কেন অভিশংসন, বুঝতেই পারছেন না ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

অভিশংসন নিয়ে রীতিমতো ‘বিভ্রান্ত’ বোধ করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী মঙ্গলবার থেকে মার্কিন সিনেটে অভিশংসন শুরু হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট নাকি বুঝতেই পারছেন না যে, তাঁকে কেন প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত করা হলো। হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ কথা জানিয়েছে।

হোয়াইট হাউসের সূত্রটি জানায়, মার-এ-লাগোতে নিজের চারপাশের সবাইকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার একই প্রশ্ন করছেন, ‘তারা কেন আমার সঙ্গে এমন করছে? বুঝতে পারছি না কেন আমি অভিশংসিত!’

এখানেই শেষ নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের আইনি দলে এমন দক্ষ ব্যক্তিদের উপস্থিতি চান, যারা টেলিভিশনেও পারফর্ম করতে পারবেন। হোয়াইট হাউসের ওই সূত্র সিএনএনকে বলেন, ট্রাম্প এমনই এক ব্যক্তি, যিনি প্রচারমাধ্যমে কাজ করা ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করতে পছন্দ করেন। সম্ভবত এ কারণেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য নিযুক্ত আইনজীবীদের দলে ঠাঁই পেয়েছেন কেনেথ স্টার ও অ্যালান ডারশুইটজ, যাদের দুজনই টিভি প্রোগ্রামের কল্যাণে পরিচিত মুখ।

গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আট সদস্যের আইনজীবী দলের নাম ঘোষণা করা হয়। ট্রাম্পের আইনজীবী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হোয়াইট হাউসের কৌঁসুলি প্যাট সিপোলনি। দলে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী জে সেকুলো ছাড়াও রয়েছেন অ্যালান ডারশুইটজ, কেনেথ স্টার, রবার্ট রে, পাম বন্ডি, জেন রাসকিন, প্যাট্রিক ফিলবিন ও মাইক পারপুরা। এই দল এরই মধ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির দেওয়া বক্তব্যকে খারিজ করে দিয়েছে। তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসন অভিযোগকে ‘গণতন্ত্রের ওপর মারাত্মক আঘাত’ বলে মন্তব্য করেছে।

গত মাসে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ট্রাম্পকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টির অভিযোগে অভিশংসিত করে। এই অপরাধে তাঁর বিচারের ভার এখন সিনেটের হাতে। গতকাল শনিবার ডেমোক্র্যাটরা সিনেটে বিচারপ্রক্রিয়ার জন্য নথি জমা দেন। এতে তাঁরা নিম্নকক্ষে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের কারণ ব্যাখ্যার পাশাপাশি তাঁকে কেন ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা উচিত তার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।

সিনেটে জমা দেওয়া ডেমোক্র্যাটদের নথিতে বলা হয়, ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য অন্য একটি সরকারকে চাপ প্রয়োগে নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন। একই সঙ্গে তিনি এই চেষ্টাকে ধামাচাপা দিতে কংগ্রেসের তদন্তকাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন। কোনো প্রেসিডেন্ট নিজের কার্যালয়ের ক্ষমতার এমন গুরুতর অপব্যবহার করলে তার সমাধান হিসেবে মার্কিন সংবিধান অভিশংসন ও ওই প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের বিকল্প হাজির করে। ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সুরক্ষিত করতে সিনেটের এই সুযোগ অবশ্যই নেওয়া উচিত বলেও উল্লেখ করা হয় নথিতে।

ডেমোক্র্যাটদের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প পক্ষের আইনজীবীরা জানান, প্রেসিডেন্ট তাঁর বিরুদ্ধে আনীত দুটি অভিযোগই অস্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা বলেন, অভিশংসনের যোগ্য বড় মাপের অপরাধের কথা তো বাদ, কোনো অপরাধই সংঘটিত হয়নি।

গত বছরের ২৫ জুলাই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে হওয়া ট্রাম্পের যে ফোনালাপকে কেন্দ্র করে এ অভিশংসন তদন্তের শুরু, তাকে ট্রাম্পের আইনজীবী দল বলছেন, ‘সম্পূর্ণ আইনি’।

উল্লেখ্য, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে গত বছরের ২৫ জুলাই ট্রাম্পের টেলিফোন আলাপচারিতা থেকে এই অভিশংসন-প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয়। অভিযোগ ওঠে, ফোনালাপের সময় আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং নিজের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে তাঁর ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর জন্য জেলেনস্কিকে চাপ দেন ট্রাম্প। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ডিসেম্বরে প্রতিনিধি পরিষদ ট্রাম্পকে অভিশংসিত করে। এখন সিনেটে এ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। যদিও সিনেটে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় তাঁর অভিসংশিত হওয়ার আশঙ্কা ক্ষীণ।