যে ইতিহাসের অংশীদার আমিও

ভালো লাগছে এবং গর্ববোধও করছি এ কথা ভেবে যে, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের ইতিহাসের আমিও এক অংশীদার। এ প্রেসক্লাবের পথচলা এক-দু দিনের নয়, অনেক অনেক দিনের। নব্বই দশকের প্রথম দিকে এর ভাবনা শুরু হয়।
সে সময় নিউইয়র্কে কর্মরত বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছিল। একই সঙ্গে তীব্র হচ্ছিল একটি প্রেসক্লাবের প্রয়োজনীয়তা দাবিও। কিন্তু চাইলেই কি সব হয়? ক্লাব তো দু-একজনের বা ঘরে ঘরে খোলার ব্যাপার নয়। এতে বহুজনের অংশগ্রহণ দরকার। মতামতও এক হওয়া চাই। কিন্তু বাস্তবে হলো না। বারবার হোঁচট খেল উদ্যোগ। এর দায় আমি কাউকে দিতে চাই না। এটা আমাদের সমাজ-সংস্কৃতিরই অঙ্গ।
আমাদের এই পথচলার সফলতায় যাদের অবদান তাঁদের সবার কথা আজ কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি। বিশেষ করে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মরহুম ফাজলে রশীদ ও মরহুম গিয়াস কামাল চৌধুরী এবং মরহুম মিনার মাহমুদের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই।
মনে পড়ে, নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ের কথা। অ্যাস্টোরিয়ার ৩০ অ্যাভিনিউয়ের এক দোকানের বেসমেন্টে প্রেসক্লাব করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছিলাম। সে বেসমেন্টের অনেক সংস্কার দরকার ছিল। এম এম শাহীন ও আমি কায়িক শ্রম দিয়ে সে জায়গাটাকে বসার উপযোগী করলাম। দেয়ালে পেইন্ট করতে গিয়ে আমার শীতের জ্যাকেটটি রং লেগে পরার অনুপযোগী হয়ে গেল। তবুও কোটটি রেখে দিয়েছিলাম স্যুভেনির হিসেবে। পরে আমার স্ত্রী কবে যে ঘরের বোঝা কমালেন জানতে পারিনি। তবে সে যাত্রায় প্রেসক্লাব হলো না। কারণ, সব মত এক হয়নি।
উদ্যোগ অবশ্য থেমে থাকেনি। স্থানীয়দের সঙ্গে ঢাকার সাংবাদিক নেতারাও মাঝেমধ্যে শরিক হতেন। কিন্তু কোনোটিই আলোর মুখ দেখেনি। সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর উপস্থিতিতে অ্যাস্টোরিয়ার কস্তুরি কান্ট্রি ক্লাবে সাংবাদিকদের বৈঠক হয়। সে চেষ্টাও বিফলে যায়। পরে জ্যাকসন হাইটসের মেঘনায় ঢাকার সাংবাদিক নেতা মরহুম গিয়াস কামাল চৌধুরী ও রিয়াজউদ্দিন আহমদের উপস্থিতিতে পক্ষ-বিপক্ষ সবার এক বৈঠকে সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়। আলো ছড়ায় খানিকটা। সমঝোতার খবরও বের হয় পত্রিকায়। কিন্তু এ সমঝোতার স্থায়িত্ব ছিল এক বা দু দিন।
মরহুম মিনার মাহমুদের উদ্যোগটি ছিল বেশ আশাব্যঞ্জক। আহ্বায়ক কমিটি গঠন, সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়ন, যোগাযোগ—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল, এবার কিছু একটা হবে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন সাংবাদিক তাসের মাহমুদ ও আবু তাহের। দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেও এ যাত্রায় কিছু হলো না। কারণ ওই একই। ভিন্ন ভিন্ন মত। অভিন্ন না হলে হবে কী করে?
সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এল ২০০৮ সালে। দৈনিক সংবাদের সম্পাদক বজলুর রহমানের মৃত্যুতে শোকসভার আয়োজন করা হয় জ্যাকসন হাইটসে সাপ্তাহিক দেশবাংলা অফিসে। সে সভায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মরহুম ফাজলে রশীদসহ নিউইয়র্কে কর্মরত বাংলাদেশের অধিকাংশ সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। ওখানে খুব গুরুত্বের সঙ্গে প্রেসক্লাবের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয় এবং প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়, যেকোনো মূল্যে প্রেসক্লাব করতেই হবে। দেশ বাংলা সম্পাদক ডা. চৌধুরী সারোয়ারুল হাসানের দুটি ঘোষণা খুব ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে সে সময়। এক, হোক না আরেকটি, আমরা আমাদেরটা করবই। দুই, প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে দেশবাংলা অফিস।
অবশেষে প্রেসক্লাব আলোর মুখ দেখল। নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব। গঠনতন্ত্র হলো। আমি, মাহফুজুর রহমান ও শিহাব উদ্দিন কিসলুর নামে নিউইয়র্ক স্টেটের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলো। সাধারণ সভায় আমাকে সভাপতি ও শিহাব উদ্দিন কিসলুকে সাধারণ সম্পাদক করে প্রেস ক্লাবের প্রথম কমিটি গঠিত হলো।
যাত্রা হলো শুরু। এ যাত্রা আজ আরও বেগবান। ডা. ওয়াজেদ খান ও মনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে যে নতুন কমিটি অভিষিক্ত হতে যাচ্ছে, তারা ক্লাবকে আরও সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করবেন—এ প্রত্যাশা থাকবে। নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব নামে যে ছাতা, তার নিচে যেন সব সাংবাদিকের সমাবেশ ঘটে। একই সঙ্গে পেশার মর্যাদা ও সাংবাদিকতার আদর্শকে সর্বদা সমুন্নত রাখতে এ সংগঠন যেন অবদান রাখে। সবাইকে অভিনন্দন।