'আমেরিকা সবার জন্য'

পেগি ওয়ালেস কেনেডির বাবাকে ‘আমেরিকার সবচেয়ে বিপজ্জনক বর্ণবাদী’ বলা হতো। এখন পেগি জাতীয়ভাবে স্বীকৃত একজন স্পিকার, প্রভাষক ও লেখক। তার বাবা, জর্জ ওয়ালেস ও তার মা লুরলিন ওয়ালেস উভয়ই আলাবামার গভর্নর ছিলেন। পেগি কেনেডি রোজা পার্কস লিগ্যাসি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, ওম্যান অফ কারেজ অ্যাওয়ার্ড, ব্রাউন ফাউন্ডেশন হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড ও এমএলকে কমিশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ৪৬ বছর বয়সী কেনেডির স্বামী জাস্টিস এইচ মার্ক কেনেডি তাঁর বইয়ের কো-অথর বা সহ–লেখক এবং আলাবামার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আলাবামার মন্টেগোমেরিতে তারা থাকেন।

পেগি ওয়ালেস কেনেডি তখন আট বছরের শিশু, যখন তার জন্য অপেক্ষা করছিল উদ্বেগজনক ভবিষ্যতের প্রথম ঝলক। তিনি তখন আলাবামার ক্লেটন শহরে বাস করছিলেন, তারপর চলে যান জিম ক্রো দক্ষিণের একটি ছোট্ট শহরে। তার বাবা ছিলেন জর্জ ওয়ালেস, ভবিষ্যতের আলাবামার গভর্নর ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের শক্তিশালী ভিলেন, যিনি কালো বর্ণের শিক্ষার্থীদের নাম লেখাতে বাধা দেওয়ার জন্য স্কুলঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এখন পৃথক্‌করণ, আগামীকাল পৃথক্‌করণ, চিরদিনের জন্য পৃথক্‌করণ।’
পৃথিবী একদিন বদলে গেল, যখন তার মা তাকে একটি কালো মেয়ে-দরজির কাছে পোশাক বানাতে পাঠান। পেগি ওয়ালেস যখন কালো দরজি মেয়েটির বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলেন, তখন বাড়ির ভেতর থেকে নারীর কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন, তিনি বলছিলেন ‘জর্জ ওয়ালেস চান না, তার মেয়ে কোনো কালো নারীর বাড়িতে যাক...।’

এমন কথা শুনে পেগি খুব অবাক হলেন। আস্তে আস্তে পেছনে ফিরে নিচে নেমে তিনি বাড়ি চলে যান।

পেগি ওয়ালেস বলেন, আজ তার প্রচুর বলার আছে। ওই সময়টাতে একজন বর্ণবাদী ব্যক্তির সন্তান হয়ে বেড়ে ওঠা তার জন্য কতটা মানবেতর ছিল, তা কেবল তিনিই জানেন। তিনি মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে স্মরণ করে বলেন, আমেরিকাকে তখন পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক বর্ণবাদী বলা হয়েছিল। পেগি ওয়ালেস কেনেডি তাঁর লেখা ‘দ্য ব্রোকেন রোড’ বইয়ের একটি অনুলিপি রেখেছেন। সে বইয়ে তাঁর বাবার রাজনীতি কীভাবে তার ব্যক্তিগত জীবনকে ছড়িয়ে দিয়েছিল এবং তার মেয়ের বিবেককে মেঘাচ্ছন্ন করেছিল—সবই লিপিবদ্ধ আছে।

