আমেরিকা জরুরি চিকিৎসাসেবায় পিছিয়ে!

আমেরিকা নাম শুনলেই প্রথমে সবার মাথায় আসবে উন্নত জীবনব্যবস্থার কথা। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী এই দেশ নাগরিকদের জন্য উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সব সময়ই সচেষ্ট। এক্সিওস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী, আমেরিকায় ২০১৮ সালে চিকিৎসা খাতে ব্যয় করা হয় প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি মার্কিন ডলার, যা ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, স্পেন, কানাডার মতো দেশগুলোর জিডিপি থেকেও বেশি। 

প্রশ্ন হচ্ছে, চিকিৎসা খাতে এত অর্থ ব্যয় করার পরেও কি আমেরিকার সরকার জনসাধারণকে যথাযথ চিকিৎসাসেবা দিতে পারছে? বৃহৎ পরিসরে বিবেচনা করলে এবং বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা অনুসারে, ব্যয়কৃত অর্থের সঙ্গে তুলনা করলে এ দেশের সরকার যথাযথ চিকিৎসাসেবা দিতে ব্যর্থ। পর্যালোচনা করে এর অনেক কারণ পাওয়া যায়। তার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো, তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে জরুরি বিভাগ বা ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্টে চিকিৎসার জন্য রোগীদের দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে বসে থাকা।
কোন দুর্ঘটনার শিকার হলে কিংবা হঠাৎ করেই অসুস্থবোধ করলে চিকিৎসার জন্য রোগীরা সাধারণত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ছুটে যান। হাসপাতাল রিভিউ নামে একটি অনলাইন জরিপের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকায় বছরে প্রায় ১৪০ মিলিয়ন লোক তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগের শরণাপন্ন হন। গবেষণা বলছে, এ সংখ্যা দিনদিন রকেটের গতিতে বাড়বে। পুরো আমেরিকায় জরুরি বিভাগের শরণার্থীর হওয়া রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে হাসপাতালগুলো ব্যর্থ হচ্ছে।
হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ে একটি গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, জরুরি বিভাগে যাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য কোন রুম পেতে অথবা ডাক্তার কিংবা নার্সের পরীক্ষার জন্য রোগীকে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়।
বিভিন্ন জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ডাক্তারের কাছে রোগীর অপেক্ষার এ সময় ভিন্ন ভিন্ন। হাসপাতাল, অঙ্গরাজ্য, বিভিন্ন সময়ভেদে অপেক্ষমাণ এ সময় আরও দীর্ঘ হয়ে থাকে। এমনও শোনা যায়, কখনো কখনো রোগীকে ১০ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ধরে ডাক্তারের পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতে হয়। গবেষণাটির ফল অনুযায়ী, ভাঙা হাড় নিয়েও কেউ জরুরি বিভাগে গেলে তাকে প্রায় ৫৪ মিনিট দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করে অপেক্ষা করতে হয়। কোন চিকিৎসা সেবা না নিয়েই অপেক্ষা করতে করতে জরুরি বিভাগ থেকে চলে যাওয়া রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে।
জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের ২০১০ সালে প্রায় ১ হাজার ২৬ ডলার প্রদান করতে হত। ২০১৬ সালে এসে তা দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ৯০০ ডলারে। আমেরিকানরা ঘরভাড়ার পেছনে মাসে গড় যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, তার প্রায় দ্বিগুণ দিতে হয় একবার জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে গেলে। আর জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গেলে প্রায় ১৩ হাজার ১৯৮ ডলার দিতে হয়। রোগীদের কাছে থেকে এত অর্থ আদায় করার পরেও বেশির ভাগ হাসপাতালই জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য রোগীদের অপেক্ষার এ সময় কমাতে ব্যর্থ।
জরুরি বিভাগে রোগীদের এত সময় অপেক্ষা করার পেছনে নানাবিধ কারণ রয়েছে। তার মধ্যে পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও বেডের অভাব অন্যতম। হেলথ ইন্স্যুরেন্স না থাকার কারণে অনেকে প্রাইমারি ডাক্তারের শরণার্থীর হতে পারেন না, তাই তাদের চিকিৎসা সেবা নেওয়ার একমাত্র জায়গা হলো হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রাইমারি ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে থাকতে হয়। তাই প্রাইমারি ডাক্তারের অপেক্ষা না করে অনেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ছুটে যান। এজন্য হাসপাতালের জরুরি বিভাগগুলোতে দীর্ঘ লাইন লেগেই থাকে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগগুলোতে সাধারণত এমন সব রোগীর প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে, যাদের অবস্থা গুরুতর। যেমন বুকে ব্যথা, মারাত্মক রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। এ কারণেও বাকি অনেককে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে বসে থাকতে হয়।
বাইরে থেকে যতই চাকচিক্য দেখা যাক না কেন আর যতই অর্থ ব্যয় করা হোক না কেন, বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে আমেরিকা চিকিৎসা ব্যবস্থায় আক্ষরিক অর্থেই পিছিয়ে আছে, যার অন্যতম প্রমাণ জরুরি বিভাগগুলোতে আসা রোগীদের চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা। ভবিষ্যতে রোগীদের এই কষ্ট লাঘব হবে বলে সবারই প্রত্যাশা।