ধনী হতে প্রতারণা

অর্থলাভ ও প্রতিপত্তি কে না চায়। সাধু-সন্তরা তো পুঁথিতে থাকেন, বাস্তবে যার দেখা মেলা ভার। ‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি’ এখন আর কারও জীবনের অনূক্ত অধ্যায় নয়। স্বার্থটা ভালো করে জেনেবুঝে তবেই ঢাকঢোল পিটিয়ে তা ‘বলি’ দেওয়া হয়, যাতে এর মধ্য দিয়ে অন্তত যশলাভের কাজটি হয়। এমন যশলাভ আবার অর্থকরীও। সাদা চোখে ‘সমাজকর্মে’ একগাদা অর্থ চলে গেল বলে একটা হাহাকার বোধ হলেও তা অর্থাগমের পথটি প্রশস্ত করে। সে অনেক আলাপ।
অর্থ-বিত্তের প্রতি দুর্মর আকাঙ্ক্ষা আজকের পৃথিবীতে অতি স্বাভাবিক ঘটনা। যাদের এমন আকাঙ্ক্ষা নেই বা কম, তাদের বোকা হিসেবে সাব্যস্ত করা গেলেও তাদের নিয়ে আলোচনা চলে না। এ কারণে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই শীর্ষ ধনীদের তালিকা ছবিসহ প্রকাশ করা হলেও, নির্লোভদের (যদি থেকে থাকে) তালিকার খোঁজ কেউ নেয় না। বরং এই শীর্ষ ধনীরাই কে কতটা সমাজকর্ম করছেন, তার ফিরিস্তি দিতে সংবাদমাধ্যমগুলোকে প্রতিযোগিতায় নামতে দেখা যায়। চাণক্য যতই বলুন না কেন, ‘উত্তমের আকাঙ্ক্ষা মান’, আদতে তা বইয়ের পাতা ও বাল্যশিক্ষাতেই বেশি মানায়।
হাজার হাজার শতকোটিপতি এবং শিশু ও তরুণ বিলিয়নিয়ারদের এ যুগে অর্থের পেছনে মানুষ ছুটবে এটাই হয়তো স্বাভাবিক। হচ্ছেও তাই। আমেরিকাপ্রবাসী বাংলাদেশিদের কেউ কেউ দ্রুত অর্থ-বিত্তের মালিক হতে গিয়ে প্রতারণার পথ বেছে নিচ্ছেন। এদের অধিকাংশের অবশ্য পথটি একই। নিজেদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভালোই ব্যবসা করছিলেন তাঁরা। মার্কিন ব্যাংক থেকে উচ্চ অঙ্কের ঋণ নেওয়ার মতো ‘গুড ক্রেডিট’ তালিকাভুক্ত হওয়ার পরই তাঁরা বিপত্তিটি বাঁধাচ্ছেন। খুব দ্রুত ধনী হতে গিয়ে ওই ‘গুড ক্রেডিট’ তকমাটি ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া ঘোষণা করে আদালতে আরজি করছেন ঋণ মওকুফের। মুশকিল হচ্ছে, মার্কিন আদালতে ও তদন্তে এসব ধরা পড়ে যাচ্ছে। ফলে গৃহীত ঋণটি তো ফেরত দিতেই হচ্ছে, সঙ্গে কাউকে টানতে হচ্ছে জরিমানাসহ বিবিধ শাস্তির বোঝা। আর ‘গুড’ থেকে ‘ব্যাড’ ক্রেডিটরে রূপান্তর তো অবধারিতই। শুধু এ ধারার প্রতারকই নয়, আমেরিকায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এমন আরও কিছু প্রতারক আছেন, যারা নিজের কমিউনিটির মানুষদেরই বিপদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ নিয়ে ইতিপূর্বে অনেক লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু এগুলো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এই প্রতিটি ঘটনাই প্রবসীদের মানহানি ঘটিয়েছে।
প্রবাসে নিজের অতি লোভে দেশ ও দেশের সুনাম জলাঞ্জলি দেওয়া এসব লোকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি কমিউনিটির সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। এ ধরনের ব্যক্তিকে প্রশ্রয় দেওয়া তো দূরের কথা, তাদের এ ধরনের অপকর্মের কথা জানলে তা প্রশাসনের নজরে আনতে হবে। কারণ, আজ লুকালেও কাল তা ঠিকই ধরা পড়ে যাবে। তাই নিজেরাই এদের ধরিয়ে দিলে তার পাপের দাগটি অন্তত কমিউনিটির গায়ে লাগবে না।