বিচারপতি মাহমুদুল আমিনের বিদায়

মাহমুদুল আমিন চৌধুরী
মাহমুদুল আমিন চৌধুরী

সাবেক বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী ২২ ডিসেম্বর এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। ২০০১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি লতিফুর রহমান অবসর নেওয়ার পর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এগারোতম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন তিনি।
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী মাহমুদুল আমিন চৌধুরী ১৯৩৭ সালের ১৮ জুন তাঁর বাবার কর্মস্থল সুনামগঞ্জ শহরে জন্মগ্রহণ করলেও পৈতৃক নিবাস ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জের রনকেলি গ্রামে। তার বাবা ছিলেন সিলেট সরকারি বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল গফুর চৌধুরী। তাঁর মা সিলেটের আরেক কৃতি পুরুষ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মরহুম প্রিন্সিপাল সালমান চৌধুরীর বড় বোন সুফিয়া খাতুন চৌধুরী।

মাহমুদুল আমিনের শিক্ষা জীবনের শুরু সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মধ্যবঙ্গ বিদ্যালয়ে। পরে সিলেট পাইলট হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন শেষ করেন। তারপর মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ঢাকা সিটি ল’ কলেজ থেকে এসে এলএলবি পাস করেন এবং ১৯৬৩ সালে সিলেট বারে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। প্রায় ১২ বছরের ওকালতি জীবনের শেষের কয়েক বছর তিনি সরকারি আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে সরাসরি নিয়োগ পান। ১৯৮৯ সালে জেলা জজের পদমর্যাদায় পদোন্নতি পেয়ে খুলনা বিভাগের স্পেশাল জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় নবগঠিত এই জজশিপকে পূর্ণাঙ্গ জজশিপে পরিণত করেন। দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি ঢাকা, ফরিদপুর ও চট্টগ্রামে দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছাড়া ও ১৯৮৭ সালের ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৯ সালের জুনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং পরবর্তীতে ২০০১ সালের ১ মার্চ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন। ২০০২ সালের ১৭ জুন অবসরে যান তিনি। ব্যক্তিগতভাবে তিনি একজন কৃতি ক্রীড়াবিদ ছিলেন, দক্ষ শুটারও ছিলেন তিনি। সিলেট রাইফেলস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের একজন তিনি।

১৯৭৩ সালে মেঘালয়ের রাজধানী শিলং শহরে সিলেট জেলা ফুটবল একাদশের সময়ে তিনি মিশন প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ ছাড়া সিলেট আইন মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, হংকং, চীন, ইংল্যান্ড, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করেছেন।

১৯৮৬ সালে মাহমুদুল আমিন চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টিজ অর্গানাইজেশন আয়োজিত তিন সপ্তাহব্যাপী একটি সেমিনারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তিনি ছিলেন সিলেট অঞ্চলের দ্বিতীয় বিচারপতি যিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে এই সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। তাঁর আগে এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ এ বি মাহমুদ হোসেন। অবশ্য তাঁর পরে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পান সিলেট অঞ্চলের সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি মারা গেছেন প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমিনের স্ত্রী আয়েশা আমিন চৌধুরী। এই মৃত্যুর ধকল কাটিয়ে ওঠা তাঁর পক্ষে অসম্ভব ছিল, এ অবস্থায় এক বছরের মধ্যে মারা গেলেন তিনি। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে বেঁচে আছেন ছোট ভাই নুরুল আমিন চৌধুরী। তিনি ডালাসে থাকেন এবং বাংলাদেশের যেকোনো উপলক্ষে তার দায়িত্ব পালনের বিষয়টি সকলেরই জানা। এ ছাড়া দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন সাবেক এই বিচারপতি।