পেগি ওয়ালেস এখনো মাঝে মধ্যে এমন লোকদের মুখোমুখি হন, যারা ১৯৯৮ সালে মারা গিয়েছিলেন তার বাবার কারণে এবং তিনি তাদের এড়িয়ে চলেন। পেগি ওয়ালেস তার কৃষ্ণাঙ্গ দরজি মেয়েটির সময়কাল নিয়ে ‘দ্য ব্রোকেন রোড’–এ লিখেছিলেন, ‘আমি যদি ১৯৫৮ সালের গ্রীষ্মে বাবাকে জিজ্ঞাসা করতাম, তিনি বর্ণবাদী কিনা, আমি নিশ্চিত নই, তিনি কী জবাব দিতেন। বেশ কয়েক বছর ধরে আমি বাবার চরিত্র ও কাজগুলো রক্ষা করার বাধ্যবাধকতা বোধ করেছি। আমি আজ অফিশিয়ালি যে লাইনটি গ্রহণ করেছি তা হলো, আমার বাবা একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী ছিলেন কিন্তু বর্ণবাদী ছিলেন না।’

পেগি ওয়ালেস তার নিজের বাবার পাশাপাশি নিজের অস্বীকৃতিও স্মৃতিচারণ করেন। যেখানে সাদা ব্যক্তিরা ব্যক্তিগতভাবে কৃষ্ণবর্ণের মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে চাকরের মতো আচরণ করত। স্মৃতিচারণে পেগির কিছু হৃদয়-বিদারক মুহূর্ত উঠে এসেছে। যেমন—নাগরিক অধিকারের আইকন, রেপ, জন লুইস (ডি-গা।) ২০১৭ সালে কেনেডিকে চমকপ্রদ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন, যা তাকে চমকে দিয়েছিল। পেগি সেই মুহূর্তটি সম্পর্কে লিখেছেন, ‘আমি তখন সাহায্য করতে পারিনি, তবে অবাক হয়ে ভাবি, কীভাবে ইতিহাসের গতিপথবদলে যেতে পারত। যদি মার্টিন লুথার কিং ও বাবা জানতেন, একদিন এখানেই আলাবামায় সেই ছোট কালো মেয়েটি এবং সেই ছোট সাদা মেয়েটি তাদের নিজের মেয়ে হতে পারত।’

উষ্ণ ও ব্যক্তিগতভাবে দয়ালু ৬৯ বছর বয়সী পেগি ওয়ালেস কেনেডি সিএনএনের সঙ্গে তার স্মৃতিচারণ সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা আমার জন্য যে উত্তরাধিকার রেখে যেতে চেয়েছিলেন, আমি তার থেকে আলাদা হয়ে আমার দুই সন্তানের জন্য ভিন্ন উত্তরাধিকার রেখে যেতে চেয়েছি। ১৯৯৬ সালে আমার কনিষ্ঠ পুত্র বার্নসকে আটলান্টার মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ঐতিহাসিক স্থানে নিয়ে গিয়েছিলাম। বার্নসের বয়স তখন আট বছর। এবং যখন আমরা জাদুঘরে গিয়েছিলাম, তখন সেখানে আমরা একটি প্রদর্শনীতে যাই, যেখানে ডা. কিং আলাবামায় সমঅধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন এবং সেখানে কিছু ছবি ছিল। সেখানে এডমান পিটাস ব্রিজের ছবি ছিল, যেখানে সিক্সটিন স্ট্রিট ব্যাপটিস্ট চার্চে বোমার ছবি ছিল এবং আমার বাবা জর্জ ওয়ালেস স্কুল ঘরের দরজায় দাঁড়ানো ছিলেন। আমি জানতাম, আমাকে বাচ্চাদের জন্য এমন কিছু করতে হবে যা আমার বাবা আমার জন্য কখনো করেননি। আমি জানি তিনি ভুল ছিলেন। তাই সম্ভবত জিনিসগুলো সঠিক করার জন্য আমাদের কিছু সঠিক কাজ করতে হবে।’

পেগি ওয়ালেস বলেন, ‘আমি ভবিষ্যতের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। আমি মনে করি আমেরিকানরা উঠে দাঁড়াবে আর কারও পাশে বৈষম্যে দাঁড়াবে না। তারা নাগরিক অধিকার আন্দোলনের মতো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ালে তারা সামনের চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হবেন এবং সহজে তা উতরে যেতে পারবেন। আমেরিকা আমাদের সবার জন্য, কেবল আমাদের মধ্যে কিছু মানুষের জন্য নয়।