ট্রাম্পের বিচারের পালে জন বোল্টনের হাওয়া

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জন বোল্টন। ছবি: রয়টার্স
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জন বোল্টন। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন নতুন বোমা ফাটিয়েছেন। আর এতে নতুন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা সামাল দিতে মোটামুটি হিমশিম খেতে হচ্ছে হোয়াইট হাউস ও ক্ষমতাসীন রিপাবলিকানদের। কারণ, বোল্টনের বইয়ের পাণ্ডুলিপি ফাঁস হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন বিচারের পালে নতুন হাওয়া লেগেছে।

বোল্টন নতুন একটি বই লিখেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস গত সোমবার এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে। এর আগে গত রোববারও বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছে সংবাদপত্রটি। সোমবারের প্রতিবেদনে এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে, যা একেবারেই নতুন। এই বইয়ের পাণ্ডুলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বোল্টন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারকে বলেছিলেন, তিনি উদ্বিগ্ন। কারণ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্তৃত্ববাদী নেতাদের জন্য কাজ করছেন।

ট্রাম্পের বিচার চলছে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে। ট্রাম্পের আইনজীবীরা সেখানে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন। এই আইনজীবীরা বলেছেন, বোল্টন যেসব তথ্য জানিয়েছেন, তা ট্রাম্পের বিচারের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। বোল্টনের বইয়ের পাণ্ডুলিপি নিয়ে ট্রাম্পের আইনজীবীদের মধ্যে একমাত্র অ্যালেন ডার্শউইটজ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, বোল্টনের বইয়ে নতুন কোনো তথ্য নেই। তিনি যে তথ্যগুলো তুলে ধরেছেন, সেগুলো যদি সত্যও হয়, তারপরও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে বিচার চলছে, তাতে কোনো প্রভাব পড়বে না।

অ্যালেন ডার্শউইটজ বলেন, প্রেসিডেন্টরা তাঁদের ব্যক্তিস্বার্থের সঙ্গে নীতি মিলিয়ে ফেলেন। আর বিশ্বের বিভিন্ন নেতাকে সুবিধা দেওয়া-নেওয়া একেবারেই স্বাভাবিক। প্রেসিডেন্টদের এমন পদক্ষেপ অভিশংসিত হওয়ার মতো নয়। ‘ব্যক্তিস্বার্থ’ এবং ‘দেওয়া-নেওয়ার’ মতো শব্দ ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের এমন পদক্ষেপকে অভিশংসন যোগ্য করে তোলা যায় না।

কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্প অভিশংসিত হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং কংগ্রেসের কাজে বাধা দিয়েছেন। বোল্টনের বইয়ের পাণ্ডুলিপিতে এই অভিযোগের পেছনের গল্প উঠে এসেছে। বইয়ের তথ্য এই অভিযোগগুলোর সত্যতা তুলে ধরেছে।

ট্রাম্পের আইনজীবীদের সঙ্গে বোল্টনের বইয়ের পাণ্ডুলিপির তথ্য সাংঘর্ষিক। এমন তিনটি বিষয় হলো, বোল্টনের পাণ্ডুলিপির মধ্য দিয়ে সুবিধা দেওয়া-নেওয়ার বিষয়টি আবারও প্রমাণিত হলো। ইউক্রেনের সহায়তা স্থগিতের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নীতিসংশ্লিষ্ট বিষয় যুক্ত ছিল না। আর এই পদক্ষেপের সঙ্গে ট্রাম্প সরাসরি জড়িত।

সহায়তা আটকানোর পদক্ষেপের সঙ্গে ট্রাম্প সরাসরি জড়িত—এই পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, হোয়াইট হাউসের কেউ প্রতিনিধি পরিষদে গিয়ে সাক্ষ্য দেননি। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত গর্ডন সন্ডল্যান্ড পরিষদে সাক্ষ্য দিয়েছেন, বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাতে ইউক্রেনকে চাপে ফেলতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প।

বোল্টন যেসব তথ্য তুলে ধরেছেন, তাতে সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যাপারে সিনেটের ওপর চাপ বাড়ছে। এখন দেখার বিষয় এই চাপ কীভাবে সামাল দেন সিনেটররা।