড়ে গেছেন। তিনি প্রতি মাসে ওই পরিবারকে কিছু কিছু টাকা পাঠাতেন। নিজে বিয়ে করেননি। তিনি খুবই সত্যবাদী ছিলেন। অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করতেন। তাঁর কোনো টেলিভিশন ছিল না। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠতেন ও রাত ২টায় ঘুমাতে যেতেন। সম্বলের মধ্যে ছিল তাঁর বই, একটি বীণা, কিছু কাপড়চোপড়, একটি সি ডি প্লেয়ার ও একটি ল্যাপটপ। মৃত্যুকালে তিনি কোনো উইল রেখে যাননি। তাঁর যা কিছু সম্বল, তা তাঁর বেঁচে থাকা বড় ভাইয়ের কাছে চলে যায়।

২০১১ সালে ‘আই অ্যাম কালাম’ নামে আবদুল কালামকে স্মরণ করে একটি হিন্দি চলচিত্র নির্মিত হয়, যেখানে গরিবদের জীবনে প্রভাব ফেলার মতো একজন মানুষ হিসেবে তাঁকে দেখানো হয়েছে। রাজস্থানের ‘ছোটু’ নামের যে শিল্পী তাঁর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তিনি এই আদর্শ মানুষের গুণে মুগ্ধ হয়ে নিজের নাম পাল্টিয়ে রেখেছেন ‘কালাম’।

ধর্মীয় ও দার্শনিক মতবাদ: ধর্ম ও দর্শন এই দুই বিষয়ই কালামের জীবনে খুবই মূল্যবান ও প্রাণপ্রিয় বিষয় ছিল। বস্তুত তাঁর দার্শনিক যাত্রার কথা তিনি তাঁর জীবনের শেষ বই ‘ট্র্যান্সেনডেন্সঃ মাই স্পিরিচুয়াল এক্সপেরিয়েন্স উইথ প্রমুখ স্বামীজিতে (উৎকর্ষ প্রমুখ স্বামীজির সঙ্গে আমার দার্শনিক যাত্রা)’ লিখে গিয়েছেন।

আবদুল কালাম নিজে একজন গর্বিত ও প্রকৃত মুসলিম ধর্ম চর্চার মানুষ ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও রোজা তাঁর প্রাত্যহিক জীবনের কাজকর্মের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই শিক্ষা মজ্জাগতভাবে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার বিষয়ে বিশেষ জোর দিয়েছিলেন। কালাম স্মরণ করতে পারতেন, তাঁর বাবা ইমাম এ পি জয়নুল আবেদিন রামেশ্বরমের হিন্দু মন্দিরের প্রধান পুরোহিত, পক্ষী লক্ষণ শাস্ত্রী এবং ওখানকার গির্জার পাদরি প্রতি সন্ধ্যায় একত্রে গরম চা নিয়ে বসে আড্ডা দিতেন ও দ্বীপের সবদিকে কীভাবে উন্নতি করা যায়, সেই নিয়ে আলোচনা করতেন। ছোটবেলার এই স্মৃতি কালামকে নিশ্চিতভাবে শিখিয়েছিল, ভারতের মতো বিচিত্র জনসাধারণের উন্নতি কেবল ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে অন্তরঙ্গ আলোচনা ও সমঝোতার  মধ্যেই নিহিত আছে।

আবদুল কালাম সংস্কৃত শিখেছিলেন, ভাগবত গীতা পড়েছিলেন। নিজে নিরামিষভোজী ছিলেন। তিনি তামিল ভাষায় পদ্য লিখতেন, বীণা বাজাতেন ও প্রতিদিন কর্ণাটকি ভক্তিমূলক গান শুনতেন। ২০০২ সালে তাঁর রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার প্রথম দিকের পার্লামেন্ট বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘গত এক বছরে আমি প্রতিটি ধর্মের একাধিক নেতার সঙ্গে মিলিত হয়েছি। আমার একান্ত ইচ্ছা, আমাদের বিশাল ও বিচিত্র ঐতিহ্যের অনুসারীদের ভাব-ভাবনা কীভাবে একই সূত্রে গাঁথা যায়, সে পথে আমাদের সব শক্তি নিয়োগ করা উচিত।’

কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেছিলেন, ‘ভারতের বৈচিত্র্যের মধ্যে একতার মনোভাব পোষণকারী কালাম একজন সম্পূর্ণ ভারতীয়, অ্যা কমপ্লিট ইন্ডিয়ান।’ বিজেপি নেতা এল কে আদভানি বলেছেন, ‘সম্পূর্ণ ভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় ও দার্শনিক মতবাদকে একত্রে ধারণ করা আবদুল কালাম আমাদের বিচিত্র ভারতের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ।’

গুরু প্রমুখ স্বামী: ভারতকে কীভাবে দার্শনিকভাবে একই ধরনের মনোবৃত্তি ও চিন্তাধারার মানুষ বানানো যায়, সে ব্যাপারে আলোচনার জন্য তিনি প্রমুখ স্বামীর সঙ্গে দেখা করতেন। প্রমুখ স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন। কালাম তাঁকে সর্বোচ্চ দার্শনিক শিক্ষক ও গুরু বলে মানতেন। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ৮ বার সাক্ষাতের প্রথমটি হয় ২০০১ সালের ৩০ জুন। প্রমুখ স্বামীর সরলতা ও দার্শনিক শুদ্ধতা তাঁকে মুগ্ধ করে। অন্যান্যের মধ্যে ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে গান্ধীনগরের অক্ষরধামে যখন সন্ত্রাসী হামলা হয়, তখন দেখেন স্বামীজি মৃত সবার জন্য প্রার্থনা করছেন ও সন্ত্রাসবাদীসহ সব মৃতদেহের ওপর গঙ্গাজল ছড়াচ্ছেন। এই দৃষ্টান্ত রাখতে যে, সব জীবনই পবিত্র। তাঁর ‘ট্র্যান্সেনডেন্স’ বই লিখতে গিয়ে এসব ঘটনা তাঁকে প্রভাবিত করেছিল।

