প্রেম-ভালোবাসায় এক জীবন

বিষয়বস্তু অত্যন্ত নাজুক ও স্পর্শকাতর। স্মৃতিতর্পণে আনন্দ-বেদনা, কিছু মিশ্র অভিজ্ঞতা, অনুভূতি—এসবের বাইরে রসঘন গল্পসল্প বা এর অল্প-বিস্তর উপাদান অন্তত আমার প্রেম-ভালোবাসার ইতিহাসে তেমন নেই। আমার ভালোবাসার মানুষটি ‘বেকুব’ বলে আমাকে নিত্যই গঞ্জনা দেয়। সাহস করে লিখতে বসলাম কারণ, প্রিয়দর্শিনী অনুরোধ করেছে ছোট্ট করে হলেও একটা কিছু লিখতে হবে। সুন্দর মুখশ্রীর মহিলাটি যদি ‘সুমনা’ হয় তাহলে আমার এ বয়সে তার নির্দেশ না মেনে উপায় দেখি না। আমি আবার সেই কৈশোরোত্তীর্ণ বয়স থেকেই সুন্দর মুখের পূজারি। আর সে কারণেই বোধ করি চৌদ্দ- পনেরো বছর বয়স যখন, তখন থেকেই হরহামেশা প্রেমে পড়েছি। অঞ্জলি, ছবি—এ দুজনের সঙ্গে একই সময়ে প্রেমে পড়েছিলাম। স্কুলের ছুটিতে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের হোস্টেল ছেড়ে ট্রেনে ছাতিয়াইন স্টেশনে নেমে ঘুরপথে ছবিদের বাড়ি হয়ে তার বড় ভাই, আমার বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে তবেই বাড়ি ফিরতাম। বিকেলে গ্রামের অন্য প্রান্তে অঞ্জলিদের বাড়িতে যেতাম বালক পাতা আনার ছলে। দু বাড়িতেই প্রচুর ফুলগাছ ছিল। ছবি যখন সন্ধ্যা পূজার জন্য ফুল তুলত, তাকে ফুলের সাথে এক মনে হতো।

পঁচাত্তর থেকে আজ অবধি ভালোবাসার জনের সঙ্গে মান-অভিমান, ঝগড়া -ফ্যাসাদ, নিত্য প্রেম-সোহাগে দিন কেটে যাচ্ছে নাতি-নাতনিদের সঙ্গসুখে। মনে নিত্যদিনই মধুসুধা, মধুসঙ্গীসবের সাহচর্যে ভালোবাসায় ডুবেই আছি। প্রেম স্মৃতি মাঝেমধ্যে উঁকি দেয় কি?


মেট্রিক (এসএসসি) পরীক্ষার বছর ঘনঘন বাড়ি আসা সম্ভব ছিল না। পরীক্ষা শেষে বাড়ি এসে শুনি দু প্রেমিকাই আগরতলা চলে গেছে। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় সিলেট থেকে বাড়ি এলে প্রেম-প্রেম খেলার চেয়ে ফুটবল দল গড়া ও খেলা, মাছ ধরা ইত্যাদির নেশায় ব্যস্ত থাকতাম বেশি। দু-একটি প্রেম এ সময়েও করেছি; তবে স্থায়িত্ব কম ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর বেশ দীর্ঘস্থায়ী প্রেম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। খোয়াই পাড়ের স্নিগ্ধ, সোজা-সরল, মা-হারা সুন্দর মনের মেয়েটির অন্তরঙ্গ বন্ধনে বাঁধা ছিলাম বেশ একটি দীর্ঘ সময়ের জন্য। বাকহীন আত্মসমর্পণে তার দ্বিধাদ্বন্দ্ব না দেখে আত্মসংযমে কষ্ট হতো খুব। কিন্তু বিবেকের কাছে অপরাধী না হয়ে থাকতে পেরে আজীবন তুষ্ট আছি। এ সম্পর্কটি ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়নি। তবে দুটি মনেই তা ঢেউ তুলেছিল; আলোড়ন চলেছিল অনেক দিন। পঁচাত্তর থেকে আজ অবধি ভালোবাসার জনের সঙ্গে মান-অভিমান, ঝগড়া -ফ্যাসাদ, নিত্য প্রেম-সোহাগে দিন কেটে যাচ্ছে নাতি-নাতনিদের সঙ্গসুখে। মনে নিত্যদিনই মধুসুধা, মধুসঙ্গীসবের সাহচর্যে ভালোবাসায় ডুবেই আছি। প্রেম স্মৃতি মাঝেমধ্যে উঁকি দেয় কি? নিজেরই একটি কবিতা এখন মনে পড়ছে—

প্রেম বনাম ভালোবাসা
স্মৃতি বড্ড একমুখো চলতেই থাকে অবিরাম, অবিরত আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ এসবের চেয়েও প্রেম স্মৃতিময়। ভালোবাসার উদয় মধুরেণ সময়ে ধীরে ধীরে হৃদে হয় স্থিত আস্থা, বিশ্বাস, নির্ভরের পারস্পরিকতা আজীবন মধুময়। আশ্চর্য মনে হয় তবুও কেন স্মৃতিতে প্রেমই থাকে সরব, ভালোবাসায় মানুষ কাঙাল হয়, প্রেমে কিন্তু তা নয়। মনের গহ্বর হতে অতীতের শিহরণ প্রেম-স্মৃতি আনে আবেগ ভালোবাসার হৃৎস্পন্দন বহুগুণ অনুভূতি সুগভীর মৃদু গম্ভীর লয়ে বাজতে থাকা সুগভীর আবেশী তান, প্রেম সাবওয়ের ব্রেক ড্যান্সিং, পরের স্টেশনে নীরব নিথর। ভালোবাসা পেঁয়াজ পাতার স্নায়ু শীতল দীর্ঘায়িত সুবাস প্রেম ক্ষণস্থায়ী, ভালোবাসাজুড়ে থাকে সারা তনুমন বেলি, লিলি এসবের ক্ষণস্থায়ী গন্ধে প্রেম বড় অভাজন তবু ও প্রেম-স্মৃতি মনে জাগায় ক্ষণে ক্ষণে সুধাময় অনুরণন।