আমেরিকায় জন্মহার কমছে

জন্ম মাত্রই সম্ভাবনা। জন্ম মাত্রই এক অবাক দরজার উন্মোচন। জন্মহার তাই যেকোনো দেশ, যেকোনো জনপদের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি দেশের সার্বিক নীতি প্রণয়নে সেখানকার জনসংখ্যা ও এর বৃদ্ধির হার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে সে দেশের জনশক্তি। তাই অর্থনীতিবিদদের কাছে জনমিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একটি দেশে তরুণের সংখ্যা বেশি হলে তার অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও বহুগুণে বেড়ে যায়। আর বিপরীতটি ঘটলে অবধারিতভাবেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে নীতিপ্রণেতাদের কপালে। এখন এমন পরিস্থিতিতে রয়েছে জাপান। আর ভবিষ্যতে আমেরিকাও এই ধরনের সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আমেরিকায় গত পাঁচ বছর ধরে টানা জন্মহার কমাটা চিন্তার জন্ম দিচ্ছে। কারণ, প্রায় একই সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে আমেরিকা কঠোর অভিবাসন নীতি গ্রহণ করেছে। ফলে এই ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার কোনো উপায় আর থাকছে না।
মোটাদাগে আমেরিকায় ২০১৮ সালে জন্মহার কমেছে আগের বছরের তুলনায় ২ শতাংশ। প্রবণতা বলছে সামনের বছরগুলোয় এ হার আরও কমবে। আর তেমনটি হলে, আমেরিকার কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকবে। বাড়বে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা, যা সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। উপার্জনকারী মানুষের সংখ্যা কমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমবে সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলে দাতার সংখ্যাও। ফলে সরকারের ওপর আর্থিক চাপ বাড়বে।
ওপরে উল্লিখিত নেতিবাচক প্রভাবগুলোকে তাৎক্ষণিক প্রভাব হিসেবে বিবেচনা করলে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হিসেবে বলতে হয়, জন্মহার আরও কমে যাওয়া। কারণ, বর্তমানে জন্মহার হ্রাসের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত তিন দশকে অর্থনৈতিক মন্দার ফিরে ফিরে আসাই সংসার বড় করার পরিকল্পনা থেকে সরিয়ে দিয়েছে অনেক দম্পতিকে। এই সময়ে বহুগুণে বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। চাইল্ড কেয়ার অ্যাওয়্যার অব আমেরিকা নামের সংস্থা বলছে, শিশুদের পেছনে ব্যয় কোনো পরিবারের মোট আয়ের ৭ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। কিন্তু আমেরিকার কোনো পরিবারের পক্ষে এখন এই ব্যয় তাদের আয়ের ১৬ শতাংশের নিচে সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সন্তান গ্রহণকে দায় মনে করছেন অনেকেই। পাশাপাশি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিসর কমানোর প্রস্তাবও নিরুৎসাহিত করছে অনেককে।
আমেরিকা দীর্ঘদিন ধরে জন্মহার হ্রাসের নেতিবাচক প্রভাবটি বুঝতে পারেনি, তার অভিবাসীবান্ধব নীতির কারণে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে সেই দরজাটিও বন্ধ করে দিতে চাইছেন। তাই দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে একটি অনুকূল অভিবাসন নীতি যেমন প্রয়োজন, তেমনি দরকার ঘর বাঁধা ও সন্তান জন্মদানে মানুষকে উৎসাহিত করতে সামাজিক নিরাপত্তার পরিসর বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার ব্যয় হ্রাসে যথাযথ উদ্যোগ। বয়স্ক জনগোষ্ঠীর ভার লাঘবে আমেরিকাকে এখনই এ উদ্যোগ নিতে হবে।