ডেমোক্রেটিক পার্টির দশম বিতর্কে তোপের মুখে স্যান্ডার্স

বার্নি স্যান্ডার্স
বার্নি স্যান্ডার্স

বাছাই পর্বের প্রথম তিন নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে বার্নি স্যান্ডার্স এই মুহূর্তে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের শীর্ষে। ফলে অন্য প্রার্থীরা তাঁকে আক্রমণ করবে, তা মোটেই অপ্রত্যাশিত ছিল না। তবে মঙ্গলবার সাউথ ক্যারোলাইনার চার্লসটনে দলীয় প্রার্থীদের দশম বিতর্কে তিনি যেভাবে সাঁড়াশি আক্রমণের সম্মুখীন হন, সেটি সম্ভবত তিনি হিসেবে রাখেননি।

বিতর্কের শুরুতেই নিউইয়র্কের প্রাক্তন মেয়র ও বিশ্বের নবম শীর্ষ ধনী মাইক ব্লুমবার্গ অভিযোগ করেন, স্যান্ডার্সকে জেতাতে পেছনে কাজ করছে মস্কো। এক সপ্তাহ আগে মার্কিন গোয়েন্দা দপ্তর সেই রকমই একটি তথ্য দিয়েছে। স্যান্ডার্স একসময় ফিদেল কাস্ত্রোর পক্ষে সাফাই গেয়েছেন, সে কথা উল্লেখ করে ৩৮ বছর বয়স্ক পিট বুটিজেজ মন্তব্য করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প মজে আছেন পঞ্চাশ দশকের সামাজিক ব্যবস্থায়, আর বার্নি স্যান্ডার্স মজে আছেন ষাট দশকের বৈপ্লবিক রাজনীতিতে। বুটিজেজ এমন কথাও বলেন যে, স্যান্ডার্স দলের মনোনয়ন পেলে হোয়াইট হাউস তো যাবেই, কংগ্রেসের উভয় কক্ষই ডেমোক্র্যাটদের হাতছাড়া হবে।

স্যান্ডার্স জোর প্রতিবাদ করে বলেন, তিনি কখনোই মস্কো বা হাভানার কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার পক্ষে নন। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তিনি মোটেই রুশ প্রেসিডেন্টের অনুরাগী নন। তবে তিনি এ কথাও বলেন, কিউবার সমাজতন্ত্রী সরকার কর্তৃত্ববাদী হলেও সেখানে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। ইতিপূর্বে একই কথা বলে কিউবান উদ্বাস্তুদের ঘাঁটি ফ্লোরিডায় তিনি নিজ দলের নেতাদের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন।

স্যান্ডার্স ছাড়া আক্রমণের অপর লক্ষ্যবস্তু ছিলেন মাইক ব্লুমবার্গ। নবম বিতর্কে তাঁর বিরুদ্ধে নারী বিদ্বেষী অবস্থানের অভিযোগ তুলে জনপ্রিয় হয়েছিলেন সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন। মঙ্গলবারের বিতর্কেও তিনি ব্লুমবার্গকে নিজের ‘টার্গেট’ হিসেবে ব্যবহার করেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, ব্লুমবার্গ এক সময় রিপাবলিকান দলের সদস্য ছিলেন এবং কয়েক বছর আগেও তিনি লিন্ডসি গ্রাহামের মতো অতি রক্ষণশীল রিপাবলিকান সিনেটরের পক্ষে জোর নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন।

জো বাইডেন, যিনি নিজের হারানো শীর্ষ অবস্থান ফিরে পেতে শনিবার সাউথ ক্যারোলাইনার বাছাই পর্বের নির্বাচনের ওপর আশা করে আছেন, বারবার বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের সাফল্যের বিবরণ তুলে ধরেন। সব ক্ষেত্রেই অন্য সবার চেয়ে তাঁর সাফল্য অধিক, তাঁর এই দাবি কখনো বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়ায়। একপর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে নিজের সাফল্যের পাশাপাশি অস্ত্র নির্মাতাদের পক্ষে স্যান্ডার্সের সমর্থনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর (অর্থাৎ স্যান্ডার্সের) ভোটের ফলে ২০০৭ সালে থেকে এই পর্যন্ত আমেরিকার ১৫০ মিলিয়ন মানুষ বন্দুকের গুলিতে নিহত হয়েছে। সম্ভবত তিনি মুখ ফসকে এমন কথা বলেন। উল্লেখযোগ্য, আমেরিকার মোট জনসংখ্যা ৩৩০ মিলিয়ন, এ দেশে প্রতি বছর বন্দুকের গুলিতে নিহত মানুষের সংখ্যা গড়ে ৩৩,০০০।

দুই ঘণ্টার অধিক স্থায়ী এই বিতর্কে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থীই শনিবারের ভোটের আগে নিজের যোগ্যতা প্রমাণে যথাসাধ্য করেন। তা করতে গিয়ে অর্থপূর্ণ বক্তব্য রাখার বদলে একে অপরের বিরুদ্ধে, বিশেষত স্যান্ডার্সের বিরুদ্ধে, আক্রমণে সময় ব্যয় করেন। অনেকেই একে অপরের কথার মধ্যে কথা বলা অব্যাহত রাখেন, সঞ্চালকদের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে অহেতুক চিৎকার করতে থাকেন, একে অপরের দিকে আঙুল তুলে অভিযোগ উত্থাপন করেন। একপর্যায়ে পুরো বিতর্ক মঞ্চটি কার্যত একটি মাছের বাজারে পরিণত হয়।

বিতর্কে কে জিতেছে, সে ব্যাপারে অধিকাংশ ভাষ্যকারই জো বাইডেনের নাম উল্লেখ করেছেন। কোনো বড় রকমের ভুলচুক করেননি, সে জন্যই তিনি জয়ী হয়েছেন। অন্য আরেক বিজয়ী ছিলেন এলিজাবেথ ওয়ারেন। সমাজতন্ত্র ও কিউবা প্রশ্নে বিতর্কে জড়িয়ে ঝামেলায় পড়ায় অনেকে স্যান্ডার্সকে হারার তালিকায় ফেলেছেন। দুই বিলিয়নিয়ার প্রার্থী, মাইক ব্লুমবার্গ ও টম স্টায়ার উভয়েই এই হারার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।