আশরাফ আহমেদের কবিতা

পেঁজা তুলা আর
ফেনিল বুদ্‌বুদ
কোথা যেন ভেসে বেড়াই, নীল আকাশে,
তাই বুঝি চোখ খুললেই পেঁজা তুলা ভাসে।
মতিভ্রম নয়তো এ, তবে কি সাগরের বুদ্‌বুদ, শুভ্র ফেনিল
সাদাটে ধোঁয়ার মতন অবিরত ঘুরে ঘুরে ভীষণ নির্মল!
প্রিয়তমা রানি, কিশোর, তরুণ সময়ের সব প্রেয়সী
উঁকি মেরে চলে যায় অতি সহসাই, কে এই ক্রন্দসী?
তবে কি তুমিই প্রেম, বাকি সব নেহাতই ফাঁকি
মিথ্যে প্রেমাভিনয়ে এসেছিল দ্বারে সব ছিল ফাঁকিঝুকি
হবেও বা, আমি আবার প্রেমে সত্যবাদী ছিলাম কবে?
ছল করে তাই প্রেম প্রেম খেলা খেলেছ আমার সাথে!
ক্রন্দসীকে দেখে বুঝি মতিভ্রম হয়, তাই
তাকেই যেন বারেবারে আঁখি পানে পাই।
সুখ আমার, স্বর্গ আমার, ওম তোমাতেই পাই
ফিরে ফিরে তাই বুঝি আমি তোমাতেই চাই ঠাঁই।


সীমাহীন লোভ
ও প্রকৃতির দুর্দিন

মান অভিমান কিছুটা কমেছে, বদন বেশ প্রসন্ন তাই
ক্ষণে ক্ষণে তাই বুঝি আজি অধরে হাসির আভা পাই।
এক ঝিলিক আলো প্রশান্তির ঝিলিক দিয়ে যায় মিলিয়ে
অপস্রিয়মাণ রোদে কার জন্য যেন পলকেই যায় হারিয়ে!
মানুষ, পশু-পাখি সবাইকে নিয়ত দিয়ে যাচ্ছে আনন্দ
কিন্তু মানুষের লোভ নিয়তই প্রকৃতিকে করছে বিষণ্ন।
শোষণ ছাড়া লাভ আসে না, ঘুষ ছাড়া বাণিজ্যও অচল
দুষ্টু বিনিয়োগ ছাড়া টাকার চক্র কভু কি থাকে সচল?
পুঁজির জোগান কালোবাজারি আর মজুতদারের কবজায়
ঘুষখোর আর ব্যাংক লুটেরারা টাকা বানায় নির্দ্বিধায়।
রতনপুরের শালবাগান থেকে রঘুনন্দন হয়ে বাহুবল
কালেঙ্গা লাউয়াছড়া একই অবস্থায় বৃক্ষশূন্য শ্রীমঙ্গল।
প্রকৃতির কোমলতা, অপরূপ শোভা আর নির্মল রূপ
মানুষের সীমাহীন লালসার কাছে আজ কষ্টে নিশ্চুপ।

দ্বৈত যখন প্রকৃতি
আকাশে গুমোট মেঘ, সূর্যের দেখা নেই, বৃষ্টিও নেই
অসহ্য মনে হয় আমোদ-ফুর্তি, গান-বাজনা সবই।
কিছুই ভালো লাগে না, মন বসে না পড়ায়, না কবিতায়,
জমে না রং-তামাশা, মজে না মন তাসের আড্ডায়।
রাগ ধরে যায় সবকিছুতেই, বেশি করে প্রকৃতির ওপর
সারা দিনমান আলোকচ্ছটা নেই কোথাও, শুধুই অন্ধকার।
মনে বড় আশা, কেটে যাবে একঘেয়ে কষ্টের প্রহরগুলো
বৃষ্টিস্নাত অন্ধকার রাত এর চেয়ে নিশ্চয়ই অনেক ভালো।
বারিষ মুখর, যাকে বলা যায় বাদল বরিষন দিন,
তারও একটা মনকাড়া সৌন্দর্য আছে কবিদের কাছে,
প্রেমিক-প্রেমিকা, এমনকি মাছ শিকারিদের কাছেও।
বৃষ্টি ঝরছে তো ঝরছেই, গাছের পাতায় ছন্দে ছন্দে
টিনের চালে যেন বাজে মল অবিরত গানের ছন্দে।
এমন দিনে জমে খিচুড়ির খাওয়া আর প্রেমকেলি খেলা
পাতলা নকশিকাঁথার নিচে বাড়তি ওমের জন্য আবরণ
নাকি আঁধার আড়ালে খুনসুটি সুখে নিশ্চুপতাই কারণ।