পার্পল চশমা

রোজ মানে সপ্তাহের পাঁচ দিনই জয়তীকে সকালের বাস ধরতে হয়। ৮টা ৫০-এর আরটিএ বাস। কলম্বিয়ার এ জায়গায়টা ঘন জঙ্গল। চারদিকে সবুজ বনরাজি, খোলা নীল আকাশ; ভারী সুন্দর। মনে হয় গ্রামবাংলার সেই ছোট্ট অনিন্দ্য যাপন। জয়তীর বাড়ির পেছন দিকের ফাঁকা জায়গাটা পেরোলেই একটা তিরতির করে ছুটে চলা সুতার মতো নদীও আছে। নাম পাটুক-স্টান। ছোট ছোট পাথর বুকে নিয়ে বয়ে যায় আপন মনে, ঠিক যেন নিতান্ত বালিকার অচঞ্চল এগিয়ে যাওয়া। কত রকম রং-বেরঙের পাখি, কাঠবিড়ালি। নিজেদের নিয়ে তারা ব্যস্ত সমস্ত দিন। চারদিক নিস্তব্ধ, নিজের নিশ্বাসও যেন চমক জাগায়।
বাসে যাতায়াত এখন আনন্দময় জয়তীর জন্য। প্রায় প্রত্যেক চালক পরিচিত। তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে, যেন তারা আত্মীয়ের অধিক। টিকিট দেখিয়ে ইচ্ছেমতো সিটে বসা। পছন্দের বেগুনি ফ্রেমের চশমাটা আয়নায় দেখে মিঠে-কড়া আবেশে আপ্লুত হওয়া। নতুন চশমা হলে যা হয় আর কি!
শুক্রবার কিছু পরিচিতজনের আসার কথা। জয়তী একটু আগেই অফিস থেকে বেরিয়ে হোল-ফুড থেকে কিছু ফল নিয়ে বাসায় আসে। দু দিন ছুটি। খানিকটা অবসর। গড়িয়ে সময় যাপন। ফেসবুক চেক করতে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল হলো চশমাটা নেই। নেই নেই তো কোথাও নেই। খানিকটা ভারাক্রান্ত হলো মন; সত্যি চল্লিশের ভুল মন।
শনি রবি পেরিয়ে সোমের সকাল। পুরোনো চশমায় বাসস্ট্যান্ডে আবার। বাসের অপেক্ষা। পাতা ঝরার সময় এক-দুটি পাতা হাওয়ার আগে দৌড়োচ্ছে বড় রাস্তার ওপর। হঠাৎ হুড়মুড় করে চার শ চার নম্বর বাস সামনে। দরজায় জয়তী। চমকে চেয়ে দেখে এক অচেনা চালক টিকিট চেক করছে; চোখে অবিকল সেই তার পার্পল চশমা।
মুহূর্তে শরৎচন্দ্রের নুতনদাকে মনে পড়ে জয়তীর। ‘আমার একপাটী পাম’ সদৃশ ‘আমার পার্পল চশমা’!