ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অভিশংসন অভিযোগ গঠন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রতিবেদনের ওপর আগামী সপ্তাহেই ভোট হবে প্রতিনিধি পরিষদে। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রতিবেদনের ওপর আগামী সপ্তাহেই ভোট হবে প্রতিনিধি পরিষদে। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশের পর এবার চূড়ান্ত অভিযোগ গঠন করা হলো। আজ শুক্রবার প্রতিনিধি পরিষদের হাউস জুডিশিয়ারি কমিটিতে অভিশংসন অভিযোগেরও ওপর ভোটগ্রহণ করা হয়। এতে ২৩-১৭ ভোটে প্রতিবেদনটি পাস হয়। ফলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টি—এ দুই অভিযোগ আনা প্রতিবেদনটির ওপর আগামী সপ্তাহেই প্রতিনিধি পরিষদে ভোট হতে আর বাধা নেই।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসন প্রতিবেদন পাস হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসিত হতে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

শুক্রবার হাউস জুডিশিয়ারি কমিটিতে প্রতিবেদনটির ওপর গৃহীত ভোটে দুই দল অনুমিতভাবেই আলাদা অবস্থান নেয়। এতে করে প্রতিবেদনটি ২৩-১৭ ভোটে গৃহীত হয়, যা আগামী সপ্তাহে প্রতিনিধি পরিষদে ভোটের জন্য উত্থাপন করা হবে।

প্রতিবেদনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়। এর একটি হচ্ছে ক্ষমতার অপব্যবহার, যা তিনি করেছিলেন আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিষয়ে তদন্ত শুরুর জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে চাপ প্রয়োগ করে। এ জন্য এমনকি তিনি ইউক্রেনকে দেওয়া মার্কিন সামরিক সহায়তা তহবিলও আটকে দেন। দ্বিতীয় অভিযোগটি হচ্ছে, কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টি। মূলত অভিশংসন তদন্ত শুরুর পর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তদন্ত দলকে সহায়তা না করার নির্দেশ দেওয়াতেই তাঁর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়। হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির ভোটে অভিশংসন প্রতিবেদন পাস হওয়ার পর অনুমিত প্রতিক্রিয়াই এসেছে ট্রাম্পশিবির থেকে। এ সম্পর্কিত এক প্রতিক্রিয়ায় ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচার ব্যবস্থাপক ব্র্যাড পার্সক্যাল বলেন, ‘আজকের ভোট রাজনৈতিক মঞ্চে ডেমোক্র্যাটদের আরেকটি অভিনয় ছাড়া আর কিছু নয়। দলীয় রাজনীতির অংশ হিসেবেই এই ভিত্তিহীন ও চাতুরীপূর্ণ অভিশংসন প্রতিবেদনটি তোলা হচ্ছে, যা আমেরিকানরা খারিজ করে দিচ্ছে।’

ডেমোক্রেটিক দলের এক শীর্ষ নেতার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহের বুধবার প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসন প্রতিবেদনের ওপর ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে। ওই ভোটে অভিশংসন প্রতিবেদনটি অনায়াসে পাস হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। পরের ধাপে বিষয়টি চলে যাবে উচ্চকক্ষ সিনেটে। সেখানে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে ট্রাম্পকে। তবে প্রেসিডেন্ট দোষী সাব্যস্ত হোন এবং এ কারণে তাঁকে অপসারণ করা হোক—এমনটি চায় না সিনেটের নিয়ন্ত্রণে থাকা রিপাবলিকানরা।

কংগ্রেসে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা উত্তেজনাপূর্ণ শুনানিতে রিপাবলিকানরা বরাবরই প্রেসিডেন্টের পক্ষ নিয়েছেন। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চ পদে থাকা একাধিক ব্যক্তি এমন সব তথ্য হাজির করেন, যা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার অপব্যবহারের স্পষ্ট স্বাক্ষর বহন করছে। এর মধ্যে জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর বিষয় যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে ইউক্রেনকে প্রতিশ্রুত ৪০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা তহবিল আটকে দেওয়া। বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর বিনিময়ে জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টিও শর্ত হিসেবে সামনে আনা হয়েছিল। এ ছাড়া ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া নয়, বরং ইউক্রেন হস্তক্ষেপ করেছিল মর্মে একটি তদন্ত শুরুর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল ইউক্রেনের ওপর। এ সবকিছুই করেছিলেন ট্রাম্প প্রত্যক্ষভাবে।

এসব তথ্য উঠে আসার পরও ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের বক্তব্য একই জায়গায় স্থির থেকেছে যে, প্রেসিডেন্ট কোনো অন্যায় করেননি। তাঁদের বক্তব্য, প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত স্বার্থেই যে সামরিক সহায়তা বা জেলনেস্কিকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণের বিষয়টি আটকে ছিল, তার কোনো সরাসরি প্রমাণ নেই কারও কাছে।

নিম্নকক্ষে অভিশংসন প্রতিবেদনটি পাস হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসিত হতে যাচ্ছেন। এর আগে ১৯৯৮ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং ১৮৬৮ সালে অ্যান্ড্রু জনসন অভিশংসিত হয়েছিলেন। তবে তাঁদের কেউই অপসারিত হননি। আর ১৯৭৪ সালে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির জেরে আনা অভিশংসন প্রস্তাবটি পাস হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেছিলেন রিচার্ড নিক্সন। ফলে তিনি সে অর্থে অভিশংসিত হননি।