নিউইয়র্কে জালনোট ক্যাবচালকেরা সতর্ক থাকুন

জাল ডলারের নোট নিয়ে নিউইয়র্ক নগরে প্রতারক চক্রের একাধিক দল সক্রিয়। সংঘবদ্ধ এসব চক্রের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন নিরীহ মানুষ বিশেষ করে ক্যাবচালকেরা। এঁদের মধ্যে আবার ইয়েলো ক্যাবচালকেরা আবার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বেশি। কারণ, কলক্যাব, উবার বা লিফটের সার্ভিস দেওয়া হয় অ্যাপস বা ফোনকলের মাধ্যমে ফোনকলের মাধ্যমে বা অ্যাপসের মাধ্যমে যাত্রী আসে। তাদের পথে পথে ঘুরে যাত্রী খুঁজতে হয় না। ইয়েলো ক্যাবচালকদের ক্ষেত্রে বিষয়টি উল্টো। তাদেরকে যাত্রীর সন্ধানে নগরের রাস্তায় ঘুরতে হয়।
এভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশি ক্যাবচালক আহমেদ। তাঁর ক্যাব নম্বর ১ডব্লিউ৭৭। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার রাতে তিনি প্রতারণার শিকার হন।
আহমেদ বলেন, তিনি রাতের শিফটে কাজ করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত নয়টার দিকে একজন যাত্রী নিউইয়র্ক নগরের ওয়েস্ট হারলেম ১২৫ স্ট্রিট নামিয়ে অন্য যাত্রীর সন্ধানে ব্রডওয়ে অনুসরণ করে সাউথে আসতে থাকেন। ৭৮ স্ট্রিট ব্রডওয়ে দুজন যাত্রী তাকে ইশারা দিলে তিনি গাড়ি থামান। তারা ক্যাবে ওঠার আগে ইশারায় ক্যাবের জানালার গ্লাস খুলতে বলে। অনেক সময় কোন যাত্রী নগরের পাঁচ বরোর বাইরে যেতে চাইলে গাড়িতে ওঠার আগে ভাড়ার পরিমাণ জেনে নেয়। তিনি জানালার গ্লাস খোলেন। 

আহমেদ বলেন, দুই যাত্রীর মধ্যে একজন নারী। অন্যজন শ্বেতাঙ্গ তরুণ। তরুণ নাজুকভাবে অনুরোধ করেন, তার সঙ্গী নারীর ছেলেবন্ধু ভেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাই শুধু ওই নারীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। তিনি বলেন, ভাড়া ৩০ ডলার আসবে। মিটারে ভাড়া এমনই হবে, কারণ তিনি গতকাল ট্যাক্সি করেই গিয়েছিলেন। ভাড়ার ৩০ ডলার তিনি অগ্রিম দেবেন। কিন্তু তাঁর কাছে ১০০ ডলারের নোট। সুতরাং তাঁকে ৭০ ডলার ফেরত দিতে হবে।
আহমেদ বলেন, তরুণের কথা শোনার পর তিনি যেতে অনীহা প্রকাশ করেন। তিনি তাঁদের বলেন, মিটার ছাড়া যাওয়া যাবে না, কারণ সেটা বেআইনি। এ সময় অনুনয়-বিনয় করে তরুণ বলেন, মিটার অন করেই যাও, তবে ভাড়া পরিশোধ করলেও যেহেতু আমি যাচ্ছি না, শুধু আমার নারী সঙ্গী যাচ্ছে, তাই তাঁকে ৭০ ডলার ফেরত দিতে হবে। এই বলে তরুণ তাঁর দিকে ১০০ ডলারের নোট বাড়িয়ে দেয়। ভালোবাসার রাতে সাহায্য করো।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ক্যাবচালক আরও বলেন, উন্নত পোশাক পরিহিত শ্বেতাঙ্গ যাত্রী দেখে তাঁর মনে বিশ্বাস জাগে। ৭০ ডলার ফেরত দিলে তরুণ ধন্যবাদ দিয়ে চলে যায়। তিন ব্লক যাওয়ার পর ওই তরুণী ক্যাব থামানোর ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, তাঁর ফোন কল এসেছে। হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বন্ধু চলে গেছে।
আহমেদ বলেন, ‘ওই তরুণী আমার কাছ থেকে ২০ ডলার ফেরত চাইলে আমি দিয়ে দিই। এরপর তিনি ‘ধন্যবাদ’ গাড়ি থেকে নেমে যান।’
আহমেদ আরও বলেন, শেষ রাতে বাড়ি ফেরার পথে গ্যাস স্টেশন গ্যাসের পাওনা দিতে যখন ১০০ ডলারের নোট দেন, তখন ধরা পড়ে সেই নোটটি জাল। ৯০ ডলার গচ্চা, মাথায় হাত। পুরো রাতের কামাই ১০০ ডলার। তার মধ্যে ৯০ ডলার প্রতারণার শিকার হয়ে নাই হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সব ক্যাবচালককে ১০০ কিংবা ৫০ ডলারের বিল সাবধানে নিতে হবে। এমনকি ২০ ডলারের জাল নোটের ছড়াছড়িও রয়েছে বলে অনেকের কাছ থেকে জানা গেছে।