রচনাবলী: এই বিজ্ঞানীর বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘ইন্ডিয়া ২০২০’। এতে তিনি বলে গেছেন, ভারতকে ‘নলেজ সুপার পাওয়ার’ ও ২০২০ সালের মধ্যে একটি ‘উন্নত দেশ’ হতে হলে কী কী করতে হবে। তাঁর ধারণায়, পরমাণু অস্ত্রের ওপর তাঁর কাজ ও প্রোগ্রাম অনুসরণ করলে ভারত একটি ভবিষ্যৎ পরাশক্তি হতে পারবে। তিনি পাঁচটি বিশেষ বিষয়ের ওপর রেখাপাত করেছেন—

১. কৃষির উন্নতি ও খাদ্য প্রসেসিং ২. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ৩. ইনফরমেশন ও কমিউনিকেশন টেকনোলজি ৪. নির্ভরযোগ্য বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, সারা দেশ জুড়ে উন্নত রাস্তাঘাট ও চলাচলের জন্য নির্ভরযোগ্য যানবাহন ৫. ক্রিটিক্যাল টেকনোলজিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। তাঁর গুরু স্বামী প্রমুখের মতে,  ‘ছয় নম্বর পয়েন্ট দেওয়া যায়, যেটি হবে ঈশ্বর ও দর্শনে মানুষকে প্রবুদ্ধ করা, যাতে বর্তমান দুর্নীতি ও অপরাধ থেকে মানুষ মুক্ত হতে পারে।’

পদক ও সম্মাননা: কালাম ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাতটি ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন। সরকারের বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতা হিসেবে তিনি ১৯৮১ সালে পদ্মভূষণ, ১৯৯০ সালে পদ্মবিভূষণ ও বৈজ্ঞানিকে গবেষণা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকায়নের জন্য ১৯৯৭ সালে ভারতের সর্বোচ্চ ‘ভারতরত্ন’ পুরস্কার পান। ২০১৩ সালে স্পেস সম্পর্কিত প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা ও লিডারশিপের জন্য তিনি ভন ব্রাউন পুরস্কার লাভ করেন।

২০১২ সালের আউটলুক ইন্ডিয়া–এর জরিপে কালামকে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ভারতীয় বলে অভিহিত করা হয়।

তাঁর মৃত্যুর পর তামিলনাড়ু সরকার ১৫ জুলাই তাঁর জন্মদিনকে ‘যুব নবজাগরণ’ দিন হিসেবে ঘোষণা করে। ওই দিন ‘ড. এ পি জে আবদুল কালাম অ্যাওয়ার্ড’- দেওয়া হয় ৮ গ্রাম ওজনের মেডেল, সার্টিফিকেট ও ৫০ হাজার রুপি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর কালামের স্মরণে একটি ডাকটিকিটের পত্তন করেন।

নাসার জেট প্রোপালশান ল্যাবরেটরির গবেষণাকারীরা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস সেন্টারের ফিল্টারের মধ্যে একটি ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করে। কালামের সম্মানে তারা এর নামকরণ করেছে ‘সলিব্যাসিলাস কালামি’।

অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র কালামের নামের সঙ্গে নিজেদের মুড়িয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে আছে বিহারের কিষাণগঞ্জের কৃষি বিদ্যালয়, বিশাখাপত্তমের মেডিকেল টেক ইনস্টিটিউট, উত্তর প্রদেশের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ত্রিভাঙ্কুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কেরালার মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়, পাটনার সায়েন্স সিটি, পণ্ডিচেরি প্ল্যানেটারিয়াম, কেরালা টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি ও ওডিশার সম্বলপুরের দ্বিতীয় প্ল্যানেটোরিয়াম।

আমেরিকার সঙ্গে একটি চুক্তি অনুযায়ী ‘ফুলব্রাইট-কালাম’ ক্লাইমেট ফেলোশিপ প্রবর্তিত হয়েছে, যেখানে ছয়জন ভারতীয়  পিএই ডির ছাত্র ও পোস্ট ডক্টরেট গবেষকেরা ৬–১২ মাস আমেরিকায় গবেষণা করতে পারবেন। ফুলব্রাইট প্রোগ্রামের মধ্যে এটাকে ইউএস-ইন্ডিয়া এডুকেশনাল ফাউন্ডেশন নাম দেওয়া হয়েছে।

দ্বীপ: ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষার জন্য ওডিশার ‘হুইলার আইল্যান্ড’-এর নাম বদলিয়ে হয়েছে, ‘আবদুল কালাম আইল্যান্ড’।

রাস্তা: নয়াদিল্লির আওরঙ্গজেব রোডের নাম পাল্টিয়ে ড. আবদুল কালাম রোড করা হয়েছে।

নতুন জাতের গাছ: বোটানিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া তাদের নব্য আবিষ্কৃত গাছের নাম দিয়েছে ‘ড্রাইপিটস কালামি’।

অন্যান্য পুরস্কার ও সম্মাননা: উল্লিখিত ও অনুল্লিখিত মিলিয়ে ১৯৮১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তাঁর সম্মানীয় ডক্টরেট, প্রফেসরশিপ, মেম্বারশিপ, ফেলোশিপ, মেডেল, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, ভারতরত্ন মিলিয়ে মোট সম্মাননা সংখ্যা ২৩টি। (শেষ)