ফকির ইলিয়াসের এক গুচ্ছ কবিতা

মধুগঙ্গা

এই যে সাগর দেখছ, তা তোমার জন্যে
কিংবা এই যে বাতাসের শব্দ, শীতের সুগন্ধ
সবই নিবন্ধিত তোমার করকমলে, দোল খেতে
খেতে একদিন মিশেছিল ফেনায়, বাষ্পে-মনে আছে!

অথবা ছুঁতে গিয়ে যে পাখির পালক, আমি
সবুজ ঘাসের ডগায় হাত রেখে ডুবে গিয়েছিলাম
এক মোহনীয় জাদুমন্ত্রে—
সেদিন কি এই আকাশ ছিল আমাদের মাথার ওপর!

আমি তোমাকে মধুগঙ্গা নামেই ডাকি, ডাকি
দক্ষিণের হাওয়া নামে—
অন্য কোনো নাম আমার গীতঘরে আর ছায়া
ফেলে না বলেই,
জলে জলে পা ফেলে হাঁটি, তবু
নদী পাড়ি দেয়া হয় না। সাগর পেরোনো হয় না।

মথুরা অথবা বৃন্দাবন যে নামেই ডাকি

আমি বংশিবাদক। আর তুমি রাধিকা-ঐশী
পাঠ করতে গেলেই তুমি শব্দ থেকে বাক্য
হয়ে যাও। বাক্য থেকে প্রবন্ধে-
গল্পে অথবা কবিতায় জেগে থাকো অনুক্ষণ

আমি মেঘভূমি পেরিয়ে আসা ব্রাজক
আর তুমি ব্রজপুরী থেকে বৃন্দাবন আলো করা
চাঁদ। নিজে তো দেখ না—কত ঋতুসত্য পড়া
মহাকাল তোমাকে নিয়েই লিখছে পার্বণ

এই কক্ষপথকে মথুরা কিংবা বৃন্দাবন
যে নামেই ডাকি;
আমি জানি—তুমি জানো
কখনও’ই ম্লান হবে না এই আদি আঁকাআঁকি।

পরম প্রণয়পর্ব

কুয়াশার দিকে বারবার তাকিয়ে থাকলেই দেখবে
চোখেও জল নেমেছে। কিংবা বরফের দিকে
তাকালে দীর্ঘক্ষণ—
দেখবে পাথর আর পাথর, চারদিকে অনেক
নীরবতা ভাঙা শব্দের প্রদেশ।

এই পৃথিবী একদিন একটি ছোট্ট প্রদেশ ছিল।
আদম-হাওয়া ভাবতেও পারেননি,
তাদের জন্য এত আয়োজন হবে—এত রোদ
এত বৃষ্টি প্রদক্ষিণ করবে তাদের ছায়া।

এই পরমের প্রতীক্ষা,
অথবা প্রণয়ের ব্যঞ্জনধ্বনি—
পরখ করলেই দেখবে একটি আদিম
তারা; আকাশের বুক ভেদ করছে—
অথচ আকাশ কিছুই টের পাচ্ছে না।

ঝড়বারান্দা

উঁকি দেয়ারও একটা কৌশল লাগে।
এমনকি বকেঝকে বনবাদাড়ে নিজের নাম লেখা
কাগজটি ছুড়ে মারারও লাগে একটি বিদ্যে।

যে ঝড় বারান্দা অতিক্রম করে,
কিংবা যে বারান্দায় অভিমানে দাঁড়িয়ে থাকে
একপশলা ঝড়—
তুমি যদি তাকেই ভালোবাসো, দেখবে
সেও তোমাকে বিলিয়ে দিচ্ছে বিশ্বাস-অনড়!