অভিশংসন অভিযোগ গণতন্ত্রের ওপর আঘাত: ট্রাম্পের আইনজীবী

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসন অভিযোগকে ‘গণতন্ত্রের ওপর মারাত্মক আঘাত’ বলে মন্তব্য করেছে তাঁর আইনজীবী দল। আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

আগামী মঙ্গলবার থেকে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে ট্রাম্পের অভিশংসনের বিচার। সিনেটে এই অভিশংসন অভিযোগের বিষয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় ওই মন্তব্য করেন ট্রাম্পের আইনজীবীরা।

গত মাসে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ ট্রাম্পকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টির অভিযোগে অভিশংসিত করে। এই অপরাধে তাঁর বিচারের ভার এখন সিনেটের হাতে।

ট্রাম্পের আইনজীবীদের জমা দেওয়া নথিতে বলা হয়েছে, সিনেটে আসা অভিশংসনের অভিযোগ ট্রাম্পের কোনো অপরাধ তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। এই অভিযোগ ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের নির্লজ্জ প্রচেষ্টা।

সিনেটে ট্রাম্পের বিচারপ্রক্রিয়ার জন্য ডেমোক্র্যাটরা গতকাল শনিবার তাঁদের নথি জমা দেওয়ার পর ট্রাম্পের আইনজীবীরা প্রতিক্রিয়া জানান। ডেমোক্র্যাটরা তাঁদের জমা দেওয়া নথিতে ট্রাম্পকে কেন ক্ষমতা থেকে অপসারিত করা উচিত, সে বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেছেন।

ডেমোক্র্যাটদের নথির জবাবে ট্রাম্পের আইনজীবীরা তাঁর পক্ষে ছয় পৃষ্ঠার প্রতিক্রিয়া জানান।

গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আট সদস্যের আইনজীবী দলের নাম ঘোষণা করা হয়। ট্রাম্পের আইনজীবী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হোয়াইট হাউসের কৌঁসুলি প্যাট সিপোলনি। দলে আছেন ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী জে সেকুলো। এই আইনজীবীরা জানান, পদ্ধতিগত ও সাংবিধানিক—দুই ভাবেই তাঁরা অভিশংসনের বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করছেন। তাঁদের দাবি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভুল কিছু করেননি। তাঁর সঙ্গে ন্যায়সংগত আচরণ করা হয়নি।

নথিতে ট্রাম্পের আইনজীবীরা বলেন, প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাটদের জমা দেওয়া অভিশংসনের অভিযোগ আমেরিকার জনগণের স্বাধীনভাবে তাঁদের প্রেসিডেন্ট বেছে নেওয়ার অধিকারের ওপর মারাত্মক আঘাত। এই অভিযোগ ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়া এবং ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের নির্লজ্জ ও বেআইনি প্রচেষ্টা। অভিশংসনের অভিযোগ ট্রাম্পের কোনো অপরাধ বা আইনভঙ্গের বিষয়টি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। অভিশংসনের অভিযোগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পদ্ধতি ও মৌলিক ন্যায্যতা লঙ্ঘন করে বেআইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে বলে দাবি ট্রাম্পের আইনজীবীদের।

অভিশংসনের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে, তা তিনি অস্বীকার করেছেন।

সম্প্রতি প্রতিনিধি পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পের অভিশংসন-সংক্রান্ত প্রস্তাব ও নথি সিনেটে পাঠায়। সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন বিচারে নিরপেক্ষ জুরি হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য ১০০ জন সিনেটর গত বৃহস্পতিবার শপথ নিয়েছেন।

যদি সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬৭ জন সদস্য মনে করেন যে ট্রাম্প দোষী, তাহলে তিনি ক্ষমতা থেকে অপসারিত হবেন। তবে তেমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ, সিনেটে রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।

সিনেটে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনজীবীদের সঙ্গে পূর্ণ সলাপরামর্শ করেই তিনি বিচারকাজ পরিচালনার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছেন। এর আগে অ্যান্ড্রু জনসন ও বিল ক্লিনটন প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হলেও সিনেটে উতরে যান। ট্রাম্পও টিকে যাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে গত বছরের ২৫ জুলাই ট্রাম্পের টেলিফোন আলাপচারিতা থেকে এই অভিশংসন-প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয়। অভিযোগ ওঠে, ফোনালাপের সময় আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী জো বাইডেনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য জেলেনস্কিকে চাপ দেন ট্রাম্প। হুইসেল ব্লোয়ার ব্যক্তির মাধ্যমে এই ঘটনা সামনে আসে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিনিধি পরিষদ। গত বছরের ডিসেম্বরে পরিষদে অভিশংসিত হন ট্রাম্প।

ট্রাম্প একের পর এক টুইটে বলছেন, অভিশংসনের ব্যাপারটি ধাপ্পাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ তিনি কোনো অপরাধই করেননি।