ট্রাম্প ক্ষমতা থেকে অপসারিত হচ্ছেন না

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

কথা ছিল শুক্রবার শেষ রাতেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তাঁকে বেকসুর অব্যাহতি দেওয়া প্রশ্নে ভোট হবে। সে সিদ্ধান্ত বদল করে রিপাবলিকান নেতৃত্ব এখন ঠিক করেছে আগামী বুধবার, ওয়াশিংটন সময় বিকেল চারটায় চূড়ান্ত ভোট হবে। তার আগে আড়াই দিন দুই দলের সিনেট সদস্যরাই যাঁর যাঁর নিজের ভোট ব্যাখ্যা করে বিবৃতি দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

শুক্রবার হোক অথবা বুধবার, এই ভোটের ফলাফলে কোনো হেরফের কেউই আশা করেন না। ট্রাম্প ক্ষমতা থেকে অপসারিত হচ্ছেন না, এর জন্য পর্যাপ্ত ভোট ডেমোক্র্যাটদের নেই। শুধু তা–ই নয়, অতিরিক্ত সাক্ষী ও নথিপত্র উপস্থিত করার যে জোর দাবি তাঁরা করেছিলেন, শুক্রবার সে দাবিও উবে যায়। রিপাবলিকান পার্টির চার সিনেটর নিজ দল ত্যাগ করে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে যুক্ত হলে জন বোল্টনের মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে উপস্থিত করা যেত। কিন্তু সে প্রশ্নে ভোটাভুটির সময় দেখা গেল মাত্র দুজন রিপাবলিকান সিনেটর—মিট রমনি ও সুসান কলিন্স—তাঁদের সঙ্গে যোগ দিতে রাজি হন। এর ফলে ৫১-৪৯ ভোটে অতিরিক্ত সাক্ষী আহ্বানের ডেমোক্রেটিক প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য এটি একটি বড় ধরনের বিজয়। তিনি বরাবরই দাবি করে এসেছেন, তিনি কোনো অন্যায় করেননি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যে টেলিফোন কথোপকথনের ভিত্তিতে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ তাঁকে অভিশংসিত করে, ট্রাম্প তাকে ‘পারফেক্ট কল’ বলে অভিহিত করেছেন। হোয়াইট হাউস থেকে নতুন সাক্ষ্য–প্রমাণের বিরুদ্ধে গৃহীত ভোটকে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়েছে, এর ফলে ইতিহাসের সবচেয়ে নগ্ন ‘রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজির’ অবসান হলো।

বলা বাহুল্য, ডেমোক্র্যাটরা এই মতামতের সঙ্গে একমত নন। সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের নেতা চাক শুমার রিপাবলিকানদের ব্যবহারকে ‘একটি ট্র্যাজেডি’ বলে অভিহিত করেছেন। এই প্রথম একটি বিচার অনুষ্ঠিত হলো, যেখানে নতুন সাক্ষ্য–প্রমাণ হাজির করতে দেওয়া হয়নি। ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত নেই, তিনি বলেছেন।

একই কথা বলেছেন অভিশংসন বিচারে ডেমোক্র্যাটদের প্রধান ম্যানেজার এডাম শিফ। ‘আজ হোক অথবা কাল, পুরো সত্য প্রকাশিত হবে। প্রশ্ন হলো, সে সত্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে না পরে প্রকাশিত হবে।’ তিনি যুক্তি দেখান, ন্যায়বিচারের স্বার্থেই বোল্টনের মতো একজনকে বিচারে সাক্ষী প্রদানের জন্য ডাকা প্রয়োজন।

শেষ পর্যন্ত যে লিসা মুরকাউস্কি ও লামার আলেকজান্ডারের মতো মধ্যপন্থী রিপাবলিকান সাক্ষী প্রশ্নে মত পরিবর্তন করেন, তার কারণ তাঁদের ওপর সিনেট নেতা মিচ ম্যাককনেলের প্রবল চাপ। হোয়াইট হাউস থেকেও চাপ প্রয়োগ করা হয় দ্বিধায় রয়েছেন এমন রিপাবলিকান সিনেটরদের ওপর। মুরকাউস্কি ও আলেকজান্ডার উভয়েই বলেছেন, ট্রাম্প হয়তো যথাযথ ব্যবহার করেননি, কিন্তু এই অপরাধে তাঁকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। একই কথা বলেছেন সিনেটর মার্কো রুবিও ও রব পোর্টম্যান।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট, রিপাবলিকান পার্টি এখন পুরোপুরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হাতের মুঠোয়। যেসব রিপাবলিকান আগামী নভেম্বরে পুনর্নির্বাচনের সম্মুখীন হবেন, তাঁরা কেউই ট্রাম্প অথবা তাঁর অনুগত সমর্থকদের ক্ষিপ্ত করতে চাননি। একজন রিপাবলিকান নির্বাচনী বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্পের জন্য মাঝামাঝি বলে কিছু নেই। হয় তুমি তাঁর পক্ষে অথবা বিপক্ষে। ট্রাম্পের অনুগত সমর্থকদেরও একই অবস্থান।

বিষয়টি আরও খোলাসা করে বলেছেন ডেমোক্রেটিক সিনেটর শ্যারোড ব্রাউন। তিনি মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্পকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেন না, এমন অনেক রিপাবলিকান সিনেটর রয়েছেন। তাঁদের অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে স্বীকার করেন, ট্রাম্প যখন-তখন মিথ্যা বলেন। কিন্তু তাঁরা কেউই সে কথা মুখে স্বীকার করবেন না। আর সেটাই হলো বর্তমান সময়ের এক গভীর ট্র্যাজেডি।