বেপরোয়া চালালে গাড়ি জব্দ

সেই আদি থেকেই মানুষ চেনা পরিসরে থাকতে চেয়েছে। পথ তার কাছে একই সঙ্গে দুর্নিবার এক আকর্ষণ ও সংশয়ের নাম। দুইয়েরই উৎস অপরিচয়। চেনা পথের চেয়ে অচেনা পথ দীর্ঘ মনে হয়। এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে তাই মানুষ বরাবরই সঙ্গী খুঁজেছে। পথকে নিরাপদ করতে করেছে নানা আয়োজন। সভ্যতার ইতিহাস তাই মানুষের বিচরণ পথের বিবর্তনেরও ইতিহাস।
মানুষ বরাবরই চেয়েছে তার চলাচলের পথটি নিরাপদ হোক। সেখানে যেন কোনো শঙ্কা, কোনো মৃত্যু ওত পেতে না থাকে। একসময় সমাজনেতারা দায়িত্বটি পালন করেছেন। বহু দিন হয় এ দায়িত্ব পালন করে আসছে রাষ্ট্র ও প্রশাসন।
হালের গুগল মানচিত্রের কল্যাণে কোনো পথই আর অচেনা নেই বলা যায়। তাই পথে নেমে পথেই হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা এখন আগের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু পথ তো শুধু পথ নয়। সেখানে আরও নানা অনুষঙ্গ থাকে। থাকে মানুষ, স্থাপনাসহ নানা কিছু। আর সবচেয়ে বেশি যে বস্তুটি থাকে, তা হলো নানা ধরনের গাড়ি। পথ আর এখন মানুষের নেই শুধু। নাগরিক পথ মূলত গাড়ির জন্যই। তাই পথকে নিরাপদ করতে হলে অনেক ধরনের আয়োজন করতে হয়।
এই আয়োজনেরও সর্বশেষ একটি উদ্যোগ নিল নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষ। গত বেশ কিছুদিন ধরেই নিউইয়র্ক নগরের পথে দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। গত কয়েক মাসে সড়ক দুর্ঘটনাতেই মারা গেছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি। এসব দুর্ঘটনার মূলে রয়েছে বেপরোয়া গাড়ি চালানো। বড় বড় শহরের দুর্ঘটনার ধরন বর্ণনার জন্য এমনকি ‘হিট অ্যান্ড রান’-এর মতো শব্দবন্ধও চালু হয়ে গেছে অনেক দিন হলো। চালানো হয়েছে নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচি। চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে এমনকি নানা কর্মশালার আয়োজনও করে রেখেছে প্রশাসন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। না সচেতন হচ্ছেন, না সচেতন হতে কর্মশালায় যাচ্ছেন চালকেরা। এ অবস্থায় বেপরোয়া গাড়ি চালালেই গাড়ি জব্দ করার বিধান রেখে নতুন একটি আইন করেছে নগর কর্তৃপক্ষ। উদ্দেশ্য, জব্দ গাড়ির মালিককে নিরাপদ গাড়ি চালনা সম্পর্কিত কোর্স গ্রহণে বাধ্য করা। বছরে একটি নির্দিষ্টসংখ্যক আইন ভাঙলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ কোর্স গ্রহণে বাধ্য করা হবে।
বর্তমান দুনিয়ায় কোনো মানুষের পক্ষে একেবারে ঘরে বন্দী হয়ে কাটানো সম্ভব নয়। তাকে পথে বেরোতেই হয় নানা প্রয়োজনে। পথের নিরাপত্তা তাই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তাই এমনকি গল্পের সেই আত্মহত্যা করতে যাওয়া অন্ধ মানুষটিও অন্য লোক সাপের কাছ থেকে নিরাপদ থাকতে হারিকেন ও লাঠি হাতেই পথে নামে। বিশৃঙ্খল সড়ক নিরাপদ করার দাবিতে বাংলাদেশে হয়ে যায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। এ সবই বলে দেয়, নিরাপদ পথ মানুষের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নিউইয়র্ক নগর এ গুরুত্ব অনুধাবন করেই সড়ক নিরাপদ করতে কঠোর আইন করেছে, যা যেকোনো নগর কর্তৃপক্ষেরই অনুসরণীয়।