গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ: যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় সুযোগ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে ইরানের নাগরিকেরা। সোলাইমানিকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে শহরে শহরে মানুষের ঢল নামে। এই হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরানের শাসকদের হাতকে শক্তিশালী করার ঘোষণাও দেয় তারা। এর এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই সেই শাসকদের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলনে নেমেছে ইরানিরা। শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান ভেবে একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদে শুরু হওয়া ওই আন্দোলন ইরানের সরকারকে চাপে ফেলেছে। এটা ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের পথ প্রস্তুত করতে পারে।

ইরানের রাজধানী তেহরানে আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার ওপর দিয়ে হাঁটতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন, এমন একটি ছবি গত সোমবার টুইট করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘বড় অগ্রগতি’। ইরানের বিক্ষোভকারীদের সাহসী ও মহান বলে প্রশংসা করতে দেখা গেছে তাঁকে। এই আন্দোলনকারীদের ওপর কোনো ধরনের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে ইরানের শাসকদের সতর্কও করেন তিনি। মুখে মুখে ইরানের বিক্ষোভে সমর্থন জানালেও এ বিষয়ে তাঁর প্রশাসনের পদক্ষেপ খুব একটা লক্ষ করা যাচ্ছে না।

গত বুধবার ভোরে তেহরানে ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের বোয়িং–৭৩৭ উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। প্রথমে ইরান জানায়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাঝ আকাশ থেকে মাটিতে ভেঙে পড়ে উড়োহাজাজটি। তবে আন্তর্জাতিক তদন্তের চাপের মুখে গত শনিবার ইরানের সেনাবাহিনী জানায়, তাদের ক্ষেপণাস্ত্রেই ভূপাতিত হয় উড়োজাহাজটি। ইচ্ছাকৃত নয়, মানবিক ভুলে এটা ঘটেছে।

ইরানের ভুল স্বীকারের পরপরই তেহরানসহ দেশটির বড় বড় শহরে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ইরানিরা। উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার ঘটনায় ইরান সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ আনে বিক্ষোভকারীরা। তারা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ সরকারের পদত্যাগ চান। ইরানের শাসকদের পতন হোক, স্বৈরাচার ধ্বংস হোক বলেও স্লোগান দেন।

উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার ঘটনায় শুধু নিজ দেশের ভেতরেই নয়, বাইরেও ইরান সরকারের প্রতি চাপ বাড়ছে। এই সুযোগে ইরানের প্রতি ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতি নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। মৌলিক খাদ্যপণ্য ও ওষুধের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

ইরানের শাসকেরা যে খুব বেশি চাপে রয়েছেন, সেটা স্মরণ করে দিলেন ট্রাম্পের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা যুদ্ধবাজ জন বোল্টন। তিনি টুইট করেছেন, ‘খামেনির সরকার এর আগে এতটা চাপে কখনো পড়েনি। সরকার পরিবর্তন সময়ের ব্যাপার।’

বর্তমান ইরান সংকটকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুযোগ হিসেবে হাজির হয়েছে বলে মনে করেন ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেঞ্চুরি ফাউন্ডেশনের গবেষক ডিনা এসফানডায়েরি। তিনি বলেন, ওয়াশিংটনের উচিত সেই সুযোগ গ্রহণ করা।