ভালোবাসার ব্যাখ্যা আসলে কি?

পৃথিবীর প্রথম সৃষ্ট মানব হজরত আদম (আ.)–এর বুক থেকে তুলে নেওয়া পাঁজরটা দিয়ে যেদিন বিবি হাওয়া (আ.)–কে সৃষ্টি করা হয় কিংবা বলা হয় গোধূলি বেলার ছায়া ঢাকা বনভূমিতে যেদিন আদম তার প্রিয় ইভের ঠোঁটে এঁকে দিয়েছিলেন প্রণয়ের প্রথম চুম্বন, সেদিন থেকেই জন্ম ভালোবাসা নামক অনিন্দ্য সুন্দর এক অনুভূতির।
ভালোবাসা-এমনই এক শব্দ বর্ণনাহীন, ব্যাখ্যাহীন, যুক্তিহীন কিছু; যা শুধু অনুভব করা যায়। ভালোবাসা নিয়ে কত কী হলো! কেউ বেঁচে গেল, কেউ চলে গেল। যুক্তিহীন আবেগে কবি লিখে গেলেন সেরা কবিতা। তবু যেন ভালোবাসার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ঠিক মনঃপূত নয়।
ভালোবাসার পেছনে কোনো কারণ থাকে না; কোনো সীমানা থাকে না। এক বন্ধু বলেছিলেন, ‘ভালোবাসা মানেই মায়া’র শুরু। ভালোবাসা যখন ধ্বংসের উন্মত্ততা জাগায় প্রাণে, মায়া তা আগলে রাখে অনেক যতনে। আর তাই ভালোবাসার পূর্ণতা যে মায়াতেই বন্ধু।’
অস্বীকার করছি না। ভালোবাসা থেকেই মায়ার জন্ম। ভালোবাসা আর মায়া, একে অপরের পরিপূরক। যে ভালোবাসায় মায়া নেই, সেই ভালোবাসা প্রাণহীন দেহের মতো। মায়া আছে বলেই ভালোবাসা এত মধুর। আবার ভালোবাসায় যদি মায়া না থাকে, তবে সেই ভালোবাসা হয় অসম্মানজনক, কষ্টকর। হৃদয়ে ধারণ করা সে কষ্ট নিয়ে আমরা নিরন্তর চলি, ভুল করে হলেও ভুলে যাই না ভালোবাসার মানুষটিকে। তাই তো আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘যাকে সত্যিকার ভালোবাসা যায়, সে অতি অপমান, আঘাত করলে, হাজার ব্যথা দিলেও তাকে ভোলা যায় না।’
ভালোবাসা এমন এক মাধ্যম, যাতে জীবনের গতিপথ হারানোর ভয় থাকে না। আমরা কেবল ভালোবাসতেই থাকি...বুঝে-না বুঝে। এক সময় সে ভালোবাসায় যুক্ত হয় প্রেম। তারপর ভালোবাসা হয়ে উঠে অমলিন। তাই তো কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘আমি তোমাকে অসংখ্যভাবে ভালোবেসেছি, অসংখ্যবার ভালোবেসেছি, এক জীবনের পর অন্য জীবনেও ভালোবেসেছি, বছরের পর বছর, সর্বদা, সবসময়...!’ ভালোবেসে সুনীল বাবু হয়ে গেলেন প্রেমিকার রাতের প্রহরী। প্রিয় হুমায়ূন স্যার বনে গেলেন অপরিকল্পিত প্রেমিক যোদ্ধা।
ভালোবাসায় কোনো ব্যাকরণ নেই, নেই কোনো সমীকরণ। পৃথিবীতে ভালোবাসার একটি মাত্র উপায় হলো, প্রতিদান পাওয়ার আশা না করে শুধু