সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসনের বিচার শুরু

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসনের বিচার শুরু হলো গতকাল মঙ্গলবার। এই বিচার নিয়ে ইতিমধ্যে বিভক্ত ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান ও বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা। ডেমোক্র্যাটরা আহ্বান জানিয়েছেন, ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করা হোক। আর রিপাবলিকানরা ট্রাম্পকে ক্ষমতায় রাখতে বদ্ধপরিকর। তাঁরা চাইছেন যত দ্রুত সম্ভব এই বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হোক।

সিনেটে ট্রাম্পের বিচারপ্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় গতকাল স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে ( বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টা)। এই বিচার শুরুর জন্য গত সোমবার রিপাবলিকানদের সিনেটর মিচ ম্যাককোনেল নিয়মকানুনের একটি খসড়া প্রকাশ করেন। তাতে দেখা যায়, দুই পক্ষ বিচারের শুনানির জন্য বেশি সময় পাবে না। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারা দুই দিন মিলে ২৪ ঘণ্টা সময় পাবে। এ ছাড়া নতুন করে যাতে সাক্ষ্য গ্রহণ না করতে হয়, সে ব্যাপারে সিনেটকে সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে এই রিপাবলিকান সিনেটরের প্রস্তাবে।

ম্যাককোনেল বলেছেন, ১৯৯৯ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের অভিশংসনে যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছিল, সেখান থেকে এই খসড়াগুলো গ্রহণ করা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ক্লিনটনের অভিশংসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের প্রক্রিয়ার পার্থক্য রয়েছে। ক্লিনটনের অভিশংসনের সময় সিনেটরদের যে সময় দেওয়া হয়েছিল, তা কীভাবে, কোন কাজে ব্যবহার করবেন, সে ব্যাপারে কোনো বাঁধাধরা নিয়ম ছিল না। কিন্তু এবার সিনেটকে নিয়মের মধ্যে ফেলা হয়েছে। ফলে এটা স্পষ্ট যে রিপাবলিকানরা চাইছেন যত দ্রুত সম্ভব এই বিচার শেষ হোক। এদিকে ট্রাম্পও চাইছেন রিপাবলিকান সিনেটররা কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ থেকে আসা অভিযোগ দ্রুত খারিজ করে দিক।

>

বিচার নিয়ে ইতিমধ্যে বিভক্ত ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান ও বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে গত ২৫ জুলাই টেলিফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। অভিযোগ উঠেছে, এ সময় আগামী নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট মনোনয়নপ্রত্যাশী জো বাইডেনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য তাঁর ছেলে হান্টার বাইডেনের অতীত ব্যবসার ব্যাপারে তদন্তের জন্য জেলেনস্কিকে চাপ দেন ট্রাম্প। বিনিময়ে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা তহবিল অনুমোদন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিনিধি পরিষদ। পরে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর পরিষদে অভিশংসিত হন ট্রাম্প। অভিযোগ, ট্রাম্প ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং কংগ্রেসের কাজে বাধার সৃষ্টি করেছেন। এই দুটি অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে ১৬ জানুয়ারি সিনেটে দাখিল করা হয়।

সিনেটে এই শুনানি শুরুর আগে ট্রাম্পের আইনজীবীরা গত সোমবার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ভয়ংকরভাবে বিকৃত করেছে প্রতিনিধি পরিষদ।

ট্রাম্পের আইনজীবীরা সোমবার সিনেটে তাঁদের যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। এই নথিতে বলা হয়েছে, এই অভিশংসন প্রস্তাব অবিশ্বাস্য। অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পকে অভিশংসন করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে এর মাধ্যমে।

আর ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা অবজ্ঞা করেছেন।